ইসলামী রাজনীতি মানেই মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা নয়

জাগো নিউজ ২৪ বিভুরঞ্জন সরকার প্রকাশিত: ০৭ আগস্ট ২০২৫, ১৩:২২

কবি ও রাষ্ট্রচিন্তক ফরহাদ মজহার ১৯ জুলাই চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে এক মতবিনিময় সভায় জামায়াতে ইসলামীর প্রতি একটি অনন্য ও গভীর রাজনৈতিক অনুরোধ রেখেছেন। তিনি বলেন, জামায়াতে ইসলামী নামটি বহাল রাখা রাজনৈতিকভাবে অনুচিত এবং তা বাংলাদেশের স্বাধীনতার চেতনার পরিপন্থী। তাঁর এই বক্তব্য মূলত মুক্তিযুদ্ধ, ইসলামি রাজনীতি এবং তরুণ প্রজন্মের ভবিষ্যৎ চেতনা নিয়ে এক প্রাজ্ঞ বিশ্লেষণ। ফরহাদ মজহার স্পষ্টভাবে বলেন, জামায়াত দলটিকে তিনি পছন্দ করেন, ভালোবাসেন তাদের নেতাদের। কিন্তু তিনি এটাও মনে করেন, ১৯৭১ সালে দলটির অবস্থান যে বাংলাদেশের জন্মের বিরোধী ছিল, তা উপেক্ষা করা যাবে না। যেহেতু বাংলাদেশ একটি যুদ্ধ করে অর্জিত রাষ্ট্র, সেহেতু এর রাজনৈতিক অস্তিত্বের ভিত্তি মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধে গড়া। আর সেই মূল্যবোধের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে থাকা একটি দলের নাম, প্রতীক বা অতীত ভূমিকা যদি অপরিবর্তিত থাকে, তাহলে তাদের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক অবস্থানও প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ে।


তিনি বলেন, ‘বাহাত্তরের পরও আপনারা জামায়াতে ইসলামীর নাম ব্যবহার করেছেন—এটা অন্যায় হয়েছে।’ এই বাক্যে তিনি মূলত একটি ঐতিহাসিক দায়বদ্ধতার দিকে ইঙ্গিত করেন। ১৯৭১ সালে জামায়াতে ইসলামীর সরাসরি পাকিস্তানপন্থী অবস্থান, রাজাকার-আলবদরের সঙ্গে সম্পর্ক এবং মুক্তিযুদ্ধবিরোধী কর্মকাণ্ড বাংলাদেশের ইতিহাসে গুমরে থাকা এক তিক্ত স্মৃতি। স্বাধীনতা-উত্তর প্রজন্ম বারবার সেই ইতিহাসের সঙ্গে দলটির নাম, আচরণ এবং ভাবমূর্তিকে জুড়ে দেখে। এই কারণে ফরহাদ মজহার মনে করেন, জামায়াতে ইসলামী নামটি বাংলাদেশের রাজনৈতিক জনগোষ্ঠীর আত্মপরিচয়ের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।


তিনি আরও বলেন, আপনারা একসময় ডেমোক্রেটিক লীগ করেছিলেন, পরে আবার ফিরে এলেন জামায়াতে ইসলামী নামে—এটা কি আমাদের অপমান করার জন্য? এটি একটি কঠিন প্রশ্ন। এমন একটি প্রশ্ন যা শুধুই ক্ষোভের প্রকাশ নয়, বরং একটি বুদ্ধিবৃত্তিক বিশ্লেষণেরও উত্থান। একটি দল কীভাবে মুক্তিযুদ্ধবিরোধী ইতিহাস বহন করে আবার গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে চায়? তারা যদি সত্যিই চায়, তাহলে কেন নিজেদের ইতিহাসের পুনর্মূল্যায়ন করে এগোয় না? ফরহাদ মজহার বিশ্বাস করেন, ইতিহাসের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে হলে শুধু বক্তব্য নয়, বরং প্রতীক, নাম এবং রাজনৈতিক কাঠামোতেও পরিবর্তন আনতে হয়। সেই প্রেক্ষিতে নাম পরিবর্তনের অনুরোধ তিনি একটি নৈতিক, রাজনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক দায়িত্ব হিসেবেই দেখেন।


তিনি মনে করেন, যারা আজো জামায়াতে ইসলামীর নাম ব্যবহার করেন, তারা মূলত ১৯৭১ সালের বিরুদ্ধে অবস্থান বজায় রেখেছেন, যা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রতি অবমাননা। তিনি বলেন, এভাবে চলতে থাকলে, বারবার শেখ হাসিনাকেই ক্ষমতায় ফিরিয়ে আনা হবে, কারণ মুক্তিযুদ্ধের প্রতি মানুষের আনুগত্য আজো প্রবল। তিনি এই অবস্থাকে ব্যাখ্যা করেন এভাবে—আপনি যদি একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধকে ক্রমাগত অপমান করেন, তাহলে আপনি আবারো সেই ফ্যাসিস্ট শক্তিকেই প্রতিষ্ঠিত করবেন, যাকে আপনি হয়তো প্রতিদ্বন্দ্বী ভাবছেন। অর্থাৎ, মুক্তিযুদ্ধবিরোধী অবস্থান বাংলাদেশের রাজনীতিতে কখনোই সফল হতে পারে না। বরং তা ক্ষমতায় থাকা মুক্তিযুদ্ধপন্থী বা রাষ্ট্রবাদী গোষ্ঠীকেই বৈধতা দেয়, কারণ বিপরীতে দাঁড়িয়ে থাকা শক্তির যদি মুক্তিযুদ্ধবিরোধী ছাপ থাকে, তবে সাধারণ মানুষ সেই ইতিহাসের পক্ষে দাঁড়ায়।


এই প্রেক্ষাপটে তিনি মনে করেন, ২০২৫ সালের জুলাইয়ে গণ–অভ্যুত্থানের পর দেশের রাজনীতিতে যে নতুন গতিধারা তৈরি হয়েছে, সেটা একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনের সুযোগ এনে দিয়েছে। এই সময়টা হলো আত্মসমালোচনা ও পুনর্গঠনের শ্রেষ্ঠ সময়। দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর উচিত এই সুযোগ কাজে লাগানো। তিনি বলেন, ‘এখনো আপনাদের আমি বিনয়ের সঙ্গে বলি, হাতজোড় করে বলি, এটা খুব ভালো সময়—জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের পর আপনারা আপনাদের নামটা পরিবর্তন করেন।’

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও