বাজেটের গুণগত বাস্তবায়নে গুরুত্ব দিতে হবে

যুগান্তর ড. মোস্তফা কে মুজেরী প্রকাশিত: ০৪ জুন ২০২৫, ০৯:০২

আগামী অর্থবছরের (২০২৫-২০২৬) জন্য প্রস্তাবিত বাজেটের আকার ধরা হয়েছে ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা। আয় হবে ৫ লাখ ৬৪ হাজার কোটি টাকা। ফলে ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়াবে ২ লাখ ২৬ হাজার কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের জন্য বাস্তবায়নাধীন বাজেটের আকার ছিল ৭ লাখ ৯৮ হাজার কোটি টাকা। সে হিসাবে বাজেটের আকার ৮ হাজার কোটি টাকা হ্রাস পাবে। আগামী অর্থবছরের জন্য বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে ব্যয় বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে চলতি অর্থবছরের চেয়ে ৩৫ হাজার কোটি টাকা কম বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। নতুন বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে বিদেশি ঋণের লক্ষ্যমাত্রা কমানো হয়েছে ১৫ হাজার কোটি টাকা। আগামী অর্থবছরের জন্য বিদেশি ঋণ গ্রহণ করা হবে ৮৫ হাজার কোটি টাকা। আগামী অর্থবছর শেষে সার্বিক মূল্যস্ফীতির হার ৬ দশমিক ৫ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ। বাজেট ঘাটতি জিডিপির ৫ শতাংশের নিচে রাখা হয়েছে। আগামী অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ লাখ ১৮ হাজার কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের মূল লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা। পরে তা সংশোধন করে ৪ লাখ ৬৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকায় নির্ধারণ করা হয়। চলতি অর্থবছরে কৃষি খাতে ভর্তুকি বরাদ্দ রাখা হয়েছিল ১৭ হাজার কোটি টাকা। আগামী অর্থবছরে তা ২০ হাজার কোটি টাকা করা হয়েছে।


বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে বাজেট বাস্তবায়ন করা খুবই কঠিন। আগামী অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেট বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এর মধ্যে প্রথমেই উল্লেখ করতে হয় অভ্যন্তরীণ অর্থনীতিতে বিরাজমান উচ্চ মূল্যস্ফীতি কমিয়ে আনার প্রসঙ্গটি। অর্থবছর শেষে সার্বিক মূল্যস্ফীতির হার ৬ দশমিক ৫ শতাংশে নামিয়ে আনা হবে। গত তিন বছরেরও বেশি সময় দেশের অর্থনীতিতে উচ্চ মূল্যস্ফীতি বিরাজ করছে। সার্বিক মূল্যস্ফীতির হার এ সময় প্রায়ই সাড়ে ৯ শতাংশের উপরে ছিল। চলতি অর্থবছরজুড়েই উচ্চ মূল্যস্ফীতি বিরাজমান ছিল। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি মূল্যস্ফীতি ছিল ২০২৪ সালের নভেম্বরে ১১ দশমিক ৩৮ শতাংশ। গত বছর জুলাইয়ে সার্বিক মূল্যস্ফীতি ছিল ১১ দশমিক ৬৬ শতাংশ। সেই সময় খাদ্য মূল্যস্ফীতি ছিল ১৪ দশমিক ১০ শতাংশ। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর গত ৯ মাসে মূল্যস্ফীতি সামান্য কমে এপ্রিলে ছিল ৯ দশমিক ১৭ শতাংশ। মে মাসে মূল্যস্ফীতি আরও কিছুটা কমে ৯ দশমিক ০৫ শতাংশে নেমে এসেছে। মাত্র এক বছরের ব্যবধানে মূল্যস্ফীতির হার কমিয়ে সাড়ে ৬ শতাংশে নিয়ে আসা কি সম্ভব হবে? বিশ্বব্যাংক সম্প্রতি বলেছে, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশে খাদ্য মূল্যস্ফীতি সবচেয়ে বেশি। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে যে হাতিয়ারগুলো আছে, সেগুলো উপযুক্ত সময়ে সঠিকভাবে ব্যবহার করতে হবে। এটা করা গেলে মূল্যস্ফীতি সহনীয় পর্যায়ে নামিয়ে আনা সম্ভব হতে পারে। আমাদের নিকটবর্তী অনেক দেশ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সফল হয়েছে। এক্ষেত্রে শ্রীলংকার কথা উল্লেখ করা যেতে পারে। শ্রীলংকার মূল্যস্ফীতি একসময় অসহনীয় পর্যায়ে চলে গিয়েছিল। সেই অবস্থা থেকে দেশটির মূল্যস্ফীতির হার শূন্যের নিচে নেমে এসেছে। ২০২৩ সালেও পাকিস্তানের মূল্যস্ফীতি ৩০ শতাংশের উপরে ছিল। এখন তাদের মূল্যস্ফীতির হার অনেক কমে গেছে। উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা দুরূহ নয়। প্রশ্ন হচ্ছে, আমরা মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সঠিক পন্থা ও ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারছি কি না? আগামী অর্থবছরে সার্বিক মূল্যস্ফীতির হার ৬ দশমিক ৫ শতাংশে নামিয়ে আনার যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, তা অর্জিত হবে কি না, সেটা নির্ভর করছে আমরা মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের হাতিয়ারগুলো সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারব কি না এর ওপর।


মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক নীতি সুদহার বাড়িয়েছে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রিত হয়ে সহনীয় পর্যায়ে নেমে না আসা পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংক নীতি সুদহারকে উচ্চপর্যায়েই রাখবে। সার্বিক মূল্যস্ফীতির হার যদি লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ৬ দশমিক ৫ শতাংশে নামিয়ে আনা সম্ভব হয়, তখন বাংলাদেশ ব্যাংক হয়তো নীতি সুদহার কমিয়ে আনবে। নীতি সুদহার বৃদ্ধি পেলে ব্যাংক ঋণের সুদের হার আনুপাতিকভাবে বেড়ে যায়। সেই অবস্থায় ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হতে পারে। ব্যক্তি খাতে ব্যাংক ঋণের প্রবৃদ্ধি এখন ৭ শতাংশের আশপাশে ঘোরাফেরা করছে। একসময় ব্যক্তি খাতে ব্যাংক ঋণের প্রবৃদ্ধি ১৪-১৫ শতাংশ ছিল। ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগ কমে গেলে জিডিপি প্রবৃদ্ধিও মন্থর হয়ে পড়বে। বাংলাদেশ ব্যাংক নীতি সুদহার বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে। এর পাশাপাশি বাজার ব্যবস্থাপনা এবং পণ্য সরবরাহ ব্যবস্থার ক্ষেত্রে কিছু পদক্ষেপ নিতে হবে।


উচ্চ মূল্যস্ফীতির জন্য সিন্ডিকেটকে দায়ী করা হয়। সিন্ডিকেট শব্দটি এখন খুবই জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। কোনো পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি পেলেই আমরা বলি এর জন্য সিন্ডিকেট দায়ী। কিন্তু আমরা কেউই জানি না এ সিন্ডিকেটটি কী। কারা এ সিন্ডিকেট পরিচালনা করছে। সিন্ডিকেট চিহ্নিত করতে পারলেই আমরা তা নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ নিতে পারব। কাদের কারণে পণ্যমূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে, তা চিহ্নিত করা কঠিন কিছু নয়। প্রতিটি পণ্যের ভ্যালু চেইন থাকে। ভ্যালু চেইনে কারা সেই কারসাজিগুলো করছে, তা খুঁজে বের করা কঠিন কিছু নয়। এজন্য সঠিকভাবে বাজার পর্যবেক্ষণ করতে হবে। সরবরাহব্যবস্থা এবং বাজারব্যবস্থার দুর্বলতাগুলো আমরা কাটিয়ে উঠতে পারছি না।


সম্প্রতি মার্কিন ডলারের বিনিময় হার বাজারভিত্তিক করা হয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার বাজারভিত্তিক হওয়ার পরও যদি অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি না হয়, তাহলে তা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে সহায়ক হবে। বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার যদি স্থিতিশীল থাকে, তাহলে পণ্য আমদানিকারক ও রপ্তানিকারকরা সিদ্ধান্ত গ্রহণের সময় কোনো ধরনের দ্বিধাগ্রস্ত হন না। বর্তমানে ডলারের বিনিময় হার স্থিতিশীল রয়েছে। এটা অব্যাহত থাকলে তা প্রবৃদ্ধির জন্য সহায়ক হবে। প্রবাসী আয় বৈধ চ্যানেলে দেশে আসার প্রবণতা বাড়বে। বর্তমানে বাজারে বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার স্থিতিশীল আছে। এর একটি কারণ হচ্ছে আমরা এখন প্রবৃদ্ধি নিম্নপর্যায়ে আছি। প্রবৃদ্ধি বাড়লে বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার স্থিতিশীল নাও থাকতে পারে। অর্থনীতি যখন চাঙা হবে, তখন বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হারের ওপর চাপ পড়বে। তখন আমাদের দৃষ্টি রাখতে হবে বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার যেন খুব বেশি অস্থিতিশীল হয়ে না পড়ে।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও