
অদ্ভুত এক চরিত্র ইলন মাস্ক
যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের পর সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তি কে? অনেকে বলবেন, নিশ্চয়ই ভাইস প্রেসিডেন্ট জে.ডি. ভ্যান্স। যারা এমনটি বলবেন, তাদের জন্য একটি পুরনো গল্প বলি।
প্রেসিডেন্ট আইজেনহাওয়ারের সময় তার ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন রিচার্ড নিক্সন। একবার এক সাংবাদিক প্রেসিডেন্টকে জিজ্ঞেস করলেন, “আমি জানি, আপনি সর্বেসর্বা, কিন্তু আপনার ভাইস প্রেসিডেন্টের কোনো পরামর্শ বা আইডিয়া কি আপনি কখনো গ্রহণ করেছেন?” আইজেনহাওয়ার কিছুক্ষণ ভেবে বললেন, “আমার তেমন কিছু মনে পড়ছে না। তবে তুমি যদি আমাকে এক সপ্তাহ সময় দাও, তাহলে ভেবে দেখব।”
এই ঘটনাটি হয়তো সত্য। আবার নিছক গল্পও হতে পারে। এটা বলার কারণ হলো, শুধু নিক্সন নন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় সব ভাইস প্রেসিডেন্টেরই একই দশা। বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট জে.ডি. ভ্যান্সও এর ব্যতিক্রম নন। যুক্তরাষ্ট্রে এটাই রীতি— প্রেসিডেন্ট তার ভাইস প্রেসিডেন্টকে খুব একটা গুরুত্ব দেন না।
তাহলে কি সেক্রেটারি অফ স্টেট মার্কো রুবিও দ্বিতীয় ক্ষমতাধর ব্যক্তি? না, ট্রাম্প তাকে ‘লিটল রুবিও’ বলে ডাকতেন এবং তাকে তেমন পাত্তা দেন না। আসলে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যাকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেন এবং তার দ্বিতীয় মেয়াদে যিনি সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তি, তিনি হলেন ইলন মাস্ক। তিনি শুধু ক্ষমতাধরই নন, ভীতিকরও। গত কয়েক মাসে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি কর্মচারীদের জীবন অসহনীয় করে তুলেছেন।
ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেওয়ার পরপরই ইলন মাস্ককে ‘ডিপার্টমেন্ট অব গভর্নমেন্ট এফিসিয়েন্সি’ বা সংক্ষেপে ‘ডজ’ (বাংলায় ‘সরকারি দক্ষতা অর্জন বিভাগ’)-এর দায়িত্ব দেওয়া হয়। এই বিভাগের কাজ হলো যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় সরকারের খরচ ব্যাপকভাবে কমিয়ে আনা। বর্তমানে ফেডারেল সরকার বছরে ৬.৭৫ ট্রিলিয়ন ডলার খরচ করে। মাস্ক মনে করেন, এই খরচ ২ ট্রিলিয়ন ডলার কমানো সম্ভব। এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ‘ডজ’-কে ২০২৬ সালের জুলাই পর্যন্ত সময় দিয়েছেন।
ইলন মাস্ক ও ট্রাম্প যৌথভাবে ঘোষণা করেছেন, তারা সরকারি অপচয় ও খরচ কমাতে বদ্ধপরিকর। এরই মধ্যে আয়কর বিভাগ, বিচার বিভাগ, ভেটারান্স অ্যাফেয়ার্সসহ বিভিন্ন বিভাগ থেকে হাজার হাজার কর্মচারীকে বরখাস্ত করা হয়েছে। এছাড়া ৭৭,০০০ ফেডারেল কর্মচারীকে ‘বাই আউট’ বা ক্ষতিপূরণ দিয়ে ছাঁটাই করা হয়েছে।
ট্রাম্প ও মাস্কের একটি বড় টার্গেট হলো ইউএসএআইডি, যার মারফত যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের দরিদ্র ও স্বল্পোন্নত দেশগুলোতে সাহায্য প্রদান করে। ট্রাম্প ইতিমধ্যে এই সংস্থা বন্ধ করার সংকল্প ঘোষণা করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের উদারপন্থীদের প্রিয় সংস্থাগুলো বেশি ক্ষতিগ্রস্থ; যেমন শিক্ষা বিভাগের গবেষণা অফিস, যারা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার দিয়ে গবেষণা প্রকল্পে সহায়তা করত, তা-ও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এমনকি চলমান প্রকল্পগুলোতেও নানাভাবে কাটছাঁট করা হয়েছে। ‘কনজিউমার ফিনান্সিয়াল প্রোটেকশন ব্যুরো’, যা সাধারণ মানুষকে লোভী কোম্পানির আগ্রাসন থেকে রক্ষা করত, তাদের কার্যক্রমও কমিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
মাস্ক শুধু কর্মচারী ছাঁটাইয়ে ক্ষ্যান্ত হননি। তার নেতৃত্বাধীন ‘ডজ’ ঘোষণা করেছে, তারা নতুন কর্মচারী নিয়োগ করবে, যারা হবেন ‘ছোট সরকার গঠনে অসাধারণ বিপ্লবী এবং প্রতি সপ্তাহে ৮০ ঘণ্টার বেশি কাজ করতে পারবেন’। সাধারণত, যুক্তরাষ্ট্রের শ্রম আইনে কর্মচারীদের সপ্তাহে ৪০ ঘণ্টা কাজ করার নিয়ম। ৮০ ঘণ্টা কাজ করানো শ্রম আইনের পরিপন্থী। কিন্তু ট্রাম্প-মাস্কের যুগে কে কাকে আইন শেখাবে?
ইলন মাস্কের ছাঁটাই কার্যক্রম নতুন কিছু নয়। ২০২২ সালে তিনি ৪৪ বিলিয়ন ডলারে সামাজিক যোগাযোগ প্ল্যাটফর্ম ‘টুইটার’ কিনে নেন। কেনার পর তার প্রথম ঘোষণা ছিল, তিনি এর ৮০ শতাংশ কর্মচারীকে ছাঁটাই করবেন। রাতারাতি টুইটারের ৫০ শতাংশ কর্মচারী চাকরি হারান। এতে সমগ্র প্রযুক্তি শিল্পে অস্থিরতা সৃষ্টি হয়। যদিও গুগল, অ্যাপল, অ্যামাজন, মেটার মতো কোম্পানিগুলো টুইটারের মেধাবী কর্মচারীদের নিয়ে নেয়, তবুও স্থিতিশীলতা ফিরতে সময় লেগেছিল। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো, টুইটারের শেয়ারের বাজারদরের দ্বিগুণ দাম দিয়ে মাস্ক এটি কিনেছিলেন। কারণ, তিনি টুইটারে তার এবং বন্ধু ট্রাম্পের বিরুদ্ধে চলা প্রচারণা বন্ধ করতে চেয়েছিলেন। পরে তিনি টুইটারের নাম বদলে ‘এক্স’ করেন।
- ট্যাগ:
- মতামত
- ক্ষমতাধর
- ইলোন মাস্ক