আসাদ, নূর হোসেনরা যেভাবে বারবার প্রতারিত হন

প্রথম আলো সৌমিত জয়দ্বীপ প্রকাশিত: ১০ নভেম্বর ২০২৪, ১১:৫৮

উনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ হলেন ছাত্রনেতা আমানুল্লাহ মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান। তারিখটা ছিল ২০ জানুয়ারি। তিনি হয়ে উঠলেন সেই গণ-অভ্যুত্থানের প্রতীক। কবি শামসুর রাহমান তাঁর সাড়া জাগানো ‘আসাদের শার্ট’ কবিতায় লিখলেন: 


‘আমাদের দুর্বলতা, ভীরুতা কলুষ আর লজ্জা


সমস্ত দিয়েছে ঢেকে একখণ্ড বস্ত্র মানবিক;


আসাদের শার্ট আজ আমাদের প্রাণের পতাকা।’ 


আসাদের লাশের শক্তি এমনই ছিল যে ইতিহাসের নির্মোহ ও সচেতন পাঠকমাত্রই জানেন, বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের মোড়ই ঘুরিয়ে দিয়েছিলেন ছাত্র ইউনিয়নের এই শহীদ নেতা। আসাদের মৃত্যু আন্দোলনকে এত তীব্র ও বেগবান করেছিল যে তার শক্তিতে ‘লৌহমানব’ আইয়ুব খানের পতন হয় মাত্র দুই মাস পরই। 


এরপর সত্তরের নির্বাচন হয়েছে। আওয়ামী লীগ সেই নির্বাচনে জনগণের নিরঙ্কুশ ম্যান্ডেট পেয়েও গদিতে বসতে পারেনি। সেই ক্ষমতা হস্তান্তর না হওয়ার সর্বৈব ফল একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ। তারপর এল আমাদের মহাবিজয় ও নতুন স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র। 


মুজিবের যুগ, দীর্ঘশ্বাসের সময়কাল 


এই মহাবিজয়ের মৌতাত আমাদের জাতীয় জীবনে দীর্ঘস্থায়ী হলো না, বরং সে হয়ে উঠল এক দীর্ঘশ্বাসের কাল। স্বাধীনতার জননায়ক হিসেবে লোকপ্রিয় হয়ে ওঠা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান খুব দ্রুতই ‘শাসক’ হয়ে উঠলেন। আশ্চর্যজনকভাবে মুক্তিযুদ্ধের জন-আকাঙ্ক্ষা তাঁর হাতেই ভূপাতিত হতে শুরু করল। ফলে তাঁর জনপ্রিয়তার পারদ ক্রমে নিম্নমুখী হলো। এরপর পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট তাঁর সপরিবার নিহত হওয়া তাঁকে বানিয়ে তুলল ট্র্যাজিক হিরো। 


বাংলাদেশের জন্য ট্র্যাজেডি হলো এই যে যাঁর বক্তৃতা ও বাগ্মিতা গণমানুষকে এনে দিয়েছিল ঔপনিবেশিকতার দীর্ঘ জিঞ্জির থেকে চিরমুক্তির স্বপ্ন, তিনি সেই গণমানুষের আকাঙ্ক্ষার সমীকরণটি আপ্ত করতে পারলেন না উপনিবেশ-উত্তর স্বাধীন রাষ্ট্রে। 



১৯৭৩ সালের ১ জানুয়ারি, স্বাধীন দেশে রঞ্জিত হলো ঢাকার রাজপথ। ভিয়েতনাম যুদ্ধ ও মার্কিন আগ্রাসনের প্রতিবাদে মিছিল করতে গিয়ে শহীদ হলেন ছাত্র ইউনিয়নের মতিউল-কাদের। ১৯৭৪ সালের ৪ এপ্রিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুহসীন হলে সংঘটিত হলো ছাত্রলীগের ন্যক্কারজনক সাত খুনের ঘটনা। ১৯৭৫ সালের ২ জানুয়ারি স্বাধীন বাংলাদেশে প্রথম ক্রসফায়ারের শিকার হলেন মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়া সিরাজ সিকদার।


এ ছাড়া সংবিধান কাঁটাছেড়া ও নিত্যনতুন বিধিব্যবস্থার মধ্য দিয়ে বাকশাল প্রবর্তনের ফলস্বরূপ ইতিহাসের ক্রিটিক্যাল বিশ্লেষকদের মত হলো, তাঁর হাতেই সূত্রপাত ঘটেছিল স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম স্বৈরাচারী রাজনৈতিক বন্দোবস্তের। আহমদ ছফার বিখ্যাত গ্রন্থ যদ্যপি আমার গুরু-তে এই বয়ানের যথার্থতা মেলে অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাকের সঙ্গে আলাপচারিতায় (পৃষ্ঠা ৭৩): 


‘...নাইন্টিন সিক্সটি নাইন থেইক্যা সেভেন্টি ওয়ানপর্যন্ত সময়ে শেখ সাহেব যারেই স্পর্শ করছেন, তার মধ্যে আগুন জ্বালাইয়া দিছেন। সেভেন্টি টুতে একবার ইউনিভার্সিটির কাজে তাঁর লগে দেখা করতে গেছিলাম। শেখ সাহেব জীবনে অনেক মানুষের লগে মিশছেন ত আদব লেহাজ আছিল খুব ভালো। অনেক খাতির করলেন। কথায়-কথায় আমি জিগাইলাম, আপনের হাতে ত অখন দেশ চালাইবার ভার, আপনে অপজিশনের কী করবেন। অপজিশন ছাড়া দেশ চালাইবেন কেমনে। জওহরলাল নেহেরু ক্ষমতায় বইস্যাই জয়প্রকাশ নারায়ণরে কইলেন, তোমরা অপজিশন পার্টি গইড়্যা তোল। শেখ সাহেব বললেন, আগামী ইলেকশনে অপজিশন পার্টিগুলা মাক্সিমাম পাঁচটার বেশি সীট পাইব না। আমি একটু আহত হইলাম, কইলাম, আপনে অপজিশনরে একশো সিট ছাইড়্যা দেবেন না? শেখ সাহেব হাসলেন। আমি চইল্যা আইলাম। ইতিহাস শেখ সাহেবরে স্টেটসম্যান অইবার একটা সুযোগ দিছিল। তিনি এইডা কামে লাগাইবার পারলেন না।’ 


মুজিব-উত্তর যুগ, বাধার বিন্ধ্যাচল


মুজিব-উত্তর এ কালের প্রাথমিক মেয়াদ ১৫ বছর (১৯৭৫-১৯৯০)। শেখ মুজিবের চিরবিদায়ের পরপরই হত্যা করা হলো আওয়ামী লীগের জাতীয় চার নেতাকে। অঘটনঘটনপটিয়সী পঁচাত্তরের নভেম্বরে আরও বিশাল পটপরিবর্তন ঘটে গেল। রাজনীতির পাশা খেলার রঙ্গমঞ্চে আবিভূর্ত হলো সেনাশাসন। প্রথমে জিয়াউর রহমান, তাঁর রহস্যজনক হত্যাকাণ্ডের পর মসনদে এলেন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। 


এ সময় ‘শিশু’ বাংলাদেশ আরও একটু বয়সী হলো ঠিক, তবে ‘টিনএজ’-এ পৌঁছাতে না পৌঁছাতেই তার বুকে রক্তের বন্যা বয়ে গেল৷ মাত্র ২০ বছর একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্য কোনো সময়ই নয়। অথচ পেছনে ফিরে তাকালে দেখা যাবে, এ সময়কালে রীতিমতো তামাশার নরককুণ্ডে পরিণত হয়ে গেছে সার্বভৌম এই রাষ্ট্র। জনতা বনাম ক্ষমতার বাইনারিতে ক্ষমতা হয়েছে নিরঙ্কুশ, আর জনতা হয়েছে ব্রাত্য! কী যে এক বাধার বিন্ধ্যাচল হয়ে উঠেছিল এ রাষ্ট্রব্যবস্থা, তা প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ানে ভালোভাবেই বোঝা যায়। 


ফলাফল ১৯৮৩ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি জাফর-জয়নাল-দীপালি-কাঞ্চনের লাশ; ১৯৮৪ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি ফুলবাড়িয়ায় ছাত্রদের মিছিলে ‘লেফটেন্যান্ট জেনারেল ট্র্যাক’ (ফরহাদ মজহারের বিখ্যাত কবিতার শিরোনাম) উঠে পিষে ফেলল সেলিম-দেলোয়ারকে। কিন্তু এরশাদ শাহিকে থামানো গেল না। আরও জুলুমবাজ হয়ে উঠল তাঁর শাসিত রাষ্ট্রযন্ত্র। কিন্তু পতন ঘটাতে না পারলেও, এরশাদের আরশ কাঁপিয়ে দিয়েছিল একটি লাশ—নূর হোসেন তাঁর নাম৷ 
শহীদ নূর হোসেন—বুক তাঁর বাংলাদেশের হৃদয় 

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও