ভারী ভূমিকম্পে কাঁপছে বাংলাদেশ

www.ajkerpatrika.com আলম শাইন প্রকাশিত: ২২ নভেম্বর ২০২৫, ১২:৫৮

ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস কিংবা বজ্রপাত থেকে রক্ষা পেতে হুঁশিয়ারি সংকেত পেলেও অথবা নিরাপদে সরে যাওয়ার সুযোগ হলেও ভূমিকম্প থেকে রক্ষা পেতে এ ধরনের কোনো সুযোগ পায় না মানুষ। কারণ, বিজ্ঞান ভূমিকম্পের মতো মহাদুর্যোগের কাছে খুবই অসহায়। ভূমিকম্পের পূর্বাভাস মানুষকে জানানোও যায় না। তবে যুক্তরাষ্ট্রের বিজ্ঞানীরা সে ক্ষেত্রে সামান্য সফলতাও অর্জন করেছেন। তাঁরা সেলফোনের মাধ্যমে ভূমিকম্পের আগাম সতর্কীকরণের সামান্য উপায় খুঁজে পেয়েছেন। তবে সেটি তেমন একটা কার্যকর ব্যবস্থা নয়; মাত্র ৮০ সেকেন্ড আগে জানা যাবে। তবু সেটি নিয়ে আশায় বুক বাঁধা যায়। হয়তো একদিন সেটি ৮০ মিনিটেও দাঁড়াতে পারে। তবে বর্তমানে এই দুর্যোগ থেকে নিস্তার পাওয়ার অন্য কোনো উপায় নেই—এটাই সত্য।


ভূমিকম্প বিভিন্ন মাত্রার হয়। ধ্বংসলীলা ও দুর্যোগ শক্তির পরিমাপ বোঝাতে রিখটার স্কেলের মাত্রা ব্যবহার করা হয় ভূমিকম্পের ক্ষেত্রে। যেমন ১ থেকে ১০ হচ্ছে রিখটার স্কেলের মাত্রা। রিখটার স্কেলের মাত্রা ৫-এর ওপরে গেলেই সেটাকে ভারী ভূমিকম্প বলা হয়। যেই মাত্রার ভূমিকম্প শুক্রবার ঢাকার আশপাশে ঘটেছে। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, এটির মাত্রা ছিল ৫.৭, যার উৎপত্তিস্থল নরসিংদী জেলায়। এই লেখা শেষ করা পর্যন্ত ক্ষয়ক্ষতি সম্পর্কে যতটা জানা গেছে তা হচ্ছে, ঢাকা শহরে তিনজনের মৃত্যু, আহত অনেক এবং অনেক ভবন হেলে পড়েছে এবং নারায়ণগঞ্জসহ বিভিন্ন জায়গায়ও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির খবর আমরা ধীরে ধীরে জানতে পারছি।

ভূমিকম্পের একেক মাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ার মানেই হচ্ছে ১০ থেকে ৩২ গুণ শক্তি বৃদ্ধি পাওয়া। যেমন ভূমিকম্পের মাত্রা ৫ থেকে ৫.৯৯ হচ্ছে মাঝারি, ৬ থেকে ৬.৯৯ তীব্র, ৭ থেকে ৭.৯৯ ভয়াবহ, ৮-এর ওপরে মহাদুর্যোগ। এই হচ্ছে রিখটার স্কেলের হিসাব। রিখটার স্কেলের হিসাব ছাড়াও ভূমিকম্প ছোট, মাঝারি ও বড় ধরনের আখ্যা দিয়ে থাকে অনেকেই। তবে ভূমিকম্পের ধরন যেমনই হোক না কেন, সব ধরনের ভূমিকম্পই বিপজ্জনক। ছোট ধরনের ভূমিকম্প তেমন বিপজ্জনক না হলেও মাঝারি ধরনের ভূমিকম্পের তাণ্ডবে ঘরবাড়ি ভেঙে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়। বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট হয় এবং গ্যাসলাইন ভেঙে তছনছ হওয়ার পাশাপাশি জনপদে আগুন লেগে যায় বেশির ভাগ সময়। আর বড় ধরনের ভূমিকম্প হলে তো কথাই নেই, ভয়ংকর বিভীষিকা নেমে আসে যেকোনো জনপদে। সেটি যদি সমুদ্রের তলদেশে ঘটে, তাহলেও রক্ষা নেই।

জলোচ্ছ্বাসের প্রকোপে উপকূল প্লাবিত হয়ে হাজার-লাখো প্রাণের বিনাশ ঘটায়। যেমন ২৬ ডিসেম্বর ২০০৪ সালে ভারত মহাসাগরের ৩০ কিলোমিটার গভীরে যে ভূকম্পন ঘটে, তাতে ১৪টি দেশের প্রায় ২ লাখ ৩০ হাজার মানুষ মারা যায়। ওই ভূমিকম্প বিশ্বে ‘সুনামি’ নামে পরিচিতি পায়; যার মাত্রা রিখটার স্কেলে ৯.১ থেকে ৯.৩।


পৃথিবীর ইতিহাসে ওই ভূমিকম্প দীর্ঘতম সময়ের ছিল; প্রায় ৮.৩ থেকে ১০ মিনিট এর স্থায়িত্ব ছিল। অন্যদিকে ১১ মার্চ ২০০৯ সালে জাপানে কয়েক সেকেন্ড স্থায়িত্বের বড় ধরনের ভূমিকম্প আঘাত হানে, যার মাত্রা ছিল ৮.৯। ওই ভূমিকম্পের ফলে ওই তারিখের দিনের দৈর্ঘ্য ১.৮ মাইক্রো সেকেন্ড হ্রাস পেয়েছিল। তবে পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ধরনের ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে ১৯৬০ সালে চিলিতে।


রিখটার স্কেলে ওই ভূমিকম্পের মাত্রা ৯.৫ রেকর্ড করা হয়েছিল, যার ফলে চিলিতে বিভীষিকাময় মহাদুর্যোগ নেমে আসে এবং ঘরবাড়ি ধ্বংসের পাশাপাশি অসংখ্য মানুষ প্রাণ হারায়। এর পর থেকে চিলি সরকার যেকোনো স্থাপনার অনুমোদনের ক্ষেত্রে কঠোর নীতিমালা প্রণয়ন করে। চিলিতে বিল্ডিং কোড বাধ্যতামূলক করাতে পরবর্তী সময়ে এর সুফলও পেয়েছে দেশটি। দেখা গেছে, ৮ মাত্রার ভূমিকম্পেও দেশটির তেমন ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। মোটামুটি এই হচ্ছে জলে-স্থলে আঘাত হানা তিনটি বড় ধরনের ভূমিকম্পের পরিণাম। এ ছাড়া বড় ধরনের আরও কয়েকটি ভূমিকম্প বিশ্বে আঘাত হেনেছিল, যার ফলে জনপদ বিধ্বস্ত হওয়ার পাশাপাশি লাখ লাখ প্রাণের সমাধি ঘটেছিল যুগে যুগে। সুতরাং বলা যায়, ভূমিকম্প অন্যান্য দুর্যোগের চেয়েও ভয়াবহ একটি দুর্যোগ। কারণ, এই দুর্যোগ শুধু মানুষ বা অন্যান্য প্রাণীর প্রাণই কেড়ে নেয় না, যেকোনো জনপদকেও বিলীন করে দেয়। অর্থাৎ, সভ্যতাকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার বড় ধরনের ক্ষেত্রই হচ্ছে ভূমিকম্প। ভূমিকম্প নিয়ে অনেক মিথও আছে। ভূমিকম্প শুধু পৃথিবীতেই নয়, সৌরজগতের অন্যান্য গ্রহেও আঘাত হানে। ভূ-অভ্যন্তরে টেকটোনিক প্লেটের ওঠানামার কারণই হচ্ছে ভূকম্পন বা ভূমিকম্পের প্রধান কারণ। এ ছাড়া আগ্নেয়গিরির বিস্ফোরণ, শিলাচ্যুতি, তাপ বিকিরণের কারণেও ভূমিকম্প হয়। তবে সেই ধরনের ভূমিকম্প টেকটোনিক প্লেটের ওঠানামার মতো অতটা ভয়ংকর হয় না।


ভূমিকম্প যেকোনো মুহূর্তেই আঘাত হানতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা জিওলজিক্যাল সার্ভে (ইউএসজিএস) জানিয়েছে, বিশ্বে বছরে লাখ লাখ ভূমিকম্প হয়। এর মধ্যে অনেকগুলো কম্পন অনুধাবনও করা যায় না। সংস্থাটি আরও জানিয়েছে, বছরে গড়ে ১৭টি বড় ধরনের ভূমিকম্প হয়, রিখটার স্কেলে ওই ভূমিকম্পের মাত্রা ৭-এর ওপরে থাকে। আর ৮ মাত্রার ভূমিকম্প বছরে একবার হয়ে থাকে।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও