চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানে উদার সেবার মানসিকতা থাকা চাই

যুগান্তর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) ড. মাহবুব উল্লাহ প্রকাশিত: ২৭ জুন ২০২৪, ১৩:১৪

একটি দৈনিকের প্রধান শিরোনাম, ‘বঙ্গবন্ধু মেডিকেলের অর্ধেক আইসিইউ নষ্ট’। বাংলাদেশের এ মর্যাদাপূর্ণ হাসপাতালে আইসিইউ শয্যা ১০১। এর মধ্যে নবজাতকের আইসিইউ ২০টি ও শিশুদের আইসিইউ ২০টি। আইসিইউর মধ্যে ৪২টিই নষ্ট। ২০টি আইসিইউ কোনোদিন চালু করা হয়নি। মোট ৬২টি আইসিইউ অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে আছে। এ হাসপাতালে এইচডিইউ (হাই ডিপেন্ডেন্সি ইউনিট) শয্যা আছে ১৪টি। এর মধ্যে ৪টি শয্যা নষ্ট।


আইসিইউ চালাতে জনবলেরও সংকট রয়েছে এ হাসপাতালে। একদিকে আইসিইউ যন্ত্রগুলো বিকল অথবা অব্যবহৃত থাকায় জরুরি মুহূর্তে আইসিইউ চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হতে হচ্ছে শিশু ও বয়স্ক রোগীদের; অন্যদিকে সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশের হাসপাতালগুলোতে আইসিইউর দারুণ অভাব রয়েছে। রোগীর অবস্থা যখন জটিল ও সংকটাপন্ন হয়ে পড়ে, তখন প্রয়োজন হয় আইসিইউ সেবার। এমনই একটি অবস্থায় আইসিইউ শয্যার জন্য রোগীর আপনজনদের হন্যে হয়ে ছোটাছুটি করতে হয়। যতক্ষণ পর্যন্ত আইসিইউর প্রাপ্যতা নিশ্চিত না হয়, ততক্ষণ রোগীদের স্বজনরা কী নিদারুণ উদ্বিগ্নতার মধ্যে পড়েন, তা ভাষায় প্রকাশ করা সহজ নয়। ঢাকাসহ সারা বাংলাদেশেই জটিল রোগীদের নিয়ে স্বজনদের এমন অসহায়ত্বের শিকার হতে হয়।


বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিইউতে খরচ তুলনামূলকভাবে কম। কারণ এটি একটি সরকারি হাসপাতাল। এখানে সাধারণ আইসিইউর দৈনিক ভাড়া ২,১০০ টাকা। লাইফ সাপোর্ট যন্ত্র ও মনিটরের ব্যবহার হলে অতিরিক্ত ৯৬০ টাকা দিতে হয়। অর্থাৎ দৈনিক খরচ ৩০৬০ টাকার বেশি নয়। নবজাতকের জন্য দৈনিক খরচ ১,৫০০ টাকা। এর পাশাপাশি ঢাকার যে কোনো মাঝারি মানের বেসরকারি হাসপাতালের আইসিইউতে দৈনিক খরচ ১৫,০০০ টাকা। বেসরকারি হাসপাতালের আইসিইউর খরচ পোষানো কোনো নিম্ন বা মধ্যআয়ের মানুষের পক্ষে সম্ভব হয় না। এমনকি আমরা যদি বিএসএমএমইউ হাসপাতালের আইসিইউ বেডের খরচ বিবেচনায় নেই, তাহলে দেখব এ খরচে অনেক দরিদ্র মানুষের পক্ষে চিকিৎসা সেবা নেওয়া সম্ভব নয়। সরকারের উচিত বেসরকারি হাসপাতালের আইসিইউ চার্জ নিয়ন্ত্রণ করা। আইসিইউ চালাতে সব ধরনের ব্যয় বিবেচনায় নিয়ে যুক্তিসংগত মুনাফার হার ধরে আইসিইউর চার্জ নির্ধারণ করে দেওয়া উচিত। যেখানে মানুষের বাঁচা মরার প্রশ্ন, সেখানে শাইলক বি জু’র মতো মুনাফা গৃধ্নুদের নিয়ন্ত্রণ করা নৈতিকতা ও ন্যায়বিচারের দাবি। মুনাফামগ্ন অর্থনীতিবিদদের যুক্তি হতে পারে এভাবে মুনাফা নিয়ন্ত্রণ করলে স্বাস্থ্য খাতে, বিশেষ করে হাসপাতালে চিকিৎসা খাতে কাঙ্ক্ষিত প্রাইভেট ইনভেস্টমেন্ট হবে না। সেক্ষেত্রে মনে রাখা দরকার, হাসপাতালের সেবাকে অন্য আর দশটি চানাচুরের ব্যবসার সঙ্গে তুলনা করা সঠিক হবে না। বাংলাদেশে ব্যক্তি খাতে হাসপাতাল সেবাকে একটি Norm-এর মধ্যে নিয়ে আসা এখন সময়ের দাবি। এর পাশাপাশি সাম্প্রতিককালে যেভাবে ওষুধের দাম বৃদ্ধি করা হয়েছে, আমরা তা নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করতে পারি। ভুক্তভোগী হিসাবে বলতে পারি, নিয়মিত ওষুধ সেবনের জন্য দেড়গুণ থেকে দুইগুণ, এমনকি তিনগুণ অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে। এই বাড়তি ব্যয় আমার মতো একজন নির্দিষ্ট আয়ের মানুষের পক্ষে পুষিয়ে ওঠা সম্ভব নয়। ওষুধ প্রস্তুতকারকরা দোহাই দিতে পারেন, ডলারের দাম বাড়ার ফলে ওষুধের দাম বাড়াতে হচ্ছে। প্রশ্ন হলো, ডলারের দাম যতটুকু বৃদ্ধি পেয়েছে, তার জন্য কি ওষুধের দাম এতটা বৃদ্ধি পেতে পারে? সাধারণ মানুষের বিশ্বাস ওষুধ শিল্পে মুনাফার হার খুবই বেশি। এ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে দেশের ঔষধ প্রশাসন দপ্তরের উচিত হবে ওষুধ উৎপাদনের প্রকৃত ব্যয়ের নিরিখে ওষুধের দাম স্থির করে দেওয়া। এখন যে দামে ওষুধ কিনতে হয়, তাতে মনে হয় ঔষধ প্রশাসন ওষুধের মূল্য নিয়ন্ত্রণে চরমভাবে উদাসীন হয়ে পড়েছে। এমনকি দুর্নীতি হচ্ছে বলে সন্দেহ করা যায়।


দেশের সবচেয়ে বড় হাসপাতালটিতে অর্ধেক আইসিইউ মেশিন নষ্ট থাকার ফলে সাধারণ মানুষের যে ভোগান্তি হচ্ছে, তার একটি করুণ চিত্র আলোচ্য সংবাদপত্রটিতে তুলে ধরা হয়েছে। একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের একজন গাড়িচালক পবিত্র ঈদুল আজহার দিন আখাউড়ায় মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হন। প্রথমে তাকে ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে ওই গাড়ির চালককে জাতীয় বক্ষব্যাধি হাসপাতালে নেওয়া হয়। চিকিৎসকরা একপর্যায়ে তাকে আইসিইউতে ভর্তি করানোর কথা বলেন। বক্ষব্যাধি হাসপাতালে কোনো আইসিইউ শয্যা খালি ছিল না। এরপর ঢাকার প্রায় সব সরকারি হাসপাতালে আইসিইউ শয্যার খোঁজ করা হয়। কিন্তু কোথাও তা পাওয়া যায়নি। এরপর ওই গাড়িচালককে মহাখালীর একটি বেসরকারি হাসপাতালের আইসিউইতে ভর্তি করানো হয়। এ হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক পত্রিকাটিকে বলেছেন, ওই রোগীর প্রতিদিন ২০ হাজার টাকার বেশি বিল হচ্ছে। একজন গাড়ি চালকের পক্ষে এ অঙ্কের বিল পরিশোধ করা যে কত দুরূহ, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।


আমরা আগেই জেনেছি, বিএসএমএমইউ হাসপাতালে ৪২টি আইসিইউ নষ্ট এবং ২০টি কোনোদিনই চালু করা হয়নি। অর্থাৎ ৬২টি আইসিইউ ইউনিট ব্যবহার করা যাচ্ছে না, অথবা ব্যবহৃত হচ্ছে না। মাসের পর মাস ধরে এসব আইসিইউ শয্যা কোনো কাজে আসছে না। বিষয়টি খুবই মর্মান্তিক ও দুঃখজনক। আইসিইউতে চিকিৎসাধীন রোগী সুস্থ হওয়ার পর প্রথমে তাকে এইচডিইউতে রাখা হয়। রোগী আরও সুস্থ হওয়ার পর এইচডিইউ থেকে তাকে সাধারণ ওয়ার্ড বা কেবিনে নেওয়া হয়। বিএসএমএমইউতে যে ১৪টি এইচডিইউ শয্যা রয়েছে তার মধ্যে ৪টি নষ্ট।


বাংলাদেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হাসপাতালটিতে আইসিইউ সেবার বিপর্যয়ও সুশাসনের অভাবকেই প্রতিভাত করে। প্রতি বছর যখন বাজেট হয়, তখন আমরা সবাই স্বাস্থ্য খাতে অপ্রতুল বরাদ্দ নিয়ে দারুণভাবে মুখর হই। আবার এ কথাও সত্য যে, যে অর্থ বরাদ্দ হয়, তার পুরোটি ব্যয় করা হয় না। অথবা ব্যয় করা যায় না। অর্থনীতির ভাষায় এটাকে বলা হয় Absorption capacity’র সীমাবদ্ধতা। প্রশাসনিক অদক্ষতা অথবা আইনি জটিলতা এর কারণ হতে পারে। মাসের পর মাস ধরে অনেক আইসিইউ শয্যা বিকল হয়ে পড়ে আছে, অথচ এগুলোকে সচল করা হচ্ছে না কেন? এর জন্য কী দায়ী? অর্থের অভাব, নাকি উদ্যোগের অভাব, নাকি দক্ষ সার্ভিসিং সেবার অভাব? যেটারই অভাব থাকুক না কেন, তার বিমোচনের দায়িত্ব সরকার ও সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের। যে সংবাদপত্রে বিএসএমএমইউর অচল আইসিইউ শয্যা সম্পর্কে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে, সেই প্রতিবেদনের প্রতিবেদককে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়টির সহ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক মোহাম্মদ আতিকুর রহমান বলেছেন, গত মার্চ মাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যসহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদে নতুন নিয়োগ হয়েছে। নতুন প্রশাসন দায়িত্ব নেওয়ার পর নষ্ট বা অকার্যকর আইসিইউর তালিকা তৈরি করার পাশাপাশি সেগুলো চালু করার চেষ্টা চালানো হচ্ছে। জনবল প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। যন্ত্রপাতি কেনার জন্য অর্থছাড়ের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

এই সম্পর্কিত

আরও