কীটনাশকের নির্বিচার ব্যবহার ঠেকাতে পদক্ষেপ কোথায়
পৃথিবীর সঠিক রক্ষণাবেক্ষণের জন্য আমাদের শুধু বৈজ্ঞানিক বিষয়গুলো বোঝাই প্রয়োজনীয় নয়, আমাদের নৈতিক অধঃপতন, নির্বুদ্ধিতা ও অদূরদর্শিতাও বোঝা প্রয়োজন। ম্যালেরিয়া ও টাইফয়েড নিয়ন্ত্রণে জাতিসংঘ, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ পঞ্চাশের দশকে যখন দায়িত্বপ্রাপ্তরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে ডিডিটি ব্যবহারের জন্য মানুষকে উদ্বুদ্ধ করত, তখন মানুষ বুঝত না এ রাসায়নিক ধরিত্রীর জন্য আশীর্বাদ না অভিশাপ। ১৯৪৮ সালে ডিডিটির আবিষ্কারক পল হ্যারম্যান মুলারকে দেয়া হয় নোবেল পুরস্কার। মনে করা হতো, এ আবিষ্কার মানুষের জন্য এক আশীর্বাদ। কিন্তু অল্প দিনের মধ্যেই এর বিরূপ প্রভাব লক্ষ করা যায়। তবে এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের অনেক বড় বড় কোম্পানি ডিডিটিসহ অন্যান্য কীটনাশক তৈরি ও বিক্রি করে অঢেল অর্থের মালিক বনে যান। এমনই এক সন্ধিক্ষণে র্যাচেল লুইস কার্সন নামে এক মেরিন বায়োলজিস্ট স্রোতের বিপরীতে গিয়ে ‘সাইলেন্ট স্প্রিং’-এর এক চরম বাস্তব গবেষণালব্ধ বই প্রকাশ করে সারা পৃথিবীতে আলোড়ন সৃষ্টি করেন। এই মহীয়সী লেখিকা ১৯০৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়ায় জন্ম গ্রহণ করেন।
পারিবারিক ছোট্ট একটি খামারে বেড়ে ওঠা এ নারী শুরু থেকেই প্রকৃতি আর জীবজগৎকে আপন করে নিয়েছিলেন। তাই তো পরিণত বয়সে চ্যাটহ্যাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্র্যাজুয়েশন শেষ করে জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাছের রেচনতন্ত্রের ওপর মাস্টার্স শেষ করেন। প্রকৃতিপ্রেমী কার্সন নিজেকে যুক্তরাষ্ট্রের মৎস্য ব্যুরোর সম্প্রচারিত ‘রোমান্স আন্ডার দ্য ওয়াটার’ নামক অনুষ্ঠানে পাণ্ডুলিপি লেখার দায়িত্বে নিয়োজিত করেন। এ কথাগুলো এই কারণে বলছি যে তিনি যুক্তরাষ্ট্রবাসীকে মেরিন বায়োলজি বিষয়ে চমৎকারভাবে সম্যক জ্ঞান বিতরণে কতটা তৎপর ছিলেন। ১৯৫৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রে ডিডিটির সঙ্গে আরো কিছু কীটনাশক ও জীবাশ্ম জ্বালানি মিশিয়ে স্প্রে করার কারণে পেনসিলভানিয়ার বাসিন্দারা প্রতিবাদ করেছিল, এমনকি চরম স্বাস্থ্যঝুঁকির জন্য আইনের আশ্রয়ও নিয়েছিল।
- ট্যাগ:
- মতামত
- কীটনাশক
- কীটনাশকের ব্যবহার