বাংলাদেশের গণমাধ্যমে প্রিমিয়াম কনটেন্ট কি চলবে?
বাংলাদেশের মিডিয়া মার্কেটে অনলাইন গণমাধ্যমের সংখ্যা হু হু করে বাড়ছে, সাথে বাড়ছে পত্রিকা, টেলিভিশনও। মাঝে রেডিও বাড়লেও তা এখন কমতে কমতে শূন্যের পর্যায়ে চলে এসেছে। মোটাদাগে বলা যায়, গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বাড়লেও প্রায় বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান আসলে ভর্তুকি দিয়ে চলে।
সাংবাদিক কমিউনিটির বাইরের মানুষের কাছে এই তথ্য অবিশ্বাস্য মনে হলেও এটাই সত্য যে, পিওর অনলাইন অর্থাৎ যাদের টেলিভিশন চ্যানেল কিংবা প্রিন্ট পত্রিকা নেই, সেসব প্রতিষ্ঠানের অধিকাংশ ভর্তুকিতে চলে। সেই জায়গায় প্রিমিয়াম কনটেন্ট (অর্থের বিনিময়ে কনটেন্ট) আকাশকুসুম কল্পনাও বটে। দেশের মিডিয়া মার্কেটের কেন এই অবস্থা, কীভাবে প্রতিষ্ঠানগুলো লাভবান হবে, সেই উত্তর খুঁজব এই লেখায়।
বিশ্বজুড়ে অনলাইন সাংবাদিকতার অর্থনৈতিক সংকটকে ‘নিউজ ডেজার্ট’ হিসেবে ব্যাখ্যা করছে আন্তর্জাতিক গবেষণামূলক প্রতিষ্ঠানগুলো। অর্থাৎ, বিজ্ঞাপন ও পাঠক উভয়ের নির্ভরতা এখন মূলত বড় টেক প্ল্যাটফর্মগুলোর (Meta, Google, YouTube) ওপর। বাংলাদেশের পরিস্থিতি আরও বেশি খারাপ।
জার্মান-ভিত্তিক আন্তর্জাতিক ডেটা ও পরিসংখ্যান বিষয়ক গবেষণা প্ল্যাটফর্ম স্ট্যাটিসটিয়া (Statista)-এর পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০২৫ থেকে ২০৩০ সালের মধ্যে এ খাতে বার্ষিক প্রবৃদ্ধির হার হবে ‘ঋণাত্মক ০.১৭ শতাংশ’, অর্থাৎ বাজার আরও সংকুচিত হবে।
উন্নত দেশগুলোর গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্ষেত্রেও প্রায়ই আর্থিক সংকটের কথা শোনা যায়। তবে নিউইয়র্ক টাইমসের মতো কিছু প্রতিষ্ঠান আছে, যারা প্রিমিয়াম কনটেন্টের শক্তিতে লাভবান হচ্ছে। তাদের পাশাপাশি ফিন্যান্সিয়াল টাইমস, দ্য ইকনমিস্ট, দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল, দ্য গার্ডিয়ান, দ্য অ্যাথলেটিক, সাবস্ট্যাক নেটিভ আউটলেটস, স্কাই নিউজ (ইউকে), এএফপি এবং রয়টার্সের মতো গণমাধ্যমও প্রিমিয়াম কনটেন্টের শক্তিতে ভালোভাবেই টিকে আছে।
বাংলাদেশের ক্ষেত্রে হাতেগোনা কয়েকটি গণমাধ্যম তাদের ই-পেপার পেইড করলেও প্রিমিয়াম কনটেন্ট মডেল কোনো গণমাধ্যম চালু করতে পারেনি।
নিউইয়র্ক টাইমস যেভাবে লাভে
যুক্তরাষ্ট্রের জনপ্রিয় দৈনিক নিউইয়র্ক টাইমসকে পৃথিবীর অন্যতম প্রভাবশালী গণমাধ্যম বিবেচনা করা হয়। ২০২৫ সালের ৫ আগস্ট তারা ‘ত্রৈমাসিক সাবস্ক্রিপশন’ সংক্রান্ত প্রতিবেদনে জানায়, কোয়ার্টার ২ তে তাদের ডিজিটাল অনলি (শুধুমাত্র ডিজিটাল সাবস্ক্রাইবার) যুক্ত হয়েছে ২ লাখ ৩০ হাজার। গণমাধ্যমটি তাদের প্রতিবেদনে লিখেছে, এই সংখ্যা তাদের প্রত্যাশার চেয়ে বেশি।
বর্তমানে নিউইয়র্ক টাইমসের মোট ‘ডিজিটাল-অনলি’ সাবস্ক্রাইবার ১ কোটি ১৩ লাখ (১১.৩০ মিলিয়ন)। এর মধ্যে প্রায় ৬.০২ মিলিয়ন ব্যবহারকারী একাধিক প্রোডাক্ট বা বান্ডল সাবস্ক্রিপশন ব্যবহার করেন। প্রিন্ট সংস্করণসহ মোট সাবস্ক্রাইবার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ কোটি ১৮ লাখ ৮০ হাজার (১১.৮৮ মিলিয়ন)। এটি ২০২৫ সালের আগস্ট মাসের তথ্য। কোম্পানির লক্ষ্য ২০২৭ সালের মধ্যে ১ কোটি ৫০ লাখ সাবস্ক্রাইবারে পৌঁছানো।
মুনাফা: এই ত্রৈমাসিকে নিউইয়র্ক টাইমসের মোট রাজস্ব বেড়েছে ৯.৭ শতাংশ, যা দাঁড়িয়েছে ৬৮৫.৯ মিলিয়ন ডলারে। প্রতি শেয়ারে সমন্বিত মুনাফা ৫৮ সেন্ট, যা অনুমিত ৫০ সেন্টের চেয়ে বেশি।
ডিজিটাল বিজ্ঞাপন আয় বেড়েছে ১৮.৭ শতাংশ, মোট ৯৪.৪ মিলিয়ন ডলার। ডিজিটাল-অনলি গ্রাহক প্রতি গড় আয় বেড়ে হয়েছে ৯.৬৪ ডলার, যা ৩.২ শতাংশ বৃদ্ধি নির্দেশ করে।
কীভাবে এই সাফল্য: সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার মাধ্যমে নিউইয়র্ক টাইমস এই সাফল্য পাচ্ছে। এমনিতে তাদের সংবাদ, অনুসন্ধান, বিশ্লেষণ অপ্রতিদ্বন্দ্বী। কিন্তু আয় বাড়াতে কনটেন্ট স্ট্র্যাটেজি অন্যদের চেয়ে কিছুটা আলাদা। মূল নিউজ কনটেন্টের পাশাপাশি তারা স্পোর্টস প্ল্যাটফর্ম The Athletic, গেম Wordle এবং প্রোডাক্ট রিভিউ সাইট Wirecutter-এর মাধ্যমে নতুন পাঠক টানছে। প্রিমিয়াম খাত থেকে আয় বাড়াতে মূলত তারা লাইফস্টাইল কনটেন্টে বেশি জোর দিয়েছে। তাদের লক্ষ্য হলো এমন ব্যবহারকারীদের আকৃষ্ট করা, যারা শুধুমাত্র খবর নয়, লাইফস্টাইলকেন্দ্রিক কনটেন্টেও আগ্রহী।
- ট্যাগ:
- মতামত
- অনলাইন গণমাধ্যম