ছবি সংগৃহীত

কান্না দুর্বলতার লক্ষণ? কখনোই না!

সাদিয়া ইসলাম
লেখক
প্রকাশিত: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০১৫, ০৩:৪৩
আপডেট: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০১৫, ০৩:৪৩

(প্রিয়.কম) মানুষ বলে থাকেন কান্না নাকি দূর্বলতার লক্ষণ। অতিরিক্ত কান্না করলে যে কোন মানুষের কপালে ছিঁচকাদুনে তকমাটা লেগে যাওয়া খুব একটা অস্বাভাবিক নয়। আসলেও কান্না তো তারই করবার কথা যে অসহায়। যার করার আর কিছু নেই। মানসিকভাবে পিঠ ঠেকে গিয়েছে দেয়ালে। কিন্তু বাস্তবে কি একেবারে নিরুপায় হলেই কান্না করি আমরা? অতিরিক্ত কান্না সত্যিই কি দূর্বলতার লক্ষণ? না! আসুন জেনে নিই এমন ৬টি ব্যাপার যে কারণে অতিরিক্ত কান্না করা মানুষেরা অন্যদের চাইতে মানসিকভাবে দূর্বল নয়, অতিরিক্ত শক্তিশালী হয়ে থাকে।

১. আবেগ প্রকাশ

আনন্দ পেলে কি আপনি হাসেন না? ক্লান্ত হলে কি উফ্‌ করে একটা শ্বাস ছাড়েন না আপনি? কিংবা রাগ! করলে কি সেটাকে বাইরে প্রকাশ করেননা? তাহলে কষ্টের অনুভূতি একলা কেন পড়ে থাকবেন এককোণে? সেটার বেলায় কেন প্রকাশ করতে ভয় পাবেন আপনি? যারা নিজেদের কষ্ট পাওয়ার অনুভূতিকে চেপে রাখে তারা নিজেদের একটা আবেগকে আটকে রাখে। ভয় পায়। অথচ অন্য আরো দশটা ব্যাপারের মতন কান্নাও মানুষের আবেগের খুব স্বাভাবিক একটা বহিঃপ্রকাশ। যারা কান্না করে তাদের দিকে তাকিয়ে হাসার আগে ভেবে দেখুন, এই মানুষগুলো কিন্তু নিজেদের আবেগ প্রকাশ করতে ভয় পায়না। মানুষ হিসেবে নিজের বাকীসব মানবিক অনুভূতির পাশাপাশি প্রকাশ করে কষ্টকেও, কান্নার মাধ্যমে!

২. খুশি থাকা

কষ্ট পেলে অনেকগুলো ব্যাপার একসাথে কাজ করে আমাদের মনে। রাগ, অস্বস্তি, ক্ষোভ, উদ্বিগ্নতা, খারাপ লাগা, অভিমান। আর এই সব অনুভূতি আপনি যখন চেপে রাখেন, বাইরে আসতে দবেন না, সেটার ফলাফল পড়ে আপনারই মানসিক আর শারিরীক স্বাস্থ্যের ওপর। কান্না হতে পারে আনন্দেরও। আর তাই আনন্দ কিংবা কষ্ট- সবটাকে মাথা থেকে তাড়িয়ে দেওয়ার জন্যে একটা জিনিসই কাজে আসতে পারে আপনার। আর সেটা হচ্ছে কান্না। একটুখানি কান্নাই আমাদের মনের অনেক বোঝাকে নিমেষে হালকা করে দিতে পারে। মন ভালো করে দিতে পারে। তাহলে ভেবে দেখুন এই মানুষগুলো সম্পর্কে, যারা কান্না করেন। খুব কম সময়েই কষ্টের বোঝা নিজেদের ভেতর বয়ে বেড়ান তারা। মনকে রাখেন সবসময় হাসিখুশি!

৩. হরমোন নিঃসরণ

কান্না একজন মানুষের শরীরে এন্ড্রোফিন নামক হরমোন নিঃসরণ বাড়িয়ে দেয়। যেটা কিনা মন ভালো রাখতে সাহায্য করে। এছাড়াও গবেষণায় পাওয়া যায় যে, ৫ থেকে ১০ মিনিটের কান্না চোখের ব্যাকটেরিয়াকে ৯০ থেকে ৯৫ শতাংশ কমে যেতে সাহায্য করে। আর তাই কান্না আমাদের মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্য উভয়কেই ভালো রাখতে সাহায্য করে। আর কে না জানে যে, শরীর আর মন ভালো থাকলে যেকোনো মানুষই আরো বেশি শক্তিশালী হতে পারে মানসিকভাবে!

৪. লিঙ্গবৈষম্য না করা

ছোটবেলা থেকেই আমাদেরকে শেখানো হয় যে ছেলেদের কাঁদতে নেই মেয়েরা দূর্বল, তারা কাঁদতেই পারে! কোনো ছেলে কাঁদলেই তাকে মেয়েদের মতন কিংবা দূর্বল বলে ভাবা হয়। আর কোন মেয়ে কাঁদলে তাকে ভাবা হয় অবলা, অসহায় আর স্বাভাবিক কিছু! এটা যেন ধরেই নেওয়া হয় যে মেয়েরা আবেগ প্রকাশেও মানসিকভাবে ছেলেদের চাইতে অতিরিক্ত অসহায়। তারা দূর্বল! আর তাই কেউ যদি কষ্ট পেলে সমাজের এই বাঁধা ধরা উচিত কিংবা উচিত নয় ব্যাপারগুলো মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে কান্না করে তাহলে বুঝতে হবে সে এসব ব্যাপার নিয়ে মাথা ঘামায় না। ছেলে-মেয়ের ভেতরে অযথা লিঙ্গবৈষম্য করে না।

৫. অন্যকে উত্সাহ দেওয়া

অন্যের হাসি দেখলে যেমন আমরা হাসি, অন্যের কান্নাও আমাদেরকে প্রভাবিত করে। আর একজন কান্নারত ব্যাক্তি অন্য আরেকজনকেও প্রভাবিত করে তার নিজের কষ্টকে ঝেড়ে ফেলার জন্যে। কান্না করার সময় মানুষ নিজের প্রতি সৎ থাকে। নিজের শরীর আর আবেগের প্রতি সৎ থাকে। আর যে ব্যাক্তি নিচের কাছে সৎ থাকে সে অন্যদের কাছেও সৎ থাকবে এমনটাই স্বাভাবিক। এছাড়াও কান্না একটু আগে দোটানায় ভুগতে থাকা বিষয়টি নিয়েও সিদ্ধান্ত নেবার মতন আত্মবিশ্বাস তৈরি করে মানুষের ভেতরে। আর আত্মবিশ্বাসী, সৎ আর নেতুত্বের গুণসম্পন্ন মানুষ মানসিকভাবে শক্তিশালী তো হবেই!

৬. অন্যকে বুঝতে পারা

যিনি নিজে কান্না করেন তিনি অপরের কান্না করার কারণ, তার আবেগ, পরিস্থিতি, মনের অবস্থা কিংবা কষ্টটাকেও বুঝতে পারেন। আর তাই অন্যের খারাপ লাগাকে আরো ভালো করে বুঝে উঠে তাকে সাহায্য করতে পারেন এই মানুষেরা। সঠিক পরামর্শ দিতে পারেন। আর অন্যকে বোঝার মতন, তাকে সাহায্য করার মতন মানুষকে তো শক্তিশালী বলাই যায়! তথ্যসূত্র-5 Reasons Why People Who Cry A Lot Are Mentally Strong