ভূমিকম্পের সময় নিরাপদে থাকার উপায় জানতে হবে

যুগান্তর প্রফেসর সৈয়দ হুমায়ুন আখতার প্রকাশিত: ২২ নভেম্বর ২০২৫, ১২:৫৭

গতকাল সকাল ১০টা ৩৮ মিনিটে ঢাকায় যে ভূকম্পন হলো, কারও মতে এটা রিখটার স্কেলে ৫ দশমিক ৭, আবার কারও মতে ৬ মাত্রার ভূমিকম্প। ভূমিকম্প দুটি প্লেটের সংযোগস্থলে সংঘটিত হয়েছে। উৎপত্তিস্থল ঢাকা থেকে ৩০ কিলোমিটার উত্তর-পূর্ব কোণে, নরসিংদীতে। স্থানটা হচ্ছে ইন্ডিয়া ও বার্মা প্লেটের সংযোগস্থল। এবং এই সংযোগস্থলটা সুনামগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ হাওর হয়ে দক্ষিণে মেঘনা নদী দিয়ে দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরে চলে গেছে। এর পূর্ব পাশটা হচ্ছে বার্মা প্লেট, পশ্চিম পাশটা ইন্ডিয়া প্লেট। এরকম একটা সংযোগস্থলে ভূ-পৃষ্ঠ থেকে ১০ কিলোমিটার গভীরতায় গতকালের ভূমিকম্পটা হলো। এই ভূমিকম্পের ফলে ভূ-পৃষ্ঠের উপরে যে ঝাঁকুনি হয়েছে, এর যে তীব্রতা, এটা স্মরণকালের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ ছিল। একজন সিনিয়র সিটিজেন হিসাবে আমার জীবদ্দশায় এত তীব্র কাঁপুনি আমি দেখিনি। এমনকি আমাকে একজন জানিয়েছে যে, সে বিল্ডিংয়ের উপরে ছিল, সে দেখেছে, দূরের একটা হাইরাইজ বিল্ডিং গাছ যেরকম বাতাসে দোলে, সেরকম দুলছে। এ থেকেই বোঝা যায় ভূমিকম্পের তীব্রতা কতটা ভয়াবহ ছিল।


আমরা অনেক আগে থেকেই বলে আসছি, এই যে সাবডাকশন জোন, যেটা সিলেট থেকে চট্টগ্রাম যে পাহাড়ি অঞ্চল, এর নিচে ইন্ডিয়ান প্লেটটা তলিয়ে যাচ্ছে এবং এ দুটি প্লেটের সংযোগস্থলে যে পরিমাণ শক্তি জমা হয়ে আছে, সেটার পরিমাণ হচ্ছে ৮.২ থেকে ৯ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্প সংঘটিত হওয়ার মতো শক্তি। আজ প্রায় হাজার বছর পর সেখানে এই প্লেটের যে দুটি লক ছিল, সেটা আনলক্ড হলো আর কী। এখন সামনে আরও বড় ভয়াবহ ভূমিকম্প হওয়ার আশঙ্কা প্রবল।


যেটা বারবার আমি বলে আসছি, ঢাকা শহর যেভাবে অপরিকল্পিত ও অনিয়ন্ত্রিতভাবে গড়ে উঠেছে, এটা তো রাতারাতি পরিবর্তন করা যাবে না। বলতে গেলে, এটা আগামী ৫০-১০০ বছরেও পরিবর্তন করা যাবে না। তার মানে হচ্ছে, আমাদের এ অবস্থার মধ্যেই বসবাস করতে হবে। সেক্ষেত্রে নিরাপদে বসবাস করতে গেলে আমাদের অবশ্যই ভূমিকম্প সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করতে হবে। ভূমিকম্পের সময় আমাদের কী করণীয়, অর্থাৎ ভূমিকম্প যখন হবে, তখন দুই-এক কদমের মধ্যে কীভাবে নিজেদের জীবনকে আমরা নিরাপদে রাখতে পারি, সেই কলাকৌশল শেখানো এবং নিয়মিত মহড়া করা-সেই বিষয়গুলোয় সরকার কখনোই গুরুত্ব দিচ্ছে না। সরকার গুরুত্ব দিচ্ছে ভূমিকম্প পরবর্তী, অর্থাৎ যখন সব ধ্বংস হয়ে যাবে, তখন উদ্ধার কাজের ওপর। এটা কোটি কোটি টাকার বাজেটের ব্যাপার। আর কোটি কোটি টাকা মানেই হচ্ছে দুর্নীতি। এর ১ শতাংশও যদি আমরা জনগণকে সচেতন করার জন্য, নিরাপদে থাকার জন্য কোনো উপায় বের করার কাজে ব্যবহার করি, যেমন স্মার্টফোনের মাধ্যমে যদি আমরা ন্যাচারাল হ্যাজার্ড গেম তৈরি করি-যেমন ভূমিকম্পের আগেই আমাদের প্রতিটি ঘরে ব্যক্তি পর্যায়ে, পারিবারিক পর্যায়ে কী প্রস্তুতি থাকা দরকার, কার কী করণীয়, কার কী দায়িত্ব এবং ভূমিকম্পের সময় দুই-এক কদমের মধ্যে হুড়োহুড়ি না করে নিরাপদে রক্ষা পাওয়ার জন্য কাজ করি, তাহলে অনেক জীবন রক্ষা পাবে।


ভূমিকম্পের মতো কোনো দুর্যোগ অথবা কোনো দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে দেখা যায়, সবাই হুড়োহুড়ি করে পালানোর চেষ্টা করে। অথচ হুড়োহুড়ি করেই বরং অতীতে অনেকের প্রাণ গেছে। তাই হুড়োহুড়ি না করে নিরাপদ জায়গায় দুই-এক কদমের মধ্যে কীভাবে আশ্রয় নেওয়া যাবে, কোন কোন বিল্ডিংয়ে কোন কোন জায়গাটা নিরাপদ-এটা ওই ন্যাচারাল হ্যাজার্ড গেমের মাধ্যমে মানুষ শিখতে পারে। যখন এর মাধ্যমে তার অনুশীলন হবে, এক ধরনের মহড়া হবে, অর্থাৎ তার যে প্র্যাকটিস হবে, এর ফলে ভূমিকম্পের সময় সে ট্রমাটাইজ্ড না হয়ে, হিতাহিত জ্ঞান না হারিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারবে। কিন্তু সে কাজটা সরকার করছে না।


সরকারের যেটা করা উচিত, তা হলো আগাম প্রস্তুতি। যেমন, ভূমিকম্পের মহড়ার কোনো বিকল্প নেই। একটা স্বল্পমেয়াদি, আরেকটা দীর্ঘমেয়াদি। স্বল্পমেয়াদি পরিকল্পনার মধ্যে থাকবে নিয়মিত ভূমিকম্পের মহড়া এবং স্মার্টফোনে উন্মুক্ত প্রতিযোগিতার মাধ্যমে ন্যাচারাল হ্যাজার্ড গেম তৈরি করা। এ ব্যবস্থাটা যদি আমরা স্মার্টফোনে দিয়ে দিই, তাহলে আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা সবাই এই গেমের মাধ্যমে শিখতে পারবে কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগে কীভাবে নিজের জানমাল রক্ষা করতে হয়, ক্ষয়ক্ষতি কীভাবে কমিয়ে আনতে হয়। এবং সরকারের পক্ষ থেকেও ওয়ার্ডভিত্তিক মহড়ার ব্যবস্থা করতে হবে। সে মহড়ার মাধ্যমেও অনুশীলন হবে। এসব উদ্যোগের ফলে জনগণের মধ্যে মনোবল বৃদ্ধি পাবে। স্বল্পমেয়াদে এটাই একমাত্র উপায়।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও