
আমাদের ড্রেনগুলো মরণ ফাঁদ কেন?
বাংলাদেশে ড্রেনে পড়ে মানুষের মৃত্যু মর্মান্তিক ও লজ্জাজনক বাস্তবতা। আধুনিক যুগে যখন প্রযুক্তি, অবকাঠামো ও নাগরিক সেবার উন্নতির কথা বলা হচ্ছে, তখন শহরের বুক চিরে বয়ে চলা উন্মুক্ত ও অব্যবস্থাপনায় ভরা ড্রেনগুলো যেন এক-একটি মৃত্যুকূপ হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতিদিনের জীবন সংগ্রামে মানুষ যখন রাস্তায় বের হয়, তখন সে কি জানে, ফিরে নাও আসতে পারে?
শিশু, বৃদ্ধ, নারী, এমনকি কর্মজীবী মানুষ, সবাই এই ঝুঁকির মুখোমুখি। বৃষ্টির সময় পানিতে তলিয়ে যাওয়া খোলা ম্যানহোল বা ড্রেন যেন মৃত্যু ফাঁদে পরিণত হয়। চোখের সামনে প্রিয়জন ড্রেনে তলিয়ে গেলে শুধু একজন নয়, ভেঙে পড়ে পুরো পরিবার, পুরো সমাজ।
এই মৃত্যু শুধু দুর্ঘটনা নয়, এটি দায়িত্বহীনতার ফসল। ঠিক, কত প্রাণ গেলে আমরা জাগব? একটিবার কি আমরা ভাবি, এই ড্রেন বন্ধ, নিরাপদ, সুরক্ষিত হলে প্রাণটা বাঁচতো? প্রয়োজন কঠোর নজরদারি, পরিকল্পিত নগর ব্যবস্থাপনা এবং মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি। মানুষের জীবনের মূল্য যেন আর কোনো খোলা ড্রেনের নিচে চাপা না পড়ে।
ড্রেনের অব্যবস্থাপনা:
ঢাকনা নেই বা নষ্ট ড্রেন কভার: অনেক ড্রেনের ওপর স্ল্যাব বা ঢাকনা থাকে না, আবার কোথাও সেটা ভাঙা বা সরিয়ে রাখা হয়। এতে মানুষ, বিশেষ করে শিশু ও পথচারী হঠাৎ পড়ে গিয়ে মারাত্মক আহত হয় বা মারা যায়।
অব্যবস্থাপনা ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাব: অনেক বছর ধরে ড্রেনগুলোর কোনো সংস্কার হয় না। নিয়মিত পরিষ্কার না করায় ড্রেন ব্লক হয়ে থাকে এবং দুর্ঘটনা আরও বাড়ে।
বৃষ্টি ও জলাবদ্ধতায় ড্রেন আচ্ছাদিত হয়ে যায়: ভারী বর্ষণে ড্রেনগুলোর অবস্থান বোঝা যায় না। ফলে মানুষ চলাচলের সময় হঠাৎ পড়ে গিয়ে ডুবে মারা যেতে পারে।
অপরিকল্পিত ড্রেন নকশা ও নির্মাণ: অনেক জায়গায় ড্রেন গভীর ও খোলা রেখে চলে যায়, কোনো রেলিং বা নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকে না। কোনো জায়গায় সড়কের সাথে ড্রেনের উচ্চতার পার্থক্য নেই, যা বিপজ্জনক।
ময়লা-আবর্জনায় ভরপুর: ড্রেনে প্লাস্টিক, পলিথিন, ময়লা ফেলে আটকে ফেলা হয়। এই আবর্জনার স্তূপে পা পিছলে পড়ে দুর্ঘটনা ঘটে।
প্রশাসনিক উদাসীনতা: স্থানীয় কর্তৃপক্ষ বা সিটি কর্পোরেশন অনেক সময় অভিযোগ পেয়েও ব্যবস্থা নেয় না। জননিরাপত্তার ব্যাপারে অবহেলা দেখা যায়।