প্রশাসক হওয়ার একমাত্র স্বপ্ন থেকে তরুণেরা মুক্তি পাক

প্রথম আলো নিশাত সুলতানা প্রকাশিত: ১৪ আগস্ট ২০২৪, ১৪:৪৪

২০২২ সালের শুরুতে বাংলাদেশের শিক্ষার সার্বিক চিত্র নিয়ে প্রকাশিত এক সাক্ষাৎকারে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেছিলেন, ‘দেশে কোনো বিজ্ঞানী নেই, গবেষক নেই, দার্শনিক নেই। যেদিকে তাকাবেন, শুধুই প্রশাসক।’ আমলাতান্ত্রিকতার ভারে ক্ষয়ে যাওয়া সেই সময়ে তাঁর এই সাহসী মন্তব্য মিডিয়াতে দারুণ সাড়া ফেলেছিল।


সম্প্রতি বিসিএসসহ বিভিন্ন সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিকে কেন্দ্র করে শুরু হওয়া আন্দোলনের চরম পরিণতির সাক্ষী হয়েছি আমরা। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তরুণ প্রজন্মের বিসিএস–জ্বর ক্রমেই মহামারিতে রূপ নিচ্ছিল। প্রতিবছর জ্যামিতিক হারে বাড়ছিল বিসিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা।


মনে পড়ে, ২০২২ সালে পরিসংখ্যান সংরক্ষণের ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডোমিটারস জানিয়েছিল এক ভয়ংকর তথ্য। তারা বলেছিল, ৪৫তম বিসিএস পরীক্ষায় আবেদনকারীর সংখ্যা ছিল পৃথিবীর ৫৪টি দেশ ও অঞ্চলের জনসংখ্যার চেয়ে বেশি। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিসিএস পরীক্ষায় আবেদনকারীর সংখ্যা ছিল গড়পড়তায় প্রায় একই রকম।



বিশ্লেষণ করলে যা পাওয়া যায়, তা হলো প্রতিবছর প্রায় ১০০ জন আবেদনকারীর বিপরীতে ১ জন সৌভাগ্যবান ব্যক্তি বিসিএস চাকরিতে নিয়োগপ্রাপ্ত হন। সেখানেও ছিল কোটাভিত্তিক নিয়োগপ্রাপ্তির জটিল হিসাব-নিকাশ।


প্রতিবছর গড়ে ৯৯ শতাংশ প্রার্থীই স্বপ্নভঙ্গের বেদনা নিয়ে কর্মবাজারে হাজির হন। তাঁদের মধ্যে আবার উল্লেখযোগ্য একটি অংশ সরকারি চাকরির বয়স উত্তীর্ণ না হওয়া পর্যন্ত প্রতিবছর বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নিতেই থাকেন। অন্য কোনো বিকল্প চিন্তাভাবনা তাঁদের মাথাতে আসেই না। বিসিএস নামক মরীচিকার পেছনে ছুটতে ছুটতে তারুণ্যের উৎপাদনশীল বছরগুলোর অপমৃত্যু ঘটে।


সরকারি চাকরি নিয়ে তরুণদের অতিরিক্ত উন্মাদনা অবাক করে আমাকে। দুর্নীতিতে আপাদমস্তক ছেয়ে যাওয়া একটি দেশের প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী হওয়া কি এতটাই সুখকর? তবে কোন হতাশা থেকে তরুণ প্রজন্ম বছরের পর বছর একমাত্র সরকারি চাকরিকেই নিশ্চিত ভবিষ্যৎ জ্ঞান করেছে, সেটি আমাদের অজানা থাকার কথা নয়।


সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সীমাহীন ক্ষমতা; আর তাঁদের গড়ে তোলা সম্পদের পাহাড় তরুণ প্রজন্মকে হাতছানি দিয়ে ডেকেছে। সম্পদের জাঁকজমক আর ক্ষমতার স্বপ্নের কাছে নিরুপায় আত্মসমর্পণ করেছেন তাঁরা। মেডিকেল কলেজ কিংবা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েও তরুণেরা তাই প্রশাসক হতে চেয়েছেন; আর তাই হচ্ছে।



তবে আজ সময়ের পরিবর্তন হয়েছে। আর সে পরিবর্তনের নেপথ্যে কাজ করেছেন তরুণেরাই। সরকারি চাকরিলাভের ক্ষেত্রে বৈষম্যমূলক কোটা পরিবর্তনের দাবি থেকে শুরু হওয়া তরুণদের আন্দোলন একসময় রূপ নিয়েছে বিভিন্ন বৈষম্যের বিরুদ্ধে আপসহীন এক গণ-আন্দোলনে। তাঁদের সেই সংগ্রাম অনেক আত্মত্যাগের বিনিময়ে সফলও হয়েছে।


আজ আমরা বৈষম্যহীন এক নতুন দেশ গড়ার স্বপ্নে বিভোর। আর আমাদের সেই স্বপ্ন দেখাচ্ছেন তরুণেরাই। বদলে যাওয়া আর বদলে দেওয়ার এই যুগসন্ধিক্ষণে আজ সময় হয়েছে সরকারি চাকরির বিকল্প সম্ভাবনাগুলো তরুণদের সামনে অবারিত করার।


সরকারি চাকরিই তরুণদের জীবনের একমাত্র গন্তব্য নয়, হতে পারে না। তীব্র প্রতিযোগিতামূলক সরকারি চাকরির নিয়োগ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার বিষয়টি অবশ্যই কৃতিত্বের দাবি রাখে। তাই বলে বিসিএসে উত্তীর্ণ হলেই তাঁরা সফল—এ ধরনের চিন্তাভাবনা ও প্রচার-প্রচারণাগুলো বন্ধ করতে হবে। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে নিয়োগ পাওয়া বৈষম্যহীন ছাত্র আন্দোলনের দুজন সমন্বয়কারীকে অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়টি অত্যন্ত সাহসী একটি সিদ্ধান্ত, যা প্রশংসার দাবি রাখে।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও