
অন্তর্বর্তী সরকারের ছয় মাস : আমরা কিছুটা মন খুলে কথা বলতে পারছি
নতুন সরকার আসার পর নব্বই দিন, একশ দিন বা ছয় মাসের কার্যক্রম মূল্যায়নের একটি রীতি গড়ে উঠেছে গণমাধ্যমে। তবে আমাদের মতো তৃতীয় বিশ্বের দেশে, সমস্যাসংকুল দেশে ও রাজনৈতিক অস্থিরতার দেশে ছয় মাস সময়ের মধ্যে বড় কিছু অর্জন করে ফেলা হবে, তা ভাবা বাস্তবসম্মত নয়। তবে সরকারের উদ্দেশ্য সঠিক আছে কিনা তা দেখতে হবে। সরকারের উদ্দেশ্য যদি ভালো হয় তাহলে আমরা ভালো বলব। শুধু উদ্দেশ্যই যথেষ্ট নয়। সরকারের উদ্দেশ্যের সঙ্গে আরেকটি বিষয় খুবই গুরুত্বপূর্ণ, সেটি হলো তা বাস্তবায়নের জন্য সুষ্ঠু নীতিমালা ও প্রশাসনিক পদক্ষেপ দরকার হয়। সেই বিচারে ছয় মাসে এ সরকার বিশাল কিছু অর্জন করেছে সেটি বলা যাবে না।
তবে এ সরকারের অর্জনের মধ্যে রয়েছে আমরা কিছুটা মন খুলে কথা বলতে পারছি। বিগত সময়ে আমরা লেখালেখি করেছি, কথাও বলেছি। কিন্তু সেই সময় আমাদের প্রত্যেকটি বাক্য বা কথা খুব হিসাব করে লিখতে হয়েছে এবং বলতে হয়েছে। বলা যায়, আমরা এক ধরনের সেলফ সেন্সরশিপের মধ্যে ছিলাম। কোনো লেখা লিখে কেউ ঝামেলার মধ্যে পড়েনি তা বলা যাবে না। সাংবাদিক কিংবা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকরা সমস্যায় পড়েছেন। কাজেই সেই অর্থে বিগত সময়ে বাকস্বাধীনতা বা মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ছিল না। এসব স্বাধীনতা ছিল না বলেই বিগত সরকারকে ফ্যাসিস্ট সরকার বলা হয়। শুধু বাকস্বাধীনতা রুদ্ধ করা নয়, এর সঙ্গে গ্রেফতার, জেল, জুলুম, গুম, খুন, বিচারবহির্ভূত হত্যাসহ সব মিলিয়ে বিভিন্ন ঘটনা ঘটেছে। এ সরকারের সময়ে আমরা পরিতৃপ্ত যে আগের মতো আর ত্রাসের মধ্যে নেই। আগে রাষ্ট্রের নিরাপত্তা বাহিনী যেকোনো সময় যে কাউকে কারো বাসস্থান কিংবা অন্য কোনো স্থান থেকে তুলে নিয়ে যেত। তুলে নিয়ে যাওয়ার পর তার কোনো হদিস থাকবে না কিংবা পরিবার জানবে না—এ ধরনের ঘটনাগুলো বর্তমানে আর নেই। নিরাপত্তা বাহিনী দ্বারা অপহরণ বা গুমের আতঙ্ক আপাতত কমে এসেছে। বলা যায়, এক্ষেত্রে এ সরকারের অর্জন ভালো।
- ট্যাগ:
- মতামত
- মতপ্রকাশের স্বাধীনতা