তাজউদ্দীন ছয় দফার অন্যতম রূপকার—এটা প্রতিষ্ঠিত সত্য

প্রথম আলো শারমিন আহমদ প্রকাশিত: ২৪ জুলাই ২০২৫, ১৩:০০

বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের বড় মেয়ে শারমিন আহমদের এই সাক্ষাৎকার প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান নিয়েছিলেন ২০২৪ সালের ১০ নভেম্বর। এই সাক্ষাৎকারে তাজউদ্দীন আহমদকে একজন পিতা হিসেবে, একজন নেতা হিসেবে, বিশেষ করে একজন মানুষ হিসেবে আমরা কেমন করে দেখি, সে বিষয়গুলো উঠে এসেছে। এ বছর তাজউদ্দীন আহমদের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে তিন পর্বের এই সাক্ষাৎকারের আজ দ্বিতীয় পর্ব প্রকাশিত হলো।


এই যে এত বিরোধিতা, বাধাবিপত্তির মুখেও তিনি (তাজউদ্দীন আহমদ) সবাইকে নিয়ে চলার মতো একটা কঠিন পরীক্ষায় পাস করেছিলেন...


শারমিন আহমদ: তাজউদ্দীন আহমদ যে অসহযোগ আন্দোলনটাকে সংগঠিত করলেন পাকিস্তান সরকারের বিরুদ্ধে, সেই ’৭১ সালে, সেটা অভূতপূর্ব ছিল। ওই অর্গানাইজিং টেকনিক, ওখানে ব্যাংকিং সেক্টরে কখন টাকা তুলবে, কত তুলবে, ছাত্র-শিক্ষক, ইঞ্জিনিয়ার—তাদের কী রোল হবে। মানে প্রতিটি ব্যাপারে তিনি দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। জীবনব্যাপী তাঁর সেই প্রস্তুতিটাই কাজে লেগেছিল একাত্তরে, সেই উত্তাল একটা সময়, যখন কী করবেন, সরকার গঠন হবে কি না, কোনো নির্দেশনা তিনি পাননি। ওটার মধ্য থেকে তিনি যে কাজগুলো এত সুন্দরভাবে করলেন, ওই জীবনভর প্রস্তুতির কারণেই। একটা জাতির মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দেওয়া সুকঠিন ছিল। কারণ, ভেতর থেকে একধরনের বাধা, এদিকে আবার ধরেন ভারতীয় ইন্টেলিজেন্স, তাদের একটা আলাদা ব্যবস্থা ছিল—সেখান থেকে বাধা; একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র, চীনের বাধা।


দেখেন, পররাষ্ট্রনীতি সম্পর্কে তাঁর কত বড় জ্ঞান ছিল। ভারত আমাদের অস্ত্রগুলো ঠিকমতো দিতে পারছিল না। কারণ, ভারতের এক পাশে চীন, এক পাশে পাকিস্তান এবং যুক্তরাষ্ট্র, মানে বৈরী শক্তি। সে সময়কার জিওপলিটিক্যাল, স্ট্র্যাটেজিক্যাল অ্যালাইনমেন্টটা আলাদা ছিল আজকের থেকে। সেই অবস্থায় ভারতও ভাবছে, তার পাশে তো কোনো পরাশক্তি নেই, বড় শক্তি নেই।


সোভিয়েত ইউনিয়নকে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে আনার জন্য আমরা ভারতের ভূমিকাটা জানি। কারণ, ভারত আমাদের মুক্তিযুদ্ধের স্টোরিটা যেভাবে সাজিয়েছে, বলেছে, আমাদের পক্ষ থেকে কিন্তু আমরা আমাদের যুদ্ধের কথা তুলিনি। এখন আমার কষ্ট লাগে, যেহেতু আমাদের স্টোরি, আমাদের বীরত্বগাথা—আমাদের নৌ কমান্ডো, বৈমানিকেরা কত ত্যাগ-তিতিক্ষার সঙ্গে যে যুদ্ধটা করেছিলেন! পাকিস্তানে ভারত যখন পাল্টা হামলা করল, তার আগেই কিন্তু আমাদের বিমানবাহিনী ভারতকে বলছিল, ‘আমরা আগে অ্যাটাক করব।’


চিন্তা করে দেখেন, একটা কমার্শিয়াল হেলিকপ্টারের জানালা-দরজা খুলে ওটাকে একটা যুদ্ধ হেলিকপ্টারের মতো করে সাজিয়ে নিচু জায়গা দিয়ে উড়ে গিয়ে বোমা ফেলল। এটা যে কত বড় দুঃসাহসিক কাজ ছিল, আমাদের এয়ারফোর্স হিস্ট্রিতে, আমাদের স্কুল-কলেজের পাঠ্যসূচিতে ওই কথাটা কোথায়?



আমি বলি, মুক্তিযুদ্ধের সময়টায় ৯-১০ বছরের কাজ তিনি ৯ মাসে কীভাবে সামাল দিলেন! সোভিয়েত ইউনিয়ন বলেছে, ‘আমরা বাংলাদেশের পক্ষে ভারতের পাশে এসে দাঁড়াই।’ এ কারণে আমরা দেখছিলাম, এখানে একটা প্রজ্ঞাশীল নেতৃত্ব আছে। তাঁরা যখন তাজউদ্দীন আহমদের সঙ্গে কথা বললেন, তাজউদ্দীন আহমদ বাংলাদেশ পলিসি সেলের মাধ্যমে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি, তার ভৌগোলিক চিন্তা—তারা কীভাবে একটা নবজাত রাষ্ট্রকে গড়ে তুলছে, এই কথাগুলো তখন যারা এমন কনভিন্সিংভাবে সোভিয়েত ইউনিয়নকে জানায়, সেটার ফলে ভারত-সোভিয়েতের ওই মৈত্রী চুক্তি হয় আগস্ট মাসে। সেটার পেছনে বাংলাদেশ সরকার, তাজউদ্দীন আহমদের অভূতপূর্ব অবদান ছিল। একটা বিশ্বশক্তিকে নিয়ে আসার জন্য তাঁর যে মেধা, দক্ষতা, এটা আজকের প্রজন্ম যত জানবে, তত গর্বিত হবে।


আপনি যে বললেন, আমরা সেভাবে স্মরণ করিনি, মনে করিনি; আসলে স্বাধীনতার পর থেকে সঠিকভাবে তাঁর উপস্থাপনাটা হয়নি দেশবাসীর সামনে। তাই আমরা দেখি তাজউদ্দীন আহমদের ভূমিকাকে খাটো করার চেষ্টা হয়েছে। এগুলো কিন্তু ইতিহাসের পাতায় ঠিক সেভাবে স্থান পায়নি।


শারমিন আহমদ: এমনি একটা উদাহরণ দিই। একজন তরুণ লেখক, সে লিখেছে ছোটদের তাজউদ্দীন। তাজউদ্দীন আহমদকে নিয়ে এটাই ছোটদের জন্য দ্বিতীয় বই। চমৎকার বই। মেয়েটা গোল্ড মেডেলও পেয়েছে। ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট পিস অ্যান্ড কনফ্লিক্ট স্টাডিজে। নাম নাসরিন জেবিন। সে তাজউদ্দীন আহমদকে ছয় দফার অন্যতম রূপকার লিখেছিল। তাকে কিন্তু রীতিমতো থ্রেট করা হয়েছে, ‘রূপকার’ শব্দটা যেন লেখা না হয়। বইটা প্রকাশিত হয়েছে ২০২৪ সালের জুলাইয়ের আগে।


অভ্যুত্থানের পর প্রকাশিত হলে হয়তো লিখতে পারত। কিন্তু তখন ওই রূপকার কথাটা বদলে ওরা মুখবন্ধ লিখেছিলেন। যাঁরা প্রকাশনার সঙ্গে যুক্ত, তাঁরা তাকে বলেছিলেন, এটা করলে তোমার বিপদ হবে। ছাত্রলীগের হামলার শিকার হতে পারো। মানে কোন দেশে আমরা বাস করতাম?


তাজউদ্দীন আহমদ ছয় দফার অন্যতম রূপকার। এটা প্রতিষ্ঠিত একটা সত্য। রেহমান সোবহান, যিনি ছয় দফা প্রণয়নের সঙ্গে যুক্ত, তিনি নিজেই বলছেন, ওটার ভেতরের যে যুক্তি, ইকোনমিক পলিসিগুলো আব্বু যেমন গভীরভাবে বুঝতেন, খুব কম মানুষই সেগুলো বুঝতেন। অথচ আমরা এই পর্যায়ে এসে পৌঁছেছিলাম। কিন্তু এটা তো ব্যাকফায়ার হলো। আজকে যদি সবার ইতিহাসটা তুলে ধরা হতো, তাহলে তো এই জায়গায় আমরা পৌঁছাই না।


সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

এই সম্পর্কিত

আরও