বাড়ি নিয়ে রাজনীতিবিদদের বাড়াবাড়ি-কাড়াকাড়ি
থাকার জন্য একটা বাড়ি সবারই দরকার। কিছু লোক গৃহহীন, এদের সামর্থ্য নেই বাড়ি কেনার। এরা কেউ থাকেন কোনো বস্তিতে। কেউ কেউ সংসার গড়েন রাস্তার পাশে। কেউবা আবার রাত কাটান রেল স্টেশনে। কিছু মানুষ একটা বাড়ি জোগাড় করে নেন, নিজের বা পরিবারের জন্য। কারও থাকে সুরম্য অট্টালিকা, কারও মানানসই বিল্ডিং, কারও অ্যাপার্টমেন্ট, কেউ আবার টিনের ঘর বা ছনের ছাউনিতেই সন্তুষ্ট। যারা সরকারি কর্মকর্তা তারা থাকেন সরকারের দেয়া সুরম্য ভবনে। আবার কেউ কেউ ভাড়া বাড়িতেই জীবনটা কাটিয়ে দিতে বাধ্য হন। মোটামুটি সৃষ্টিকর্তা ধনী-দরিদ্র সবার জন্য একটা ব্যবস্থা করে দিয়েছেন থাকার।
কিন্তু রাজনীতিবিদদের কী হবে? তারা ক্ষমতার বাইরে গেলে থাকবেন কোথায়? তাদের এত সময় কোথায় জায়গা-জমি কিনে বাড়ি করার? আর তারা তো কোনো চাকরি-বাকরি করেন না, সবাই দেশের কাজেই ব্যস্ত। অর্থই বা পাবেন কোথায় বাড়ি করার কিংবা অ্যাপার্টমেন্ট কেনার? সৃষ্টিকর্তা তাদের জন্যও একটা ব্যবস্থা করে দিয়েছেন, যার যেমন দরকার। এই ব্যবস্থাগুলো খুবই চমকপ্রদ— সাধারণ মানুষ যারা নিজেরা নিজেদের কষ্টার্জিত অর্থ সঞ্চয় করে একটা বাড়ি বানান বা ফ্ল্যাট কেনেন, ঠিক তাদের মতো নয়। এগুলো চমকপ্রদ এই জন্য যে, প্রতিটা ক্ষেত্রেই বিষয়টা আলাদা ও অভিনব। সাধারণত রাজনীতিবিদরা চান, এগুলো যেন বাইরে প্রকাশ না পায়। কিছু কিছু প্রকাশ না করে উপায় থাকে না, আবার অনেকগুলো ধামাচাপা থাকে অনেকদিন। কিন্তু রাজনীতিবিদদের পেছনে লেগেই থাকে সংবাদপত্রের লোকগুলো। ওদেরইবা দোষ কোথায়? সংবাদ না থাকলে পত্রিকা চলবে কীভাবে? সুতরাং রাজনীতিবিদদের বাড়ি নিয়ে কাড়াকাড়ি বা বাড়াবাড়ির খবরগুলো শেষপর্যন্ত আর চাপা থাকে না।
বাংলাদেশে শেখ হাসিনার শাসনামলে অর্থনৈতিক অনাচার এবং ব্যাংকে জনগণের সঞ্চিত অর্থ নিয়ে যে লুটপাট হয়েছে, তা তিনি ক্ষমতায় থাকতেই দেশে না হলেও বিদেশি সংবাদমাধ্যমে অনেকভাবে প্রকাশ পেয়েছে। পরিবারে একজনের সংক্রামক রোগ হলে, অন্যদের মাঝেও তা ছড়িয়ে পড়ে। শেখ হাসিনার ক্ষেত্রেও তাই হলো, এই অর্থনৈতিক অনিয়ম তার প্রজন্ম এবং তাদের পরবর্তী প্রজন্মকেও সংক্রমিত করেছে।
টিউলিপ সিদ্দিক
সংক্রামক রোগ কোনো ভৌগোলিক সীমা মানে না। এই ক্ষেত্রেও তা হলো, আক্রান্ত হলেন পরিবারের একজন ব্রিটিশ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের দৌহিত্রী, শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানার মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিক। এই সংক্রমণটা খুবই দুর্ভাগ্যের।
৪৩ বছরের টিউলিপ ব্রিটিশ সরকারের আর্থিক সেবাবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী, এই ইকোনোমিক সেক্রেটারি টু দ্য ট্রেজারির একটা বড় দায়িত্ব দেশ থেকে অর্থনৈতিক দুর্নীতি নির্মূল করা। বাংলাদেশিরা তাকে নিয়ে গর্ব করতে পারত, গর্ব করত। সেই গর্ব ক্ষুণ্ন হয়েছে টিউলিপ নিজে মন্ত্রী হবার পর তার বিরুদ্ধে একের পর এক দুর্নীতির অভিযোগ আসায়। অবশ্য আগেও যে আপামর বাংলাদেশি তাকে নিয়ে গর্ব করত এমন নয়, বাংলাদেশের দ্বিদলীয় রাজনীতি, ব্রিটেন প্রবাসীদেরও দ্বিধাবিভক্ত করে রেখেছে, তাই জিয়া পরিবারের যারা সমর্থক তারা শেখ পরিবারের কাউকে নিয়ে গর্ব করতে যাবেন কেন? এখন বরং শেখ পরিবার বিরোধীরা টিউলিপের দুরবস্থায় উল্লসিত হচ্ছেন বলে ধারণা করা যায়।
প্রথমে শুরু হয়েছিল খুব ছোট একটা অভিযোগ দিয়ে। অগাস্ট মাসে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ডেইলি মেইলের এক প্রতিবেদনে উঠে আসে, টিউলিপ নিজের উত্তর লন্ডনের অ্যাপার্টমেন্টটা ভাড়া দিয়ে, মাত্র কয় মাইল দূরে অবস্থিত এক ধনী ব্যবসায়ীর দেওয়া পাঁচ রুমের একটা বাড়িতে বিনা ভাড়ায় থাকছেন। এই দুই মিলিয়ন পাউন্ডের বাড়িটার মালিকের নাম আব্দুল করিম, যিনি টিউলিপের খালা শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকাকালে তার কাছ থেকে নানান সুযোগ-সুবিধা পেয়েছেন। আবার তিনি তার বাড়ি ভাড়ার অর্থ প্রাপ্তির কথা ব্রিটিশ সরকারকে জানাননি। পার্লামেন্টারি কমিটির কাছে ক্ষমা চেয়ে, এই ব্যাপারটা টিউলিপ কিছুটা ধামাচাপা দিতে সক্ষম হয়েছিলেন। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ার স্টারমার তাকে রক্ষা করেন এই বলে, এটা টিউলিপের একটা হিসেবের ভুল, এই জিনিসটা আগেই সরকারকে জানানো উচিত ছিল।
এরপর বিভিন্ন সূত্র থেকে অভিযোগ আসলো, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের জন্য ২০১৩ সালে তিনি রাশিয়ার সঙ্গে মধ্যস্থতা করেছিলেন। বাজারদরের চেয়ে বেশি খরচের ওই চুক্তির মধ্য দিয়ে তিনি ৩ দশমিক ৯ বিলিয়ন পাউন্ড (প্রায় ৫৭ হাজার কোটি টাকা) ‘আত্মসাৎ’ করেছেন।