ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কতটুকু ‘বিশ্ববিদ্যালয়’ হয়ে উঠল

প্রথম আলো তারিক মনজুর প্রকাশিত: ০১ জুলাই ২০২৫, ১৩:১৭

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে আমাদের আকাঙ্ক্ষা আছে, দীর্ঘশ্বাস ও হতাশাও আছে। শিক্ষার্থীরা এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন অনেক স্বপ্ন নিয়ে। কিন্তু কিছুদিন বাদেই শুরু হয় তাঁদের অভাব-অনুযোগ। শিক্ষকেরা বিভিন্ন জায়গায় বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে লিখছেন, বলছেন। কিন্তু তাঁরাও নানা ঘাটতি-অপূর্ণতার কথা বলে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সত্যিকার অর্থেই ‘বিশ্ববিদ্যালয়’ হয়ে উঠতে পেরেছে কি না, মাঝেমধ্যে এমন প্রশ্নও ওঠে।


প্রতিবছর ১ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দিবস পালিত হয়। এ বছর প্রতিষ্ঠার ১০৪ বছর পূর্ণ করল এই বিশ্ববিদ্যালয়। এ অঞ্চলের মানুষের উচ্চশিক্ষার সুযোগ তৈরি করতেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠা। সূচনালগ্নে সেই সম্ভাবনারও প্রকাশ ছিল। ১৯৪৭ সালের দেশভাগের আগপর্যন্ত একাডেমিক ক্ষেত্রে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সফলতার চিহ্ন রয়ে গেছে। পাকিস্তান পর্বের ২৪ বছরেও সফলতার ধারা বজায় থেকেছে। কিন্তু বাংলাদেশ পর্বে ধীরে ধীরে এর ক্ষয় শুরু হয়েছে। 


জাতীয় রাজনীতির সঙ্গে ছাত্র-শিক্ষকদের প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ সংশ্লিষ্টতা বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক পরিবেশে প্রভাব ফেলেছে। বিভিন্ন সময়ে তাই এ প্রশ্নও উঠেছে, লেজুড়বৃত্তির রাজনীতি থাকা উচিত কি নয়। ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠনের নেতারা শুধু রাজনীতি করেননি, সাধারণ ছাত্রদেরও রাজনীতিতে অংশ নিতে বাধ্য করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে মেধাকে গৌণ করে রাজনৈতিক পরিচয়কে প্রাধান্য দিয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়কে পিছিয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে এগুলো ভূমিকা রেখেছে।


 গত কয়েক দশকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন বিভাগ খোলা হয়েছে অনেক। বাজারের চাহিদাই এখানে প্রাধান্য পেয়েছে। কেউ কেউ এমন প্রশ্নও তুলেছেন, আমাদের এতগুলো বিভাগের প্রয়োজন ছিল কি না। একই বিভাগের অন্তর্গত করে বিশেষ বিষয়ের পাঠদান করা যেত কি না। তা ছাড়া দুঃখজনক হলেও সত্যি, সব বিভাগেই সিলেবাস আছে, কিন্তু এসব সিলেবাসকে শিক্ষাক্রমের অন্তর্গত করে সাজানো সম্ভব হয়নি। এটি করতে না পারার কারণে উপযুক্ত ও দক্ষ গ্র্যাজুয়েট তৈরি করায় ঘাটতি থেকে যাচ্ছে। 



সমস্যা রয়েছে গবেষণাক্ষেত্রেও। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দৃশ্যমান ও আন্তর্জাতিক মানের গবেষণা হচ্ছে না। গবেষণার জন্য যে পরিবেশ ও পদ্ধতি দরকার, সেটি বিশ্ববিদ্যালয় দিতে পারছে না। বিভিন্ন বিভাগ থেকে যেসব গবেষণা হচ্ছে, সেগুলো মানের দিক থেকে দুর্বল। বৃহত্তর পরিকল্পনার অধীন গবেষণার ক্ষেত্র নির্ধারণ করা দরকার ছিল। তারপর সেই অনুযায়ী গবেষণা পরিচালনা করা যেত। বর্তমান প্রক্রিয়ায় যেসব গবেষণা হচ্ছে, সেগুলো বিচ্ছিন্ন এবং প্রায় ক্ষেত্রেই পুরোনো কাজের চর্বিতচর্বণ।


বিশ্ববিদ্যালয় পড়ার পরিবেশ দিতেও ব্যর্থ হয়েছে। অধিকাংশ শ্রেণিকক্ষ পাঠদান বা পাঠ গ্রহণের উপযুক্ত নয়। শিক্ষার্থীরা অনেক কক্ষে ঠিকমতো বসতেও পারেন না। প্রায় কক্ষেই শিক্ষকদের লেখার উপযোগী বোর্ড নেই, নেই লেখা প্রদর্শনের জন্য আধুনিক প্রযুক্তির সুবিধা। আবাসিক হলগুলোয় থাকার সুযোগ তৈরি করতেই শিক্ষার্থীদের যুদ্ধ করতে হয়। সেখানেও পড়ার পরিবেশ নেই। তা ছাড়া গতানুগতিক ধারায় বছরের পর বছর যে প্রশ্ন হয়, তাতে পরীক্ষার আগে পুরোনো নোট বা তার ফটোকপি পড়লেই চলে! এখন শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য গিয়ে ঠেকেছে চাকরির পরীক্ষায়। কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি, হলের পাঠকক্ষ ও বিভাগীয় সেমিনারগুলোয় বসে তাঁরা বিসিএস পরীক্ষার প্রস্তুতি নেন! 


ছাত্র সংসদ না থাকায় সৃজনশীল ও গঠনমূলক কাজে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ নেই বললেই চলে। নিয়মিত সামাজিক-সাংস্কৃতিক কাজে তাঁদের অংশগ্রহণ দেখা যায় না। বিতর্ক, আবৃত্তি, অভিনয়সহ বিভিন্ন আয়োজনে তাঁদের আগ্রহ কমেছে। একসময় খেলাধুলায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সুনাম ছিল; এখন সেটাও নেই। লেখালেখি, পত্রিকা সম্পাদনা—এসব কাজেও আগের মতো উৎসাহী ও নিবেদিতপ্রাণ কর্মী পাওয়া যায় না।


আজকের শিক্ষার্থীরাই ভবিষ্যতের বাংলাদেশের নেতৃত্ব দেবেন। রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজ, সংস্কৃতি—সব ক্ষেত্রে তাঁদের অংশগ্রহণেই বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তাঁদের মধ্যে কোন নেতৃত্ব আর সক্ষমতা তৈরি করছে। শিক্ষকেরাও নিয়মিত একাডেমিক ও প্রশাসনিক কাজের বাইরে গবেষণা, লেখালেখি ও শিক্ষাসংশ্লিষ্ট কাজে সময় দিতে পারছেন না। মানতেই হবে, আমাদের অনেক ঘাটতি ও অপূর্ণতা আছে; কিন্তু আন্তরিকতা আর আগ্রহে কমতি কেন থাকবে, সেটাও প্রশ্ন।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

এই সম্পর্কিত

আরও