উচ্চশিক্ষার প্রসার ঘটলেও উদ্বেগ কাটেনি
প্রধানত নদ-নদী, হাওড় ও খাল-বিলবেষ্টিত আমাদের দেশে আকৃতি-ওজন, দাম ও স্বাদ বিবেচনায় ‘পাঙাশ মাছ’ সবার কাছে একসময় ছিল খুবই আকর্ষণীয়। বড় প্রজাতির মাছ চিতল, আইড়, রুই, কাতলা, মৃগেল, বাউস প্রভৃতির মধ্যে গভীর জলের পাঙাশ মাছের কদর যেন ভিন্ন। দেখতে বেশ সুদৃশ্য। আহারে, খাবারের পাতে বড় পাঙাশ মাছের একটি টুকরো, মনে হলে এখনো জিভে পানি এসে যায়!
আক্ষেপের কথা হলো, নদীতে জন্ম নেওয়া ও গভীর জলে স্বাভাবিকভাবে বেড়ে ওঠা শখের সুস্বাদু পাঙাশ মাছ দিনে দিনে সাধারণ মানুষের কেবল নাগাল নয়, অনেকটা যেন ধারণারও বাইরে চলে গেছে। বহুল পরিচিত এ মাছটির স্বাদের কথা সহজে কল্পনাও করা যায় না। সাধারণ হাটবাজার তো দূরের কথা, মাছের ভান্ডার বলে পরিচিত বড় বড় হাওড়েও সে পাঙাশ ধরা পড়তে খুব একটা দেখা বা শোনা যায় না। ফলে এ এক বিস্মৃত অধ্যায়; পাঙাশ নিয়ে আজকাল বলতে গেলে গালগল্পই সার! এর বিপরীতে চারদিকে অন্য মাছের মতোই পাঙাশ মাছ চাষের ছড়াছড়ি। ছোট ছোট ডোবা-নালা কিংবা পুকুরে পাঙাশের চাষ এতই বেড়ে গেছে এবং সহজলভ্য হয়েছে যে, মিঠাপানির দেশি প্রজাতির মাছের অপ্রতুলতায় প্রাত্যহিক জীবনে পাঙাশই যেন ভরসা। সুলভ খাবার খেয়ে দ্রুত ও সহজে বেড়ে ওঠায় এখন অন্যসব মাছের তুলনায় পাঙাশের দাম খুব কম। স্বাদ যেমনই হোক, দিনান্তে কম আয়ের শ্রমিক শ্রেণির লোকরাও হাতে গোটা পাঙাশ নিয়ে ঘরে ফিরতে পারেন। তুলনামূলকভাবে এটি এমন সহজলভ্য হয়েছে, ছোট আর বড় যেমনই হোক, এমন কোনো হাটবাজার খুঁজে পাওয়া যাবে না, যেখানে পাঙাশ মাছের সরবরাহ নেই।
আমাদের কালে ১৯৭৭-১৯৭৮ সেশনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন ১১টি কলেজে অনার্স পড়ার ব্যবস্থা ছিল। বৃহত্তর ময়মনসিংহের মধ্যে (ময়মনসিংহ, কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা, জামালপুর ও শেরপুর) একমাত্র আনন্দমোহন কলেজ ছিল এর অন্তর্ভুক্ত। আর ঢাকা, রাজশাহী ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন সারা দেশে অনার্স পাঠদানোপযোগী কলেজের মোট সংখ্যাটি ছিল ২৬। ১৯৮০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ১১টি কলেজ থেকে অনার্স চূড়ান্ত পরীক্ষায় বিভিন্ন বিষয়ে আমরা মোট তিন হাজার ২০০ জন পরীক্ষার্থী অংশগ্রহণ করি (তিনটি বিশ্ববিদ্যালয় ও ২৬টি কলেজ মিলে)।
কিরাটন গ্রামের তৌহিদুল হক (তৌহিদ ভাই) ও নেয়ামতপুরের রুহুল আমীন (রুহুল ভাই) অর্থনীতি ও জাটিয়াপাড়া গ্রামের জয়ন্ত সরকার (জয়ন্ত দা) রসায়ন বিভাগে পড়তেন। তারা তিনজনই আমার সিনিয়র। তারা ছাড়া আমাদের করিমগঞ্জ উপজেলার (কিশোরগঞ্জ) আর কেউ সে সময় আনন্দমোহন কলেজে অনার্স পড়তেন বলে আমার জানা নেই। আর কেবল করিমগঞ্জ উপজেলা নয়, কিশোরগঞ্জ মহকুমার (বর্তমানে জেলা) ‘১৩টি থানার (বর্তমানে উপজেলা) মধ্যে’ আনন্দমোহন কলেজে আমার ব্যাচে (১৯৭৭-১৯৭৮) ইতিহাস বিভাগে আর কোনো শিক্ষার্থীর দেখা আমি পাইনি। অনার্স তো অনেক দূরের কথা, ডিগ্রি পাসকোর্স পড়াটাও ছিল অনেক সাধনার বিষয়; চার কিংবা ছয়টি উপজেলায় খোঁজ নিলে তবেই একটি ডিগ্রি স্তরে পাঠদানোপযোগী একটি কলেজের সন্ধান পাওয়া গেছে। আর মাস্টার্স (অনার্সের কথা আগেই কিছুটা উল্লেখ করা হয়েছে); সে তো অলীক কল্পনা। বিভাগীয় শহর ছাড়া মাস্টার্স পড়ার সুযোগ কোথায়?
- ট্যাগ:
- মতামত
- উচ্চশিক্ষা
- উদ্বেগ