বিসিএস পরীক্ষা ও সৈয়দ আবেদ আলীর জন্ম
বিসিএস নিয়ে শিক্ষার্থীদের আগ্রহের কমতি নেই। এর বড় কারণ হলো, নিশ্চিত চাকরি আর দুর্নীতি। যদিও সরকারি চাকরির সবাই যে দুর্নীতি করে তা নয়, কিন্তু বড় অংশ দুর্নীতির সাথে যুক্ত।
প্রতিদিন গণমাধ্যমে অসংখ্য সরকারি চাকরিজীবীদের দুর্নীতির খবর বেরিয়ে আসছে। এরা যেমন মেধাবী, তেমনই দুর্নীতিবাজ, তেমনই বক ধার্মিক। আর সেই বিসিএসের জন্য শিক্ষার্থীরাই ছুটছে অন্ধের মতো।
বিসিএস পরীক্ষার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগে ভর্তি হয়ে বিভাগের লেখাপড়া বাদ দিয়ে বিসিএস পড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সত্যিকারের লেখাপড়াকে প্রায় ধ্বংস করে ফেলেছে শিক্ষার্থীরা। সেই বিসিএস পরীক্ষার এখন যে লোমহর্ষক দুর্নীতির গল্প শুনছি তাতে মনে হচ্ছে অনেকের তো আমও গেল ছালাও গেল। কী ভুলের মধ্যে ছিল আমাদের শিক্ষার্থীরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরিতে পড়তে যাওয়ার জন্য ভোর থেকে লাইন দিতে দেখতাম শিক্ষার্থীদের। পুরো লাইব্রেরি থাকতো বিসিএস চাকরি প্রত্যাশীদের দখলে। সেখানে নিয়মিত শিক্ষার্থীরা লাইব্রেরিতে জায়গা পেত না।
আর এখন পিএসসির অধীনে নানা চাকরির নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের লোমহর্ষক কাহিনি শুনছি। সৎ শিক্ষার্থীদের সাথে কি পরিমাণ প্রতারণা করা হয়েছে ভাবুন একবার।
কোনো একটি-দুইটি পরীক্ষা না, ১ বছর-২ বছরের ঘটনা না, ৩৩তম বিসিএস থেকে ৪৪তম বিসিএস পরীক্ষা ধরে এই প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা ঘটে চলেছে। ভাবতে পারেন কত শত কর্মকর্তা প্রশ্নফাঁস দিয়ে চাকরি পেয়েছে?
এরা তো চাকরি পাওয়ার পরদিন থেকেই লেগে যাবে প্রথমে ঘুষ-দুর্নীতির মাধ্যমে প্রশ্ন কেনার টাকা ওঠাতে। আর একবার শুরু করলে এর মাত্রা কেবল বাড়বেই। দেশে যে দুর্নীতির মহোৎসব চলছে তার পেছনে এটিও একটি বড় কারণ।
তাহলে এ থেকে মুক্তির উপায় কী? কোনো সহজ সরল উপায় নেই। কঠোর সব পদক্ষেপ ছাড়া তা থেকে উত্তরণের কোনো পথ খোলা নেই। এই ক্ষেত্রে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদাহরণকে কাজে লাগানো যেতে পারে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যখন ২০১৮ সালের দিকে প্রশ্নফাঁসের ঘটনার অভিযোগের সত্যতা সামনে আসে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তখন খুব কঠোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। তারা এটা নিশ্চিত করেছিল—যে বা যারা এই প্রক্রিয়ায় ভর্তি হয়েছিল সেসব শিক্ষার্থীদের চিহ্নিত করে তাৎক্ষণিক ৮৭জন বহিষ্কার করা হয়েছিল।
তাদের অনেকে ১ম, ২য়, ৩য়, এমনকি ৪র্থ বর্ষে এসেও বহিষ্কৃত হয়েছিল। এর মধ্য দিয়ে জনসাধারণের কাছে যে বার্তাটা গেছে তা হলো, ফাঁস হওয়া প্রশ্নে ঢাবিতে ভর্তি হতে পারলেও একদিন না একদিন তা প্রকাশ পাবে এবং সেদিন বহিষ্কৃত হতেই হবে।
সৈয়দ আবেদ আলীর কথা এখন সবারই জানা। যে কি না প্রশ্নফাঁসের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা অবৈধভাবে আয় করেছে। সে অবৈধ অর্থ আবার মসজিদ-মাদ্রাসায় বিলিয়েছে। একদিকে অবৈধ আয় আবার সেই অবৈধ আয় দিয়ে ধার্মিক হওয়ার প্রতিযোগিতা। উপজেলা চেয়ারম্যানও হতে চেয়েছে এই আবেদ আলী।
গণমাধ্যমের প্রতিবেদন বলছে, ‘আবেদ আলী সবার নাম বলে দিয়েছে’—পিএসসির ফাঁসকৃত প্রশ্ন পেয়ে যারা চাকরি পেয়েছে তাদের চিহ্নিত করে শুধু চাকরিচ্যুতই না বরং তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ বিচারের ব্যবস্থা করতে হবে।
একইসাথে প্রশ্ন ফাঁসকারীদের তালিকা করে প্রশ্নফাঁসের সাথে জড়িত কর্মচারী ও অফিসারদের চিহ্নিত করে চাকরিচ্যুতই শুধু না রাষ্ট্রীয় আইনে বিচারের আওতায় আনতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই।
- ট্যাগ:
- মতামত
- প্রশ্নফাঁস
- বিসিএস পরীক্ষা