দুটি মৃত্যু: দেশের ক্ষতি, দশের ক্ষতি
আমাদের দেশে এমনিতেই নাগরিক সমাজের পরিসর অত্যন্ত ছোট। এর মধ্যে সৈয়দ আবুল মকসুদ ও খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ সাহেবদের মৃত্যু নাগরিক সমাজকে আরও সংকুচিত করল। এঁদের মতো ব্যক্তিত্বরা আগামী প্রজন্মের পথিকৃৎ হয়ে থাকবেন।
সৈয়দ আবুল মকসুদের সঙ্গে আমার নৈকট্য প্রায় দুই দশকের ওপর। তিনি নাগরিক সমাজের অত্যন্ত সম্মানিত সদস্য ছিলেন। প্রথম আলোতে তাঁর লেখা কলাম পড়ায় আমার আসক্তি হয়েছিল। তিনি বাংলাদেশের অতীত, চলমান-রাজনীতি, দেশের নির্বাচনব্যবস্থা এবং সমাজের অসামঞ্জস্য বিষয়গুলো চমৎকার ভাষায়, প্রাঞ্জল ভাষায় লিখতেন। মাঝেমধ্যে দেখা হলে জিজ্ঞাসা করতেন তাঁর লেখা পড়েছি কি না। প্রয়োজনেই তিনি ফোন করে নির্বাচন বিষয়ে খুঁটিনাটি জেনে নিতেন। সৈয়দ আবুল মকসুদ সাহেবের সঙ্গে ইলেকট্রনিক মিডিয়াতে বহুবার একসঙ্গে উপস্থিতও থেকেছি। তাঁর সঙ্গে প্রথম দিকে কিছুটা পরিচয় থাকলেও অন্তরঙ্গ হওয়ার সুযোগ হয় ২০০৮ সালে। ওই বছর আমি এবং নির্বাচন কমিশনার সহুল হোসাইন ২০০৮ নেপালের নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করতে গিয়েছিলাম। একই ফ্লাইটে তিনিও ছিলেন। ওই নির্বাচন নিয়ে আমরা অনেক আলোচনা করেছি। এরপর নির্বাচনী সংস্কার নিয়ে নির্বাচন কমিশনের আয়োজিত বৈঠকে নাগরিক সমাজের একজন হিসেবে একাধিকবার তিনি যোগ দিয়েছেন এবং সেখানে তিনি অতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
দ্বিতীয় অপূরণীয় ক্ষতিটি হলো সৈয়দ আবুল মকসুদ সাহেবের মৃত্যুর কয়েক ঘণ্টা ব্যবধানে চিকিৎসারত অবস্থায় বাংলাদেশের প্রথিতযশা অর্থনীতিবিদ খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদের মৃত্যুতে। তিনি প্রায় এক মাস যাবৎ করোনা-পরবর্তী সমস্যার জটিলতায় ভুগছিলেন। তিনিও বাংলাদেশের নাগরিক সমাজের একজন সুপরিচিত মুখ হয়ে ওঠেন। তিনি অত্যন্ত সহজ ও স্পষ্ট ভাষায় অর্থনীতির চিত্র নিয়ে গণমাধ্যমে পরামর্শমূলক বক্তব্য দিতেন। তাঁর আলোচনায় উপকৃত হতাম। পত্রপত্রিকায় তাঁর মন্তব্য এবং লেখায় সব সময়ই দিকনির্দেশনামূলক আলোচনা থাকত। তিনি ব্যাংকিং জগতে অত্যন্ত সুপরিচিত ও সমাদৃত ছিলেন। অবসরের পরও কর্মজীবন পালন করে গেছেন। বহু ব্যাংকের পর্ষদে তিনি কাজ করেছেন। শুধু ব্যাংকিং জগতেই নয়, সামাজিক জগতেও বেশ অবদান রেখেছেন।