
শিশুদের স্মার্টফোন ও স্ক্রিন আসক্তি কী ধরনের প্রভাব ফেলে?
আমরা কমবেশি সবাই আজকাল এমন দৃশ্য দেখছি, কিশোর-কিশোরীদের হাতে কোনো না কোনো প্রযুক্তি। তাদের মাথা নিচু, যেন স্ক্রিনের ভেতরের জগতেই ডুবে আছে। এমনকি ছোট ছোট শিশুরাও মোবাইল বা ট্যাব হাতে নিয়ে খাবার টেবিলে কিংবা গাড়িতে বসে স্ক্রিনে ব্যস্ত থাকে, কোথাও ঘুরতে গেলেও যেন সেটাই তাদের সময় কাটানোর প্রধান উপায়। স্ক্রিন আসক্তি (Screen Addiction) হলো, যখন একজন ব্যক্তি দিনের অনেকটা সময় স্ক্রিনের সামনে কাটান এবং তাছাড়া থাকতে অস্বস্তি বোধ করেন।
বর্তমানে শিশু ও কিশোরেরা শুধু পড়াশোনার জন্যই প্রযুক্তি ব্যবহার করছে না, বরং অবসর সময়ের বড় একটা অংশও কাটছে স্ক্রিনের সামনে। এই আসক্তির পেছনে বিভিন্ন কারণ রয়েছে। অনেক সময় শিশুরা অতিরিক্ত ফাঁকা সময় পায়, যা তারা মোবাইল, ট্যাব বা টেলিভিশনের মাধ্যমে পূরণ করে।
শহরাঞ্চলে খেলার মাঠের অভাব এবং বাইরের খেলাধুলার সুযোগ না থাকায় শিশুরা ঘরের মধ্যেই স্ক্রিনে আসক্ত হয়ে পড়ে। পাশাপাশি অভিভাবকদের ব্যস্ততার কারণে তারা অনেক সময় শিশুদের শান্ত রাখার জন্য ডিভাইস তুলে দেন, বর্তমানে শিশুদের খাবার খাওয়ানোর জন্য শিশুদের হাতে ডিভাইস তুলে দেওয়া হচ্ছে, যা একপর্যায়ে অভ্যাসে পরিণত হয়।
এছাড়া বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থায় অনলাইন ক্লাস, ডিজিটাল লার্নিং ও ইউটিউবের মতো প্ল্যাটফর্মের ব্যবহার বাড়ছে, যা শিক্ষার পাশাপাশি বিনোদনের মাধ্যমেও পরিণত হচ্ছে। প্রযুক্তির সহজলভ্যতা এবং বন্ধুবান্ধবের প্রভাবও শিশুদের স্ক্রিনমুখী করে তোলে। এইসব কারণে শিশুদের মধ্যে স্ক্রিনের প্রতি অতিরিক্ত নির্ভরতা গড়ে ওঠে, যা পরবর্তীতে মানসিক, শারীরিক ও সামাজিক বিকাশে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
স্মার্টফোন বা স্ক্রিন আসক্তি বিভিন্ন রকম আচরণ ও ব্যবহারিক প্রবণতার মাধ্যমে প্রকাশ পায়। এই আসক্তিগুলো বিভিন্ন শ্রেণিতে ভাগ করা যায়, যা ব্যক্তির মানসিক ও সামাজিক জীবনে ভিন্ন ভিন্ন প্রভাব ফেলে। স্ক্রিন-সংক্রান্ত আসক্তির কিছু সাধারণ প্রকার উল্লেখ করা হলো—
তথ্য খোঁজার প্রতি অতিরিক্ত আসক্তি: এই ধরনের আসক্তিতে আক্রান্ত শিশু-কিশোররা সবসময় নতুন তথ্য জানার জন্য উদগ্রীব থাকে, এমনকি সেই তথ্য তাদের জীবনের সাথে সরাসরি সম্পর্কিত না হলেও। আবার তথ্য খোঁজা না গেলেও দুশ্চিন্তা ও অস্থিরতা দেখা দিতে পারে।
তথ্য না থাকলেও শুধুমাত্র স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকা: অনেক সময় শিশুদের মধ্যে এমন প্রবণতা দেখা যায় যে, তারা স্ক্রিনে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বা প্রয়োজনীয় তথ্য না দেখলেও দীর্ঘসময় ধরে সেটার দিকে একভাবে তাকিয়ে থাকে। এটা একটা মানসিক অভ্যাসে পরিণত হয় যেখানে শুধু স্ক্রিনের আলো, চলমান ছবি বা রঙিন কনটেন্টই তাদের মনোযোগ ধরে রাখে।
কম্পিউটার বা গেম আসক্তি: এটি এমন একটি ধরন যেখানে শিশু বা কিশোর-কিশোরীরা অতিরিক্ত ও বাধ্যতামূলকভাবে কম্পিউটার ব্যবহার বা ভিডিও গেম খেলে থাকে। এই আসক্তি দীর্ঘ সময় ধরে চলতে পারে এবং এটি পড়াশোনা, কাজ, সম্পর্কসহ জীবনের নানা ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
ইন্টারনেট কমপালশন (Internet Compulsion) বা বাধ্যতামূলক অনলাইন ব্যবহার: এটি এমন এক ধরনের আচরণ যেখানে কিশোর-কিশোরীরা বারবার ও অপ্রতিরোধ্যভাবে অনলাইনে নির্দিষ্ট কার্যকলাপে জড়িয়ে পড়ে। যেমন অনলাইন নিলাম, শেয়ার মার্কেটে ট্রেডিং কিংবা জুয়ার আসক্তিতে থাকে। এই আচরণগুলো নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়ে।