
বাবা দিবস কেন একদিন হয়?
“শোন ওরে ছোট্ট খোকা
শোন তোর পাপার কথা
দুঃখ যদি আসে কভু জীবনে
হাসি দিয়ে তারে ডেকে দিস।।”
‘লাভ ইন সিমলা’ চলচ্চিত্রে বিশিষ্ট শিল্পী ফেরদৌস ওয়াহিদের গাওয়া গান এখনো বাবার বিশ্ব অতুলনীয় সুন্দরে নিমজ্জিত গান। মনে হয় গানটি—একা একজন বাবার নয়, দুনিয়ার সব ভাষা ও দেশের গান।
বাবা দুনিয়ার সবচেয়ে অবহেলিত একটি শব্দ অথচ বাবা শব্দটা হওয়া উচিত ছিল প্রতিদিনের মিথ। সমাজ সংসার আবর্তিত হয় নিঃশব্দ পথের অধিক নিঃশব্দ পথিক বাবাকে ঘিরে। সন্তান যখন পথ হারিয়ে দিশেহারা, তখনই একমাত্র বাবাই এসে দাঁড়ান নির্ভরতার প্রতীক হয়ে। বাবা! একটি শব্দ কিন্তু যুগান্তের আশ্বাস! বাবা! মাটির ওপরে উদার এক টুকরো আকাশ।
শামসুর রাহমানের কবিতা বাবাকে নিয়ে—‘কোন দৃশ্য সবচেয়ে গাঢ় হয়ে আছে’?
“কোন দৃশ্য সবচেয়ে গাঢ় হয়ে আছে
এখনও আমার মনে? দেখেছি তো গাছে
সোনালি-বুকের পাখি, পুকুরের জলে
সাদা হাঁস। দেখেছি পার্কের ঝলমলে
রোদ্দুরে শিশুর ছুটোছুটি কিংবা কোনো।
যুগলের ব’সে থাকা আঁধারে কখনো।
দেশে কি বিদেশে ঢের প্রাকৃতিক শোভা
বুলিয়েছে প্রীত আভা মনে, কখনো-বা
চিত্রকরদের সৃষ্টির সান্নিধ্যে খুব
হয়েছি সমৃদ্ধ আর নিঃসঙ্গতায় ডুব
দিয়ে করি প্রশ্ন এখনও আমার কাছে
কোন দৃশ্য সবচেয়ে গাঢ় হয়ে আছে?
যেদিন গেলেন পিতা, দেখলাম মাকে-
জননী আমার নির্দ্বিধায় শান্ত তাঁকে
নিলেন প্রবল টেনে বুকে, রাখলেন
মুখে মুখে; যেন প্রিয় বলে ডাকবেন
বাসরের স্বরে। এখনও আমার কাছে
সেই দৃশ্য সবচেয়ে গাঢ় হয়ে আছে।”
সাহিত্যের সংসারে বাবাকে নিয়ে খুব কী সাহিত্যে আছে? কথাশিল্পী রশীদ হায়দার লিখেছেন, বাবা চরিত্র কেন্দ্র করে অনেকগুলো গল্প। মা কেন্দ্র করে অনেক গল্প উপন্যাস ছড়িয়ে আছে বিশ্বময়। অদ্ভুত হলেও বিচিত্র নামের বাংলা চলচ্চিত্র আছে। কিন্তু বাবাকে নিয়ে চলচ্চিত্র খুবই কম।
১৯৭৯ সালে বাংলাদেশে একটা চলচ্চিত্র মুক্তি পেয়েছিল, ‘দি ফাদার’। পরিচালক ছিলেন কাজী হায়াৎ। ফাদারের ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন জন নেপিয়ার এডামস। মেয়ের ভূমিকায় অনবদ্য ছিলেন সুচরিতা। এই সিনেমায় অসাধারণ গান ছিল—‘আয় খুকু আয়, আয় খুকু আয়’। গোটা ছবিতে সন্তানের জন্য একজন পিতার আকুতি ছড়িয়ে ছিল।
বাবা! অনেক সময় উপহাসের চরিত্রও বটে কঠিন সংসারের বাস্তবতায়। বাস্তব পরিস্থিতির কারণে বাবা যখন সংসারের দায় বহন করতে পারে না, তখন সন্তানের ব্যবহার, আচার অনেক সময়ে পাথরের ঘায়ে পাথরের আগুন জ্বালায়, তুমি খেতে দিতে পারবে না যখন, জন্ম দিলে কেন?
গল্পে বা উপন্যাসে অথবা সিনেমার সংলাপ—তোমাদের আনন্দের অসতর্ক মুহূর্তের ফসল আমি?
হায় দুনিয়া! জন্মই অপরাধ নয়, জন্ম দেওয়াও অপরাধ পিতার। আরও অপরাধ পিতার—পরিপূর্ণ সংসারের দায় পালন করতে না পারার। সবাই মিলে বাবার ওপর হামলে পড়ে কিন্তু বেচারা বাবা কী করবে? কতদূর যাবে? সাধ্যরও একটা সীমা থাকে তো? কিন্তু স্বার্থের টানে কে কতদূর যাবে?
সংসারে যখন বাবা পুত্র ও কন্যা থাকে তখন ত্রিমাত্রিক একটা সম্পর্ক গড়ে ওঠে। সংসারের সব গল্পে বা ঘটনায় বাবার পক্ষে থাকে কন্যা, মা থাকে পুত্রের পক্ষে। অনেকে বলেন—এটা হয় সিগমুড ফ্রয়েডের মতানুসারে। বস্তুত এটা সিগমুড ফ্রয়েডের বলার আগেই লিঙ্গ অনুভবের চিরায়ত প্রকৃতিগত প্রথায় প্রচলিত ছিল, তিনি কেবলমাত্র সামনে এনেছেন। বাবার বুকে কন্যা খুব নিরাপদ বোধ করে, মায়ের সঙ্গে অবস্থান করতে স্বাচ্ছদ্যবোধ করে পুত্র। প্রকৃতির এই খেলায় মানুষ চরিত্র মাত্র।
- ট্যাগ:
- মতামত
- বিশ্ব বাবা দিবস