গণমাধ্যম ও সাংবাদিকদের প্রতি ট্রাম্পের আচরণ

যুগান্তর আনোয়ার হোসেইন মঞ্জু প্রকাশিত: ২২ নভেম্বর ২০২৫, ১০:১২

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রায়ই আমেরিকান গণমাধ্যম এবং গণমাধ্যম কর্মীদের ‘বামঘেঁষা’ এবং ‘দুর্নীতিগ্রস্ত’ বলে আক্রমণ করেন। তার ও তার প্রশাসনের প্রতি গণমাধ্যমের প্রতিকূল আচরণের অভিযোগ তুলে বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সাংবাদিকদের প্রতি অপমানসূচক কথা বলেন। ট্রাম্প বিভিন্ন গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে মামলাও করেছেন অসত্য তথ্য পরিবেশন অথবা পক্ষপাতের অভিযোগ এনে। প্রেসিডেন্ট হিসাবে তার অবস্থানকে ব্যবহার করে তার অপছন্দনীয় গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানের ব্যবসা পরিচালনায় হস্তক্ষেপ করেছেন, সেগুলোর বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছেন, এমনকি কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানের প্রচারণার লাইসেন্স বাতিল করার হুমকিও দিয়েছেন। তিনি সাংবাদিকদের এমন কথা বলতেও দ্বিধা করেন না যে, ‘আপনারা কি জানেন, আমি কেন এটা করি? আমি কাজটি করি আপনাদের সবাইকে লজ্জিত করতে। কারণ আপনারা যখন আমার ব্যাপারে কোনো নেতিবাচক কাহিনি লিখেন, তখন কেউ যাতে আপনাদের বিশ্বাস না করে।’


গণমাধ্যমের সুনাম ক্ষুণ্ন করা সম্পর্কে ডোনাল্ড ট্রাম্পের এ ব্যাখ্যা সম্পর্কে তার প্রথম মেয়াদের শেষ বছর ২০২০ সালে ওয়াশিংটন পোস্টের সাবেক নির্বাহী সম্পাদক লিওনার্দ ডাউনি জুনিয়র ‘দ্য ট্রাম্প অ্যাডমিনিস্ট্রেশন অ্যান্ড দ্য মিডিয়া’ শিরোনামে কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টসের বিশেষ রিপোর্টে উল্লেখ করেছেন : ‘‘ট্রাম্প তার অভ্যাসবশত বিভিন্ন সমাবেশে, রিপোর্টারদের প্রশ্নের উত্তরে এবং শত শত টুইটে গণমাধ্যমকে আক্রমণ করেছেন। তিনি বারবার গণমাধ্যমে তার সম্পর্কিত রিপোর্টকে ‘ভুয়া খবর’ বলে বর্ণনা করেছেন। তিনি রিপোর্টারদের ‘জনগণের শত্রু’, ‘অসৎ’, ‘দুর্নীতিবাজ’, ‘নিচু মানের রিপোর্টার’, ‘বাজে লোক’, ‘নোংরা মানুষ’ এবং ‘কারও সঙ্গে সাক্ষাৎ হওয়া সবচেয়ে খারাপ মানুষ’ বলে মন্তব্য করতেও ছাড়েননি।’’


প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার প্রথম মেয়াদের পুরো সময়ে এবং দ্বিতীয় মেয়াদের ২০২৫ সালের ১৪ নভেম্বর পর্যন্ত নিউইয়র্ক টাইমস, সিএনএন, এনবিসি, ফক্স নিউজ, এবিসি নিউজ, এমএসএনবিসি, ওয়াশিংটন পোস্টের মতো জনপ্রিয় গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে ছয়শ’র বেশি টুইট করেছেন। ডোনাল্ড ট্রাম্প নিউইয়র্ক টাইমসকে ‘ভুয়া’, ‘ভণ্ড’, ‘নোংরা’, ‘কলঙ্কিত’, ‘মূর্খ’, ‘অনভিজ্ঞ’, ‘কাণ্ডজ্ঞানহীন, ‘দুর্বিষহ’, ‘ক্ষয়িষ্ণু’ ও ‘মরণাপন্ন’ বলে উল্লেখ করেছেন। ওয়াশিংটন পোস্টকে চিহ্নিত করেছেন ‘উন্মাদ’, ‘অসৎ’, ‘প্রতারক’ ও ‘নির্লজ্জ’ হিসাবে। গত মার্চ মাসে তিনি ‘সিএনএন’ এবং ‘এমএসএনবিসি’র মতো বিখ্যাত গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অঙ্গুলি নির্দেশ করেছেন; এ প্রতিষ্ঠান দুটি অবৈধ কর্মকাণ্ডে লিপ্ত। ১৪ নভেম্বর হোয়াইট হাউজে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্নকারী ব্লুমবার্গ নিউজের রিপোর্টার ক্যাথারিন লুসিকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ‘কোয়ায়েট, পিগি’ (চুপ করো শূকর ছানা) বলে থামিয়ে দেন।


১৮ নভেম্বর ট্রাম্প ও সৌদি যুবরাজ মুহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এবিসি নিউজের চিফ হোয়াইট হাউজ করেসপন্ডেন্ট মেরি ব্রুসকে তার প্রশ্নের জন্য তিনি তির্যকভাবে আক্রমণ করেন-‘আপনি ভয়ংকর মানুষ এবং ভয়ংকর রিপোর্টার’ বলে। যেসব রিপোর্টার তার প্রতি সমালোচনামূলক মনোভাব পোষণ করেন, তাদের তুচ্ছতাচ্ছিল্য ও অপমান করা ট্রাম্পের দীর্ঘ আচরিত অভ্যাস। তিনি মেরি ব্রুসকে অপমান করেই ক্ষান্ত হননি, একই সংবাদ সম্মেলনে এবিসি নিউজের ব্রডকাস্ট লাইসেন্স বাতিল করার হুমকিও দিয়েছেন। কিন্তু ট্রাম্পের এ আক্রমণ সত্ত্বেও মেরি ব্রুস তার পেশাগত মর্যাদা রক্ষা করেছেন। বরং ট্রাম্প এভাবে রিপোর্টারদের প্রতি অবমাননাসূচক মন্তব্য করায় আমেরিকান জনমনে ক্ষোভ সঞ্চারিত হয়েছে।


ট্রাম্প কেবল গণমাধ্যম ও সাংবাদিকদের সরাসরি আক্রমণ ও অপমান করেই ক্ষান্ত হওয়ার লোক নন। গণমাধ্যম ও সাংবাদিকদের হয়রানি করতে তিনি আদালতের সহায়তা নিতেও পিছু হটেন না। ২০২৪ সালের নির্বাচনি অভিযানের প্রায় চূড়ান্ত সময়ে তিনি সিবিএস নিউজের ‘সিক্সটি মিনিটস’-এর ব্রডকাস্টার এবং ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করেন। ওই বছর নির্বাচনের ঠিক আগে ডোনাল্ড ট্রাম্প আইওয়া স্টেটের রাজধানী থেকে প্রকাশিত ‘ডি মইন রেজিস্টার’-এর বিরুদ্ধে মামলা করেন ডেমোক্রেটিক প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী কমলা হ্যারিসকে মাত্রাতিরিক্ত সমর্থন প্রদানের মাধ্যমে নির্বাচনে হস্তক্ষেপ ও প্রতারণামূলক খবর প্রকাশের অভিযোগ উত্থাপন করে। এর আগেও তিনি হোয়াইট হাউজে তার প্রথম মেয়াদে এবং ২০২১ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ক্ষমতার বাইরে থাকা অবস্থায়ও বহুসংখ্যক সংবাদপত্র ও টেলিভিশন চ্যানেলের বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন। গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে ডোনাল্ড ট্রাম্পের অতি পরিচিত ও আলোচিত প্রধান অভিযোগগুলো হচ্ছে, ‘গণমাধ্যমগুলো কেবল পক্ষপাতদুষ্টই নয়, বরং অসৎ, দুর্নীতিগ্রস্ত ও বিপজ্জনক।’


১৮ নভেম্বর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এবং সৌদি যুবরাজ সালমানের যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এবিসি নিউজের মেরি ব্রুসের প্রতি অপমানসূচক মন্তব্য এবং তার প্রতিষ্ঠানের ব্রডকাস্ট লাইসেন্স বাতিলের হুমকি দেওয়ার একদিন পর হোয়াইট হাউজের একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে ট্রাম্পের আক্রমণকে আরও জোরদার করা হয় এবিসি’কে ডেমোক্রেট পার্টির পক্ষে একটি ছদ্মবেশী ব্রডকাস্ট নেটওয়ার্ক হিসাবে উল্লেখ করার মধ্য দিয়ে। প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, ‘জনগণের প্রকৃত মতামতকে আড়াল করা ও মিথ্যাচার চক্রান্তের দীর্ঘ ঐতিহ্য রয়েছে এ নেটওয়ার্কের।’ মেরি ব্রুসের পক্ষ সমর্থন করে এবিসি নিউজ কোনো বক্তব্য দেয়নি। সম্ভবত তারা হোয়াইট হাউজের আরও বিরাগভাজন হয়ে তাদের সম্প্রচার লাইসেন্স হারানোর ঝুঁকি নিতে প্রস্তুত নয়। কিন্তু তার অনেক সহকর্মী এবং সাংবাদিকদের সংগঠন তার ভূমিকার সমর্থনে এগিয়ে এসেছে। ‘গুড মর্নিং আমেরিকা’ প্রোগ্রামের কো-হোস্ট রবিন রবার্টস প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কঠোর আক্রমণের সমালোচনা করে মেরি ব্রুসের উদ্দেশে বলেছেন, ‘মেরি, আপনাকে বুঝিয়ে বলার কিছু নেই। এখন চরম এক সংকটের মুহূর্ত। আপনার রিপোর্টিং এবং আপনি যে ধরনের প্রশ্ন করেছেন, সেজন্য আপনাকে ধন্যবাদ। এটি আপনার জন্য অবশ্যই পরাবাস্তব।’ মেরি ব্রুস উত্তরে বলেন, ‘হ্যাঁ, এটা কিছুটা পরাবাস্তব। কিন্তু এটাই তো আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য।’

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

এই সম্পর্কিত

আরও