ঢালাওভাবে অ্যাক্রেডিটেশন কার্ড বাতিলের যৌক্তিকতা কতটুকু?

প্রথম আলো ড. নাদিম মাহমুদ প্রকাশিত: ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ২২:৫৩

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর গণমাধ্যমগুলোকে স্বাধীনতা নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে। এরই মধ্যে গণমাধ্যম সংস্কারবিষয়ক একটি কমিশনও গঠন করা হয়েছে।


সরকারের গণমাধ্যমের প্রতি আন্তরিকতা সংবাদমাধ্যমগুলোকে আরও বেশি দায়িত্বশীল ও বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশনে অনুপ্রাণিত করছে, যার নমুনা আমরা দেখছি। প্রায় প্রতিদিনই আমাদের গণমাধ্যমগুলো বিশেষ বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশ করার সাহস দেখাচ্ছে। আগের সরকারে যে সংবাদটি প্রকাশ করতে ভাবতে হতো, এখন তা ভাবতে হচ্ছে না। বিপ্লব-পরবর্তী রাষ্ট্র বিনির্মাণে সংবাদপত্রের সঙ্গে সরকারের এই মেলবন্ধন সত্যিই প্রয়োজন ছিল।


আমরা যখন সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নিয়ে কথা বলছি, তখন সরকারের ভেতর এক অদ্ভুত শক্তি গত তিন দফায় মোট ১৬৭ জন সাংবাদিকের অ্যাক্রেডিটেশন কার্ড বাতিল করেছে। এ তিন তালিকায় চোখ বোলালে দেখা যাচ্ছে, এসব সাংবাদিকদের সিংহভাগই সক্রিয় সাংবাদিকতায় জড়িত। পত্রিকার সম্পাদক থেকে শুরু করে সাংবাদিকদের ঢালাও ছাঁটাই সংবাদপত্রের স্বাধীনতাকে শুধু খর্ব করছে না, এটি একটি খারাপ নজিরও স্থাপন করতে যাচ্ছে, যা নিয়ে ইতিমধ্যে কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্ট (সিপিজে) এবং বাংলাদেশের সংবাদপত্রের সম্পাদকদের সংগঠন ‘সম্পাদক পরিষদ’ প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে।


এখন প্রশ্ন হলো, সরকার এই তিন মাসের মেয়াদের মধ্যে সাংবাদিকদের অ্যাক্রেডিটেশন কার্ড বাতিলের জন্য উঠেপড়ে লাগল কেন? অ্যাক্রেডিটেশন কার্ড বাতিল হলেও কি সংবাদপত্রে স্বাধীনতার পুনর্জন্ম হবে? নাকি বিতর্ক তৈরি করে সরকার নিজেই বিব্রতবোধ করবে?


আপাতদৃষ্টে বাতিল হওয়া অ্যাক্রেডিটেশন কার্ড মালিকদের দিকে তাকালে দেখা যাচ্ছে, তাঁদের মধ্যে একটি অংশ বিদায়ী সরকারের আশীর্বাদপুষ্ট ছিলেন। অনেকেই শেখ হাসিনা সরকারের তাঁবেদারি করতে গিয়ে সাংবাদিকতাকে ভূলুণ্ঠিত করেছে। অনেকেই প্রধানমন্ত্রী দপ্তরের সংবাদ সংগ্রহের জন্য হাউসগুলো থেকে নিয়োজিত। কেবল আওয়ামী লীগ বিটের সংবাদ পরিবেশনের অপরাধে কারও অ্যাক্রেডিটেশন কার্ড বাতিল যেমন গ্রহণযোগ্য নয়, তবে সংবাদপত্রের সম্পাদকদের রাজনৈতিক মতাদর্শের জন্য অ্যাক্রেডিটেশন কার্ড বলি দেওয়া সংগত মনে হচ্ছে না।



সরকার যে যুক্তিতে অ্যাক্রেডিটেশন কার্ড বাতিল করেছে, সেই যুক্তিগুলোর দিকে নজর দিলে দেখা যাচ্ছে, অ্যাক্রেডিটেশন কার্ড বাতিলে প্রেস অ্যাক্রেডিটেশনের নীতিমালা ২০২২ চেয়ে পতিত শেখ হাসিনা সরকারপন্থী সাংবাদিকদের তালিকাকে সামনে রাখা হয়েছে, যাঁরা অতীতে সরকারপন্থী সাংবাদিকদের সংগঠনের নেতৃত্ব দিয়েছে, সদস্য ছিল।


তথ্য অধিদপ্তর (পিআইডি) অ্যাক্রেডিটেশনের নীতিমালা ২০২২-এর অনুচ্ছেদ ৬.৯, ৬.১০, ৯.৫ এবং ৯.৬ ধারার আলোকে স্থায়ী ও অস্থায়ী সাংবাদিকদের অ্যাক্রেডিটেশন কার্ড বাতিলের কথা বলেছে। কার ক্ষেত্রে ঠিক কোন ধারাগুলোর আওতায় পড়েছে, তা সেই চিঠিতে স্পষ্ট না হলেও পাঠকদের সুবিধার্থে এই ধারাগুলো নিয়ে আলোচনা করা প্রয়োজন।  


নীতিমালার প্রেস অ্যাক্রেডিটেশন কার্ড ইস্যুর সাধারণ শর্তাদির ৬.৯ অনুচ্ছেদ বলা হচ্ছে,  প্রেস অ্যাক্রেডিটেশন কার্ডধারী সাংবাদিকেরা রাষ্ট্রীয় কোনো আইন, বিধি বা নীতিমালা লঙ্ঘন করলে প্রেস অ্যাক্রেডিটেশন কমিটি সংশ্লিষ্ট সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে প্রচলিত আইন, বিধিবিধান ও নীতিমালা অনুসারে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবে। তবে গুরুতর লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে প্রধান তথ্য অফিসার তাৎক্ষণিকভাবে অভিযুক্ত সাংবাদিকের প্রেস অ্যাক্রেডিটেশন কার্ড বাতিল করতে পারবেন। এ ক্ষেত্রে পরে প্রেস অ্যাক্রেডিটেশন কমিটির সভায় তা উপস্থাপন করতে হবে।


অর্থাৎ এই ধারায় অ্যাক্রেডিটেশন কার্ড বাতিল হওয়া দেড় শতাধিক সাংবাদিক রাষ্ট্রীয় ঠিক কোন আইন বা নীতিমালা ভঙ্গ করলেন, তা বলা হয়নি। রাষ্ট্রীয় আইন যদি তাঁরা সত্যি সত্যি ভঙ্গ করেন, তাহলে তাঁরা কীভাবে এখনো সক্রিয় সাংবাদিকতা করে যাচ্ছেন, প্রতিদিন সংবাদ সংগ্রহ করছেন এবং তা পত্রিকায় পরিবেশন করছেন? ধরলাম, তাঁরা কোনো আইনের ব্যত্যয় ঘটিয়েছেন, তাহলে তাঁদের প্রশাসনিক ব্যবস্থা না নিয়ে ‘তাৎক্ষণিক অ্যাক্রেডিটেশন কার্ড বাতিল’ করার প্রয়োজনীয়তা কতটুকু ছিল? আর রাষ্ট্রীয় আইন ভঙ্গ করলে, দেশে ফৌজদারি আইন রয়েছে, যাঁরা অপরাধে জড়িয়ে পড়বেন, তাঁদের শাস্তি আদালতে হবে।  

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও