কৃষকের আত্মহত্যা আর কৃষির উন্নয়ন

দেশ রূপান্তর রাজেকুজ্জামান রতন প্রকাশিত: ৩০ মার্চ ২০২২, ০৯:১৯

প্রতিদিনের অসংখ্য ঘটনার ভিড়ে চাপা পড়ে গেল একটি ঘটনা। আর চাপা পড়বেই বা না কেন? মানুষের জীবন তো এখন একটা সংখ্যা ছাড়া আর কিছু নয়। কর্তাব্যক্তিরা সমস্বরে যখন বলতে থাকেন তাদের কৃতিত্বে দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ, তখন যদি জিজ্ঞেস করা হয় কেন তাহলে খাদ্য আমদানি? উত্তর মেলে না তার। বরং পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ে দেওয়া হয়, না খেয়ে মরেছেন কি কেউ? যে কৃষক ফসল ফলিয়ে নিজে বাঁচেন আর বাঁচিয়ে রাখেন দেশের মানুষকে, সেই কৃষক যখন সেচের পানির অভাবে ফসল বাঁচাতে না পেরে আত্মহত্যার পথ বেছে নেন, তখন আর প্রশ্ন করা নয়, কাউকে দায়ী করা নয়, সামান্য বেদনায়ও কি আচ্ছন্ন হয় দায়িত্বশীলদের মন? পানির অপর নাম জীবন, সেই পানির জন্য আত্মহত্যা করে দুই আদিবাসী কৃষক কি কোনো বার্তা দিয়ে গেলেন? সবাই বলে মানুষের জীবন তার কাছে সবচেয়ে প্রিয়। কিন্তু সেই জীবনে কখন আর কীভাবে তিনি আত্মহনন করতে পারেন? চোখের সামনে সম্ভাবনার মৃত্যু ঘটতে দেখেও যখন প্রতিকারের কোনো উপায় দেখেন না, সমাধানহীন সংকট, চূড়ান্ত অপমান আর অপদস্থ হয়েও পান না কোনো সহযোগিতার আশ্বাস, তখন তিনি হারিয়ে ফেলেন জীবনের প্রতি আস্থা আর সমাজের প্রতি বিশ্বাস। নিজের হাতে জীবনের সমাপ্তি টেনে দিয়ে মুক্তি পেতে চান। একে কাপুরুষতা বলে সমাজ কি পাবে দায় থেকে মুক্তি?  


স্বাধীনতার মাস, মার্চ মাস। স্বাধীনতার একান্নতম বছরে ভাত খাওয়ার জন্য ধান চাষের জমিতে পানি দিতে না পেরে এই মার্চ মাসেই আত্মহত্যা করলেন দুই আদিবাসী ভাই। রাজশাহীর বাগমারায় রবি মারান্ডি ও অভিনাথ মারান্ডি আত্মহত্যা করেছেন। দুজনই কৃষক, আদিবাসী এবং সাঁওতাল জাতিগোষ্ঠীর।  এখন বোরো ধান পুষ্ট হওয়ার সময়। পানি না পেলে ধান চিটা হয়ে যাবে। তিন মাসের পরিশ্রম, টাকাপয়সা খরচ সব শেষ হয়ে যাবে পানি না দিতে পারলে। কিন্তু দিনের পর দিন এই দুই ভাই বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্র্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) কাছে গভীর নলকূপ থেকে জমিতে সেচের পানির জন্য ধরনা দিলেও পানি পাচ্ছিলেন না। তারা কর্র্তৃপক্ষকে বলেছিলেন, পানি না দিলে এমনিতেই তো না খেয়ে মরে যেতে হবে। তার চেয়ে তারা আত্মহত্যা করবেন। বহু বঞ্চনা আর প্রতারণার পরও আদিবাসীরা তাদের সম্ভ্রমবোধটুকু এখনো বাঁচিয়ে রেখেছেন। তারা যা বলেন তা করার চেষ্টা করেন। কিন্তু বিএমডিএর কর্তাব্যক্তিরা হয়তো ভাবতে পারেননি এ দুজন সত্যিই আত্মহত্যা করবেন। দুই ভাই একসঙ্গে গভীর নলকূপের সামনে কীটনাশক পান করেন ২৩ মার্চ সন্ধ্যায়। রাতেই অভিনাথের মৃত্যু হয়। আর রবি মারা যান রাজশাহী মেডিকেল হাসপাতালে ২৫ মার্চ রাতে। তারা দুজন সম্পর্কে চাচাতো ভাই। তাদের পরিবারের দাবি, ১০-১২ দিন অপেক্ষার পরও ধানের জমিতে পানি নিতে না পারার ক্ষোভ থেকে তারা আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন।


তবে অতীতের অনেক ঘটনার মতো এ ক্ষেত্রেও জমিতে পানি না পেয়ে তাদের বিষপানের ঘটনা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্র্তৃপক্ষ (বিএমডিএ) ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। বিএমডিএর অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আবদুর রশিদের ভাষ্য, তারা দুই কৃষকের বিষপানের কথা শুনেছেন। পানির অভাবে তাদের জমির ধান মারা যায়নি। সেই শোকে তারা বিষপান করেছেন এটা বিশ্বাসযোগ্য নয়। এখন পানি দেওয়ার ক্ষেত্রে অপারেটরের কোনো অনিয়ম থাকলে তার বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কি দায়িত্বহীন উদাসীনতা আর সেই পুরাতন কথা! কে নেবে ব্যবস্থা আর কে করবে কার বিচার? বাংলাদেশকে বাঁচিয়ে রেখেছে যে কৃষি তার উন্নতি নিয়ে সরকারের পদক্ষেপের বিবরণ প্রতিনিয়তই শুনছে দেশের মানুষ। কিন্তু অন্যান্য দেশের সঙ্গে তুলনামূলক বিচারে তা কতটুকু? নেদারল্যান্ডস কৃষি খাতে বছরে মাথাপিছু ৩১৪ ডলার, ভারত ৩৪ ডলার ও মিয়ানমার ২৬ ডলার বিনিয়োগ করে। সেখানে বাংলাদেশে মাত্র ১৬ ডলার বিনিয়োগ করা হয়। যে কারণে বাংলাদেশে হেক্টরপ্রতি ধানের উৎপাদন ৪ হাজার ৭৩৫ কেজি, আর চীনে তা ৭ হাজার কেজির বেশি। অন্যদিকে দেশে কৃষিজমি কমে যাওয়া এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ নানা সমস্যা বাড়ছে। তাই খাদ্যনিরাপত্তা টেকসই করতে হলে কৃষিতে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। একরপ্রতি ধানসহ অন্যান্য পুষ্টিকর খাবারের উৎপাদন বাড়াতে হবে। আর এটা তো আমরা জানি দেশে বহু ধরনের খাদ্য উৎপাদন বাড়লেও এখনো গরিব মানুষ মূলত ভাত থেকে তাদের পুষ্টিচাহিদার বড় অংশ মেটায়। তাই ভাত কম খান বললেই চলবে না, ভাতের উৎপাদনের পাশাপাশি পুষ্টিকর ও বহুমুখী খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে হবে। আর তা কেনার সক্ষমতা তৈরি করতে না পারলে উৎপাদন করেও যে অপুষ্টি দূর করা যায় না তা বাংলাদেশের কৃষকের চেয়ে আর বেশি কে বোঝে?  

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও