ডিজিটাল শৃঙ্খলে গোপনীয়তার ক্ষয় ও মুক্তির অন্বেষণ

জাগো নিউজ ২৪ ড. মতিউর রহমান প্রকাশিত: ০৬ জুলাই ২০২৫, ১২:৫১

বর্তমান ডিজিটাল যুগে মানুষের ব্যক্তিগত জীবনের গোপনীয়তা এক গভীর সংকটের মুখোমুখি। একদিকে প্রযুক্তির সহজলভ্যতা ও সুবিধা, অন্যদিকে ব্যক্তিগত তথ্যের ওপর এক প্রকার অদৃশ্য দখলদারি তৈরি হয়েছে, যা শোশানা জুবফের (Shoshana Zuboff) “Surveillance Capitalism” বা ‘নজরদারি পুঁজিবাদ’ নামক তত্ত্বের মাধ্যমে সুস্পষ্টভাবে বিশ্লেষণ করা হয়েছে।


এই তত্ত্ব অনুযায়ী, প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো ব্যক্তি-মানুষের অভিজ্ঞতা, আচরণ, অনুভূতি— সবকিছু ডেটার রূপে সংগ্রহ করে এবং তা বাজারজাত করে। এই প্রক্রিয়ায় মানুষের স্বাধীনতা ও ব্যক্তিত্বের ওপর গভীর আঘাত হানে। ফ্র্যাঙ্কফুর্ট স্কুলের সমালোচনামূলক তত্ত্ব এই বাস্তবতা আরও গভীর দৃষ্টিতে ব্যাখ্যা করে, যেখানে আধুনিক পুঁজিবাদী সমাজ একপ্রকার প্রযুক্তিভিত্তিক শাসনব্যবস্থা হিসেবে পরিগণিত হয়।


শোশানা জুবফ তার বিখ্যাত গ্রন্থ ‘The Age of Surveillance Capitalism” (২০১৯)-এ নজরদারি পুঁজিবাদের যে ধারণা দেন, তা আধুনিক পুঁজিবাদের একটি নতুন এবং বিপজ্জনক রূপ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। এই নতুন পুঁজিবাদী ব্যবস্থায়, মূল পণ্য হলো মানুষের আচরণগত তথ্য। গুগল, ফেসবুক, অ্যামাজনসহ বিশ্বের বৃহৎ প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো মানুষের ডিজিটাল পদচিহ্ন—যেমন সার্চ হিস্টরি, লোকেশন ডেটা, সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার, এমনকি কণ্ঠস্বর ও আবেগ পর্যন্ত—নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করে।


এই বিশাল পরিমাণ তথ্য বিশ্লেষণ করে তারা মানুষের ভবিষ্যৎ আচরণ সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণীমূলক মডেল তৈরি করে। এই মডেলগুলোই মূলধন হিসেবে বিজ্ঞাপনদাতা, কর্পোরেট সংস্থা এবং ক্ষেত্রবিশেষে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে বিক্রি করা হয়। এভাবে তৈরি হয় একটি ‘ব্যবহারগত ভবিষ্যতের বাজার’ (Market for Behavioral Futures), যেখানে ব্যবহারকারীর আচরণই পণ্যে পরিণত হয়, যা তাদের অজান্তেই কেনা-বেচা হয়।



এই প্রক্রিয়াটি কেবল পণ্য বা সেবার বিজ্ঞাপন প্রচারের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং এটি একটি বৃহৎ ক্ষমতার কাঠামো গড়ে তোলে। এই কাঠামো এতটাই নিগূঢ় যে, এর মাধ্যমে ব্যক্তিকে নিয়ন্ত্রণ করা যায় নিঃশব্দে ও অদৃশ্যভাবে। জুবফ ব্যাখ্যা করেন যে, এই ক্ষমতার কাঠামো এতটাই অসাম্যপূর্ণ যে তথ্য সংগ্রাহকরা ব্যবহারকারীদের সম্পর্কে বিশাল জ্ঞান অর্জন করে অথচ ব্যবহারকারীরা নিজের তথ্য কীভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে তা জানতেও পারে না, বা তাদের তথ্যের ওপর কোনো নিয়ন্ত্রণ থাকে না।


এ ধরনের একতরফা তথ্য ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে ব্যক্তিগত গোপনীয়তা (privacy) সম্পূর্ণ ভেঙে পড়ে এবং গণতন্ত্রের মৌলিক ভিত্তিই প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে যায়। ব্যবহারকারীদের আচরণকে মুনাফার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহারের এ পদ্ধতি, মানুষের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতাকে একটি নতুন ধরনের সম্পদ হিসেবে সংজ্ঞায়িত করে, যা ঐতিহাসিকভাবে কখনো পুঁজিবাদের অংশ ছিল না। এটি ব্যক্তিগত জীবন ও অনুভূতিকে একটি অর্থনৈতিক চালিকাশক্তিতে পরিণত করে, যেখানে প্রতিটি ক্লিক, প্রতিটি লাইক, প্রতিটি ব্রাউজিং হিস্টরি, প্রতিটি জিও-লোকেশন ডেটা মুনাফার সুযোগ তৈরি করে।


ফ্র্যাঙ্কফুর্ট স্কুল, বিশেষত থিওডর আদোর্নো (Theodor W. Adorno), ম্যাক্স হর্কহেইমার (Max Horkheimer) এবং হারবার্ট মারকুজের (Herbert Marcuse) মতো চিন্তকদের সমালোচনামূলক তত্ত্ব এই প্রেক্ষাপটে অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। তারা আধুনিক পুঁজিবাদী সমাজের ভেতরে প্রযুক্তি ও সংস্কৃতিকে ব্যবহার করে যে নিয়ন্ত্রণের রূপ দেখিয়েছেন, তা ‘ইন্সট্রুমেন্টাল র্যাশনালিটি (Instrumental Rationality) বা যান্ত্রিক যুক্তিবাদ দ্বারা চালিত। তাদের মতে, আধুনিক যুগে যুক্তি আর মুক্তির হাতিয়ার না হয়ে পরিণত হয় নিয়ন্ত্রণ ও শোষণের যন্ত্রে।


আদোর্নো ও হর্কহেইমারের ‘কালচার ইন্ডাস্ট্রি’ (Culture Industry) ধারণায় বোঝানো হয় যে, গণমাধ্যম ও জনপ্রিয় সংস্কৃতি কীভাবে মানুষের চিন্তাভাবনা নিয়ন্ত্রণ করে এবং তাদের মধ্যে একধরনের কৃত্রিম চাহিদা তৈরি করে। আজকের নজরদারি পুঁজিবাদের যুগে এই সংস্কৃতি শিল্প কেবল টেলিভিশন বা চলচ্চিত্রের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং এটি ছড়িয়ে পড়েছে মোবাইল অ্যাপ, সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম, সার্চ ইঞ্জিন এবং অন্যান্য ডিজিটাল সেবার মধ্যে।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও