
ছবি সংগৃহীত
My Free Life: ফ্রীলান্সার.কম এ বাংলাদেশীদের মধ্যে ৮ নম্বর অবস্থানে আসলাম যেভাবে !!
আপডেট: ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৩, ০৯:১৪
আমার ফ্রিল্যান্সিং জীবন শুরু যেভাবে আমার ফ্রিল্যান্সিং-এ আসার বাস্তব অভিজ্ঞতা দিয়ে Article টি শুরু করতে চাই। আমার ব্যাকগ্রাউন্ড আই.টি. থাকায় ফ্রিল্যান্সিং এ আসা কাকতালীয় নয়। প্রথমে এটি পেশা হিসেবে নিব ভাবি নাই। আমি স্বল্প বেতনে একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকুরী করি। একদিন হঠাৎ আমার জুনিয়র ক্লাসমেট "কিবরিয়া" আমাকে বলে যে , আমি ৮-ঘণ্টা অফিসে চাকুরী করার পর বাকী সময়টা কিভাবে ব্যয় করি এবং বলে যে, আমি ইচ্ছে করলে ফ্রিল্যান্সিং শুরু করতে পারি। আমি তখন জানতে চাই কিভাবে কাজ পাওয়া যায়। তখন সে আমাকে ডাটা এন্ট্রির ( ক্যাপচা-Captcha) কাজ করার অফার করে ১০০০ এন্ট্রি=২৮টাকা হিসেবে। সময়টা ২০০৭ সালের অক্টোবর মাস। আমি প্রথমে রাজি হইনি এই ভেবে যে , আমার ব্যাকগ্রাউন্ড আই.টি. , ডাটা এন্ট্রির কাজ কেন করবো ? পরে কোন কারণে রাজি হই এবং কাজ শুরু করি। কারণ, চাকুরী করে বাকী সময় প্রোগ্রামিং বা ওয়েব ডেভেলপমেন্ট করার জন্য পর্যাপ্ত সময় ছিল না। এক মাস পর কিবরিয়াকে আমি বলি যে , সে কোথা হতে কাজ পায়; তখন সে Freelancer.com ( পূর্ব নাম GetAfreelancer.com) এর নাম বলে। আমি তখন বলি সেখানে তো আমি এ্যাকাউন্ট করেছিলাম যখন The RS Software এ Web developer হিসেবে কর্মরত ছিলাম। তার কাছে জানার পর আমি GetAfreelancer.com এ বিট করা শুরু করি। আমার কাজের এরিয়া ছিল প্রথমে ডাটা এন্ট্রি, PSD to HTML Templeting , CSS , Web Development এই ক্যাটাগরিতে বিট করা শুরু করি। কিন্তু কোন কাজ পাচ্ছিলাম না। কাজ না পেলেও ততদিনে আমাকে Freelancing এর নেশা পেয়ে বসেছে। এরপর আমি ক্যাটাগরিগুলি নিয়ে বিশ্লেষণ ও স্টাডি করি এবং বিভিন্ন বায়ার ও প্রোভাইডার এর প্রোফাইল, বিট করার ধরন অবলোকন করি। এই সকল ক্যাটাগরির কমপ্লিট Proposal তৈরি করি এবং আবারও পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়ে নতুন উদ্যমে বিট করা শুরু করি। ততদিনে বছর পেরিয়ে গেছে। অর্থাৎ ২০০৮ সন শেষ। বিট শুরু করলাম এবং কিছুদিনের মধ্যেই সফলতার মুখ দেখতে পেলাম। ফ্রিল্যান্সিং এ প্রথম কাজ পাই ডাটা এন্ট্রি (ক্যাপচা-Captcha) । বায়ার ছিলেন বাংলাদেশী “শওকত” ভাই। ওনাকে আমি কখনই ভুলতে পারবো না। এরপরে PSD to HTML Templeting এ কাজ পেতে থাকি। দুটি প্রজেক্ট কমপ্লিট করার পর আমার এ্যাকাউন্ট এ ৬০ ডলার জমা হয়। তখন টাকা উত্তোলন করার পর্ব। আমি যেসব প্রাথমিক সমস্যার সম্মুখীন হলাম ২০০৯ সন, সে সময় এমন কেউ ছিল না যে আমাকে টাকা উত্তোলন করতে সহযোগিতা করবে। শুধু শওকত ভাইয়ের কাছে শুনেছিলাম যে , মাস্টার কার্ড দিয়ে টাকা উত্তোলন করা যায়। কিন্তু কিভাবে, তা আর বিস্তারিত জানতে পারলাম না। নিজে নিজে ফ্রিল্যান্সিং এর Withdrawal option চেক করলাম এবং মাস্টার কার্ডের অর্ডার দিলাম। কিন্তু মাস্টার কার্ড পৌঁছুতে সময় নিবে ১৫/২০ working day যা ৩০/৪০ দিনের সমমান। সেখানে আরও একটি Option দেখি মানি বুকার। ২০০৯ সালে মানি বুকারের এ্যাকাউন্ট খুলি। সেখানে আমার প্রথম withdraw ৪৯ ডলার request করি। কিন্তু সেখানেও আমাকে অনেক ঝামেলা পোহাতে হয়। যেমন প্রথম Address verification ( যা ছাড়া টাকা ব্যাংকে ট্রান্সফার করা যাবে না )। এরপর Address verification এর জন্য request করলাম। ৩য় working day এর মধ্যে চিঠি আসার কথা। কিন্তু আমি চিঠি পেলাম না। মানি বুকারে টিকেট Submit করলাম জানতে চেয়ে যে , আর অন্য কি উপায়ে Address verification করা সম্ভব। তারা যথারীতি উত্তর দিল যে , Utility bill বা telephone bill এর সাথে National ID দিয়ে verify করা যাবে। এত ঝামেলার মধ্যেও প্রশান্তির কথা যে , সেই সময় আমি সিটিসেল এর পোস্টপেইড ( ইন্টারনেট ) মডেম ব্যবহার করতাম যার বিল by post এবং E-mail এ প্রতি মাসে দেয়া হত এবং সেটিই আমি Account verification এর জন্য ব্যবহার করলাম। Verify করার পর পর ব্যাংক হিসেবে শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকে এ্যাকাউন্ট SWIFT CODE দিয়ে Add করলাম এবং আমার প্রথম উপার্জন ৪৯ ডলার থেকে ৪৫ ডলার withdraw দিলাম। মানি বুকার withdraw বাবদ ২.৩৩ ডলার কেটে নিলো। এবার অপেক্ষার প্রহর গুণতে লাগলাম আমার কাঙ্ক্ষিত ফ্রিল্যান্সিং এর টাকা কবে হাতে পাব। হঠাৎ ব্যাংক থেকে একদিন ফোন পেলাম। Foreign Exchange Branch এ যেতে হবে ডলার এসেছে বলে। কারণ আমার এ্যাকাউন্ট Foreign Exchange Branch এ ছিল বলে। শত আনন্দের মাঝেও গিয়ে কষ্ট পেলাম এই কারণে যে , কোন এক পক্ষ ২২ ডলার চার্জ কেটে নিয়েছে( মানি বুকার অথবা ব্যাংক )। ব্যাংক, টাকা আমার এ্যাকাউন্ট এ Diposit করতে রাজি হচ্ছিল না। আমি ব্যাংক কর্তৃপক্ষ কে বারবার বোঝাতে চাইলাম যে টাকা Freelancing এর , কিন্তু তারা কিছুতেই বুঝতে চাইল না। অবশেষে আমি মানি বুকারে টাকাটা ফেরৎ দেয়ার জন্য আবেদন করলাম। মানি বুকারে ২০.৬৭ ডলার ফেরৎ এলো। এদিকে আমার এক ব্যাংকার বন্ধুর নিকট জানতে পারলাম যে, এবি ব্যাংক ও ডাচ বাংলা ব্যাংক মানি বুকার payment support করে। তখন ডাচ বাংলা ব্যাংকে এ্যাকাউন্ট খুললাম। সেখানেও একই সমস্যার মুখোমুখি হই। যিনি Foreign Exchange ট্রানজেকশন এর দায়িত্বে ছিলেন তিনি অনেক ধরনের প্রশ্ন করলেন এবং এক পর্যায়ে আমার উত্তরে সন্তুষ্ট হয়ে ম্যানেজারের কাছে নিয়ে গেলেন। ম্যানেজার আমার নিকট হতে বিস্তারিত শোনার পর আমাকে বুঝলেন এবং উৎসাহিত করলেনও বটে। তিনি তার অধীনস্থ কর্মকর্তাকে এভাবে বোঝালেন যে , এখন আমি ৫০ ডলার নিয়ে আসছি , ভবিষ্যতে ৫,০০০ ডলারও নিয়ে আসতে পারি। তিনি অধীনস্থ কর্মকর্তাকে এও নির্দেশ দিলেন যাতে আমার ট্রানজেকশন ভালভাবে হ্যান্ডেলিং করা হয় যেন পরবর্তীতে আমাকে কোন সমস্যায় পড���তে না হয়। এর মধ্যে Payoneer কার্ড টিও আমার হাতে এসে পৌঁছায় এবং দুটি Payment Getway পেয়ে যাই। এরপর আমাকে আর তেমন কোন সমস্যায় পড়তে হয়নি। আমার সফলতার অধ্যায় পরবর্তীতে আমি Web Development , PSD TO HTML , Data Entry continue করতে থাকি। এরই মধ্যে আমাকে UK , USA , CANADA , AUSTRALIA প্রভৃতি দেশের ক্লায়েন্ট freelancer.com এর বাইরেও সরাসরি কাজ দিতে থাকে যার মূল্য আমাকে Western Union, Moneygram পরিশোধ করতো। Data Entry ( CAPCHA ) & Data Conversion Data Entry ( CAPCHA ) কে অনেকেই ছোট করে দেখত এবং আমাকে এও শুনতে হয়েছিল যে , আমি যেন সেন্ট (Cent) এর পেছনে ধাবিত না হয়ে ১০০-৫০০ ডলার এর প্রজেক্ট নিয়ে ভাবি। কিন্তু বিন্দু বিন্দু জল নিয়ে যে সিন্ধু নদের সৃষ্টি হয় আমি তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত । আমার অধীনে ১১টি ক্যাপচা সার্ভার আছে যার তিনটিতে আমি প্রধান ম্যানেজার এবং বাংলাদেশ , ভারত , ভিয়েতনাম , ফিলিপাইন এ আমার প্রায় ১২০০ জনেরও অধিক Worker কর্মরত আছে। আমার দৈনিক আউটপুট গড়ে ১100k to 200k = 1,00,000 to 2,00,000 যার মূল্যমান গড়ে ১৩০ ডলার থেকে ২৬০ ডলার,যেখানে আমার লভ্যাংশ থাকে ১৫% থেকে ২০% । অনেকে হয়ত এটিকে অবিশ্বাস্য গল্প মনে করবেন , কিন্তু ইহাই বাস্তব সত্য । Web Development or Templeting আসলে কমপ্লিট Web Development হাতে গোনা কয়েকটি মাত্র করেছি । কারণ, আমি এখনও একটি মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে সিনিয়র এক্সিকিউটিভ , আই.টি. হিসেবে কর্মরত আছি। ফলে Web Development এর ছোট ছোট editing বা ঋFixing Bug, PSD to HTML Templeting এর কাজই continue করছি। SEO , SMM & Web Promotion ২০১১ সালের দিকে আমি SEO , SMM & Web Promotion এর কাজ শুরু করি এবং এখন পর্যন্ত সফলতার সাথে কাজ করে আসছি। Web Promotion এ PrestaShop,Mengato site G Product add , pricing , Maintenance , SEO এবং SMM এর মাধ্যমে Promotion করে থাকি। মরিশাস ও দুবাই এ দুটি কোম্পানির সাথে আমার মাসিক কন্ট্রাক্ট রয়েছে। এছাড়াও SMM এ freelancer.com এ দৈনিক কাজ পাচ্ছি এবং সফলতার সাথে কাজ করে যাচ্ছি। আমার অর্জন আমার ২০০৭ সাল থেকে ২০১৩ এর ফ্রিল্যান্সিং ক্যারিয়ারে freelancer.com , Odex এবং Elance মিলে ৪১৭টিরও অধিক প্রজেক্ট সম্পন্ন করেছি। বর্তমানে Freelancer.com Rewards এ World wide Rank ৪১,৬১০ point নিয়ে আমার পজিশন ৯ এবং freelancer.com এ বাংলাদেশে ফ্রিল্যান্সারদের মধ্যে সব ক্যাটাগরিতে (All Category) আমার পজিশন ৮। ( Link :“http://www.freelancer.com/d/Bangladesh/all/”. Freelancer id: Richard6212). কিভাবে ফ্রিল্যান্সিং শুরু করবেন ? নিজের সম্পর্কে তো অনেক লিখলাম । এখন ফ্রিল্যান্সিং এ আগ্রহী সকলের উদ্দেশ্যে কিছু অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে চাই যার মাধ্যমে আপনারা ফ্রিল্যান্সিং শুরু করতে উপকৃত হবেন বলে আমার বিশ্বাস। প্রথমে নিজেকে নিয়ে ভাবুন যে , আপনি কোন কোন বিষয়ে পারদর্শী বা কোন কোন বিষয়ে আগ্রহী । আর যদি এ কোন বিষয়ে পুরোপুরি অনভিজ্ঞ হন তাহলে অনলাইন এ জনপ্রিয় মার্কেট প্লেস যেমন, freelancer.com, Odesk, Elance, 99design এ ভিজিট করতে পারেন, যেখানে হাজারও রকমের কাজের তালিকা দেয়া আছে। আপনাকে প্রথমে বেছে নিতে হবে একটি , দুটি বা তিনটি ক্যাটাগরি যে বিষয়গুলিতে কাজ করতে আপনার পূর্ণ আত্মবিশ্বাস আছে। মনে রাখবেন, ফ্রিল্যান্সিং এর জন্য অবশ্যই আপনার কম্পিউটার এবং অফিস এ্যাপ্লিকেশন , অনলাইন সার্ফিং এ পারদর্শী হতে হবে। এটিই হবে কাজ শুরু করার জন্য সর্বনিম্ন যোগ্যতা । আপনি যদি আই.টি. ব্যাকগ্রাউন্ড হয়ে থাকেন এবং কোন এক বা একাধিক বিষয়ে দক্ষ যেমন- Web Development, Graphics Design, SEO ইত্যাদি তাহলে শুরুটা আপনার জন্য সহজ হবে। আপনি যে বিষয়ে আগ্রহী , সে বিষয়ে আপনাকে অবশ্যই বেশী বেশী স্টাডি করতে হবে এবং Market Place গুলো থেকে আপনি সাহায্য নিতে পারেন। যেমন- Related Topics এর Project গুলো দেখা, Project Description সম্পর্কে বোঝার চেষ্টা করা , বায়ার তার বর্ণনায় আসলে কি চাচ্ছে এবং যারা Provider বিট করছে এবং কিভাবে proposal গুলোকে দিচ্ছে সেগুলো বিশ্লেষণ করতে হবে এবং নিজেকে শতভাগ কাজের জন্য প্রস্তুত করতে হবে। আপনি ইচ্ছে করলে আপনার পছন্দ অনুযায়ী বাংলাদেশে বেশ কিছু স্বনামধন্য প্রশিক্ষণ কেন্দ্র হতে প্রশিক্ষণ নিতে পারেন। নিজেকে প্রস্তুত করার পর আপনি Market Place গুলোতে বিট শুরু করতে পারেন। আমি আশা এবং পূর্ণ বিশ্বাস করি যে , আমার বাস্তব অভিজ্ঞতা এবং আপনাদেরকে দেয়া নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করলে দৈনন্দিন চাহিদা মেটাতে অতিরিক্ত অর্থ উপার্জন করে নিজেকে সমাজে সুপ্রতিষ্ঠিতও দেশে-বিদেশে অনেক সুনাম অর্জন করতে পারবেন ইনশাল্লাহ । প্রিয় টেক এ তার প্রোফাইল: http://tech.priyo.com/users/gholam6212
- ট্যাগ:
- ফ্রিল্যান্সিং
- লাইফ
- স্থানীয়
- প্রযুক্তি
- myFreeLife