শিক্ষা কমিশন ছাড়াই উচ্চশিক্ষায় যেসব পরিবর্তন সম্ভব

প্রথম আলো ড. নাদিম মাহমুদ প্রকাশিত: ২০ ডিসেম্বর ২০২৪, ২২:১৬

আমি যখন জাপানে পিএইচডি করতে গিয়েছিলাম, সেখানে কিছু অভিজ্ঞতা আমাকে বেশ ভাবিয়ে তুলেছিল। আমি সেখানে বিভিন্ন কনফারেন্সে গিয়ে দেখেছি, স্কুলের বাচ্চারা আমাদের পাশেই পোস্টার প্রেজেন্টেশন দিচ্ছে। তাদের জন্য আলাদা সেশন রাখা হয়েছে, যেখানে তারা গবেষণা উপস্থাপন করতে পারে এবং অগ্রসরমাণ বিজ্ঞানের সঙ্গে পরিচিত হতে পারে।


এর মাধ্যমে দুটি বিষয়ের সমন্বয় ঘটে—একদিকে তারা বাঘা বাঘা বিজ্ঞানীর সঙ্গে পরিচিত হচ্ছে, অন্যদিকে তাদের সুপ্ত গবেষণার আকাঙ্ক্ষার বিকাশ ঘটছে। পাশাপাশি তারা ছোট বয়সেই আন্তর্জাতিক কিংবা স্থানীয় প্ল্যাটফর্মে জায়গা করে নিচ্ছে। ফলে তারা পাঠ্যপুস্তকের জ্ঞানের পাশাপাশি গবেষণার ক্ষেত্রেও সমৃদ্ধ হচ্ছে।

স্কুল-কলেজের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘সেতুবন্ধ’


আমাদের দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় সনদ প্রদান ছাড়াও শিক্ষার্থীদের গবেষণার সঙ্গে সম্পৃক্ত করার বিষয়টি গুরুত্ব পাওয়া উচিত। আমার স্পষ্ট মনে আছে, এইচএসসি পাস করার আগে আমি জানতামই না বিশ্ববিদ্যালয়ে কী কী বিষয় রয়েছে এবং কোন বিষয়গুলো গুরুত্বপূর্ণ। বাবা–মায়েরা সন্তানদের শুধু চিকিৎসক বা প্রকৌশলী হওয়ার গল্প শোনান, যা শিক্ষার সঠিক দিকনির্দেশনা নয়।


উন্নত বিশ্বের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষাকাঠামোই সাজানো হয় স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে নিয়ে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ভর্তির আগেই সেখানে ওপেন সেশনের আয়োজন করে। বিভাগগুলো ছোট ছোট স্টল করে রাখে, যাতে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণে ইচ্ছুক শিক্ষার্থীরা এসে তথ্য জানতে পারে, বিভাগগুলোর গবেষণার বিষয়গুলো জানতে পারে, আকৃষ্ট হওয়ার বিষয়গুলো নিয়ে ভাবতে পারে এবং সেটা স্কুল বা কলেজ পার হওয়ার আগেই। এর ফলে কোন বিষয়গুলোয় তাদের আগ্রহ তৈরি হচ্ছে, তা নিয়ে একটি স্বচ্ছ ধারাণা তৈরি হয়।


স্কুল-কলেজের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে ‘সেতুবন্ধ’ তৈরি করতে হলে একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভাগগুলোয় সফরের ব্যবস্থা করতে হবে। সেটা একাডেমিক সিলেবাসেই অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর গ্রীষ্মকালীন ছুটিতে এসব সফর হতে পারে। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্যেক শিক্ষকের বছরে তিন থেকে চার মাস ক্লাস স্কুল ও কলেজের শিক্ষার্থীদের জন্য বরাদ্দ করা উচিত।



সিলেবাসের ধারাবাহিকতায় এসব হতে পারে অথবা শিক্ষকদের গবেষণা বা বিশেষায়িত বিষয়গুলোর মধ্য থেকে হতে পারে। কারণ, আমাদের দেশের স্নাতক প্রথম বর্ষের অনেক কিছুই একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণিতে সংক্ষিপ্তাকারে থাকে। এর ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে স্থানীয় কলেজ বা স্কুলগুলোর সঙ্গে একধরনের সম্পর্ক তৈরি হবে, তেমনি স্কুল বা কলেজের শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠবিষয়ক সম্যক ধারণা পাবে; শিক্ষকদের শিক্ষা ও গবেষণার বিষয়ে ধারণা পাবে। এতে শিক্ষার্থীরা উচ্চশিক্ষার প্রতি আগ্রহী হবে এবং শিক্ষকদের গবেষণা বা বিশেষায়িত বিষয়ে ধারণা পাবে।


বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগপদ্ধতি


বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিন্ন শিক্ষক নিয়োগপদ্ধতির পরিবর্তন নিয়ে বিভিন্ন সময় পত্রপত্রিকায় লেখা হয়েছে। বর্তমান নিয়োগপদ্ধতির নেতিবাচক ধারাগুলোর পরিবর্তন না হলে দেশে উচ্চশিক্ষার উন্নয়ন কখনোই সম্ভব নয়। ২০১৮ সালে ২২ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের নিয়োগ ও পদোন্নতি অভিন্ন নীতিমালা করেছিল, সেখানে প্রার্থীদের এইচএসসি ও এসএসসিতে জিপিএ–৫ স্কেলে ৪.৫ থাকতে হবে বলা হয়েছিল।


ধারাটি বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে শিক্ষক নিয়োগের জন্য মানানসই নয়। যেখানে একজন শিক্ষার্থী এসএসসি ও এইচএসসি বা সমমানের পরীক্ষার নির্দিষ্ট জিপিএ পেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা অংশ নেন এবং উত্তীর্ণ হয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষ করেন, সেখানে আগের ফলাফলকে টেনে আনা কোনোভাবেই যৌক্তিক নয়। এর ফলে কোনো শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে সিজিপিএ ৪ স্কেলে ৩.৯ পেয়েও শিক্ষক হতে পারবেন না কেবল এইচএসসি ও এসএসসিতে কম জিপিএ থাকার কারণে। অগ্রসরমাণ পৃথিবীতে এ ধরনের নিয়োগ–যোগ্যতা বাস্তবসম্মত নয়। এ পদ্ধতির পরিবর্তন হওয়া খুবই জরুরি।
অন্যদিকে সারা বিশ্বে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষক হওয়ার নূ্যনতম যোগ্যতা হিসেবে যেখানে পিএইচডি ডিগ্রি থাকাকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়, সেখানে আমাদের দেশে এই ডিগ্রিকে কেবল ‘অতিরিক্ত যোগ্যতা’ হিসেবে কাউন্ট করে আসছে দশকের পর দশক। সবচেয়ে মজার বিষয় হলো, একাডেমিকভাবে পিএইচডি, ভালো গবেষণা, পেটেন্ট থাকলেও সরাসরি সহকারী, সহযোগী কিংবা অধ্যাপক পদে নিয়োগ পাওয়া যায় না। কারণ, বিশ্ববিদ্যালয়ে সক্রিয়ভাবে শিক্ষকতার পূর্বাভিজ্ঞতা না থাকলে এসব পদে নিয়োগ দেওয়া হয় না। এটাও খুবই অযৌক্তিক ও অবাস্তব সিদ্ধান্ত।


বিষয়টি এমন যে দুই সহপাঠী একই বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর শেষ করে একজন পিএইচডি করতে গিয়ে চার থেকে পাঁচ বছর পার করলেন, আর অপর বন্ধু স্নাতকোত্তর পাস করেই প্রভাষক পদে নিয়োগ পেলেন। পাঁচ বছর পর প্রথমজন সহকারী অধ্যাপক হলেও পিএইচডি ডিগ্রিধারী দ্বিতীয়জন নিয়োগ পাবেন প্রভাষক হিসেবে; তিনি সহকারী অধ্যাপক হওয়ার দৌড়ে পিছিয়ে গেলেন।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও