বিপ্লবীদের বাদানুবাদ ও প্রতিবিপ্লবীদের উচ্ছ্বাস
জুলাই বিপ্লবের নেতৃত্বদানকারী কিছু সমন্বয়ক ও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কতক উপদেষ্টা এবং কিছু রাজনৈতিক দলের নেতাদের (বিশেষ করে বিএনপির) সঙ্গে বাগবিতণ্ডা ইদানীং রাজনৈতিক মাঠে বেশ আগুন ছড়াচ্ছে। এ আগুন দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতায় অস্থিরতা ও উত্তাপ ছড়ালেও নিয়ন্ত্রণের বাইরে এখনো যায়নি। তাই অতিসত্বর এ আগুন নির্বাপণ না করলে লস অ্যাঞ্জেলেসের মতো সংস্কার, উন্নয়ন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, নতুন বন্দোবস্ত, নির্বাচন ধুলায় মিটে যাবে। সেই সঙ্গে গণতন্ত্র ও দেশের মানুষের স্বপ্ন সব পুড়ে ছাই হয়ে যাবে।
তাই যারাই জুলাই বিপ্লবের পক্ষে ছিলেন, তাদের সবারই উচিত (এবং যারা বিদেশে আছেন) সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে যাতে এ আগুন অতিদ্রুত নেভানো যায়। নচেৎ বিপ্লবের সমর্থনকারীরাও মরবেন, দেশকেও মারবেন। পাশাপাশি দীর্ঘ ১৬ বছরে যারা শহিদ হয়েছেন, পঙ্গু হয়েছেন, দৃষ্টিহীন হয়েছেন, তাদের বলিদান বৃথা হয়ে যাবে।
দেশি-বিদেশি শকুনিরা হাঁ করে বসে আছে কখন এ বিভেদ জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের অংশীজনদের সমঝোতায় ফাটল ধরাবে আর তারা ঝাঁপিয়ে পড়বে। এটা নিশ্চিত, তখন তারা আপনাদের খুবলে খুবলে খাবে, কচুকাটা করবে বা জীবন্ত কবর দেবে। আপনাদের জীবন্ত কবর দেওয়া বা কুচি কুচি কাটার উৎসবে আজকে যারা বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বাহিনীতে আপনাদেরই মদদে নিশ্চিন্তে ষড়যন্ত্র করছেন এবং আপনাদের বিভেদে আনন্দের ঢেঁকুর গিলছেন, তারাই পরমানন্দে সে উৎসবে যোগ দেবেন।
আপনাদের সব্বাইকে পুড়িয়ে বা বুড়িগঙ্গায় ডুবিয়ে মারার চিত্র অবিশ্বাস্য মনে হলেও (যেমনটা কোনো কোনো দল অতীতে মনে করেছিল ফ্যাসিস্টদের সঙ্গে যোগ দিলে তাদের নেতাদের ফাঁসি হবে না) এটাই সত্যি হতে পারে। হতে পারা নয়, হবেই। নিকট ইতিহাস তারই প্রমাণ দেয়। তাই ‘সাধু সাবধান’। আপনাদের বিভাজনের সুযোগ নিয়ে বিগত কিছুদিন কোনো আলামতই কি দেখতে পাচ্ছেন না? ভাববেন না এগুলো একসূত্রে গাঁথা নয়।
ঘুম যদি ভেঙে থাকে, তবে এখনই শুদ্ধি অভিযান শুরু করুন উপদেষ্টামণ্ডলীতে, মন্ত্রণালয়ে, দপ্তরে, বিভিন্ন বাহিনীতে। নিজেদের কবর নিজেরা খুঁড়তে না চাইলে এখনই জরুরি ভিত্তিতে। এর কোনোই বিকল্প নেই। যতই দিন যাবে, ততই কঠিন হয়ে পড়বে। নির্বাচন হলে তখন শুদ্ধি অভিযান করবেন ভাবছেন? ততদিনে অনেক দেরি হয়ে যাবে। শিকড় অনেক গভীরে চলে যাবে। কথায় আছে, ‘দুষ্ট গরুর চেয়ে শূন্য গোয়াল ভালো’। এখনই গোয়ালঘর পরিষ্কারের কোনো বিকল্প নেই। বলিষ্ঠ (robust) পরিকল্পনা করুন, পরিকল্পনার উদ্দেশ্য ও আদর্শ সবাইকে অবহিত করুন। জুলাই বিপ্লবের সব অংশীকে সঙ্গে নিয়ে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করুন।
অন্তর্বর্তী সরকার আজ ক্ষমতায়, তাই তাদেরই দায়িত্ব সিন্ডিকেট ভাঙা এবং ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করা। দায়িত্ব তাদেরই। এখন তারা কীভাবে সমস্যাগুলোর সমাধান করবেন তার দায়িত্ব তাদেরই। পরিকল্পনা প্রণয়ন, বাস্তবায়ন এবং জবাবদিহিতা তাদেরই দায়িত্ব। তাদেরই সিদ্ধান্ত নিতে হবে-যারা বিপ্লব সমর্থন করেছে, তাদের সঙ্গে মিলে পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করবে, না একাকী নিজেরাই করবে? এটা অন্তর্বর্তী সরকারের সিদ্ধান্ত। কিন্তু পাশাপাশি এর দায়-দায়িত্বও তাদের।
- ট্যাগ:
- মতামত
- বিপ্লব
- রাজনীতিতে নতুন দল
- প্রতিবিপ্লব