সীতাকুণ্ডের ‘সুন্দরবন’ রক্ষায় সরকারকে এখনই উদ্যোগ নিতে হবে

ডেইলি স্টার সীতাকুণ্ড সম্পাদকীয় প্রকাশিত: ২২ নভেম্বর ২০২৫, ১৬:৫১

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলায় আরও একটি প্যারাবন (ম্যানগ্রোভ) উজাড় করেছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। আইন ও পরিবেশ রক্ষার গুরুত্বকে উপেক্ষা করে বনের হাজার হাজার গাছ কেটে এখন সেখানে বিনোদন পার্ক নির্মাণ করা হচ্ছে।


সীতাকুণ্ডের উত্তর সালিমপুর মৌজার প্রায় ১৯৪ একর জমি ১৯৮৬ সালের ৯ জানুয়ারি বন আইনের ৪ ধারার অনুযায়ী আনুষ্ঠানিকভাবে বনভূমি হিসেবে গেজেটভুক্ত হয়। পরবর্তীতে ১৯৯০-৯১ অর্থবছরে উপকূলীয় বন বিভাগ সেখানে প্যারাবন বন তৈরির জন্য চারা রোপণ করে।


প্রসঙ্গত, এক সময় বিশ্বখ্যাত সুন্দরবন কক্সবাজার পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল।


আইনি সুরক্ষা থাকা সত্ত্বেও জেলা প্রশাসন দাবি করেছে, সরকারি খতিয়ানে জমিটি তাদের নামে রেকর্ড হওয়ায় সেখানে পার্ক নির্মাণে কোনো বাধা নেই। বন বিভাগ ও জেলা প্রশাসনের মধ্যে এখন জমির অধিকার পাওয়া নিয়ে চলছে দ্বন্দ্ব।


বন আইন, ১৯২৭ এর ৫ ধারায় স্পষ্টভাবেই বলা আছে, বন আইনের ৪ ধারার আওতায় ঘোষিত ও গেজেটভুক্ত বনভূমি অন্য কোনো কাজে ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।


২০১৩ সালের ৬ অক্টোবর সুপ্রিম কোর্ট একটি রায়ে বলেছিলেন, এ ধরনের বনভূমি অবশ্যই সংরক্ষিত থাকতে হবে। বন বিভাগের তীব্র আপত্তি সত্ত্বেও জেলা প্রশাসন ক্রমাগত সেখানে পার্ক নির্মাণকাজ চালিয়ে যায়।


ডিসি পার্ক নির্মাণের জন্য এই উপকূলীয় বনভূমির অন্তত ৫ হাজার গাছ কেটেছে জেলা প্রশাসন। স্থাপনার পাশাপাশি নির্মাণ করা হয়েছে রেস্টুরেন্ট, বসার জায়গা, হাঁটার পথ। ২০১৮ থেকে ২০২৫ সালের স্যাটেলাইট চিত্রও এই বনভূমি ধ্বংসের চিত্র দেখা যায়।


আমরা আগেও এ ধরনের প্রাতিষ্ঠানিক ক্ষমতার অপব্যবহার বহুবার দেখেছি। যেমন, এর আগে বন বিভাগের তীব্র আপত্তি উপেক্ষা করে সড়ক ও জনপথ বিভাগ একটি সড়ক প্রশস্ত করতে সংরক্ষিত বনের ভেতর ১৭৪ একর জমি চেয়েছিল। বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড আরেকটি সংরক্ষিত বনের ভেতর দিয়ে বিদ্যুৎ লাইন স্থাপনের চেষ্টা করে।


সীতাকুণ্ডের বন ধ্বংসের ঘটনাটিও একই ধারাবাহিকতার অংশ। এখানে দেখা গেছে পরিবেশগত ও আইনি উদ্বেগ মেটানোর আগেই অন্য একটি সরকারি সংস্থা নিজেদের সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিয়েছে।


প্রশ্ন হলো, রাষ্ট্রীয় সংস্থাগুলো কেন বনভূমিকে খালি জমি হিসেবেই দেখে? কেন দেশের জলবায়ু সুরক্ষার জন্য আইনি সুরক্ষিত পরিবেশব্যবস্থা হিসেবে দেখছে না? সীতাকুণ্ড ও মীরসরাইয়ের ম্যানগ্রোভ বন যে ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষতি কমায় এবং জলোচ্ছ্বাস ও ক্ষয়রোধে সহায়তা করে, তা অতীতে বহুবার প্রমাণিত হয়েছে।


এই বনগুলো আমাদের উপকূলের প্রথম সারির রক্ষাকবচ, যা জীববৈচিত্র্য টিকিয়ে রাখার পাশাপাশি মানুষের জীবনও সুরক্ষিত করছে। উপকূলীয় এই ম্যানগ্রোভ বন নিধন মানে সেই রক্ষাকবচকে ধ্বংস করা। এর ফলে উপকূলীয় জনবসতি ঘূর্ণিঝড়, প্লাবন ও স্থায়ী পরিবেশগত ক্ষতির মুখে পড়বে।


এখন যদি জমিটির নিয়ন্ত্রণ পুনরায় বন বিভাগের হাতে ফিরিয়ে দেওয়া হয়, তাহলে সেটিকে আবারও উপকূলীয় সবুজ বেষ্টনীতে রূপান্তর করা সম্ভব। যা প্রাকৃতিক সুরক্ষার পাশাপাশি বন্যপ্রাণী জল ব্যবস্থা ও বায়ু মানের ভালো রাখতে দীর্ঘমেয়াদি সুফল বয়ে আনবে।


অতএব, সরকারকে অবশ্যই অতি দ্রুত বন বিভাগ ও চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের মধ্যে চলমান বিরোধ নিষ্পত্তি করতে হবে এবং সীতাকুণ্ডের ম্যানগ্রোভ বন রক্ষায় দৃঢ় পদক্ষেপ নিতে হবে।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও