সংস্কৃতি, ধর্ম ও অর্থনীতির বিকাশ
শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে বিভিন্ন সংস্কৃতির সহাবস্থান ও সমন্বয়ের মধ্য দিয়ে গড়ে উঠেছে বাঙালি সংস্কৃতি। সংস্কৃতি ও উৎসব একটি দেশের পরিচায়ক। সংস্কৃতি, ধর্মীয় বিশ্বাস ও সাম্প্রদায়িক চেতনার ওপর ভিত্তি করে বাংলাদেশের প্রধান উৎসবগুলো পালিত হয়, যা অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
উল্টোদিকে অর্থনৈতিক পরিবর্তনের সাথে সাথে সংস্কৃতি এবং উৎসবেও আসে পরিবর্তন। যেমন, বিশ্বায়ন ও পুঁজিবাদী সমাজ ব্যবস্থা আমাদের সংস্কৃতির ঐতিহ্যবাহী ঐতিহ্যগুলো ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করছে। যার কারণে শহরের নববর্ষ উদযাপনে পশ্চিমা নববর্ষ উদযাপনের অনুকরণই বেশি দেখতে পাই।
সংস্কৃতি, ধর্ম এবং অর্থনীতির মধ্যে একটি জটিল এবং বহুমাত্রিক সম্পর্ক বিদ্যমান যা একে অপরকে বিভিন্ন উপায়ে প্রভাবিত করে থাকে।
হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান বিভিন্ন ধর্ম বাঙালিদের সমাজ ও সংস্কৃতিতে মিশে গিয়ে নিজস্ব স্বকীয়তা তৈরি করেছে। তাই মুসলিম সম্প্রদায়ের ঈদ, হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের শারদীয় দুর্গোৎসব, বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের বুদ্ধপূর্ণিমা এবং খ্রিস্টানদের বড়দিন ইত্যাদি ধর্মীয় উৎসবগুলো বাঙালি সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হয়ে রয়েছে।
আবার আমাদের সংস্কৃতিতে কিছু উৎসব আছে যেগুলো সর্বজনীন অর্থাৎ এগুলোর সাথে ধর্মীয় রীতিনীতি সম্পৃক্ত নয়। যেমন পহেলা বৈশাখ, বর্ষাবরণ উৎসব, বসন্ত উৎসব, পিঠা উৎসব, যাত্রাপালা, পুতুলনাচ, লোকগান। একটি দেশে বহু ধর্ম থাকতে পারে, সংস্কৃতি কিন্তু এক। যদিও কোনো কোনো দেশে সংস্কৃতি ও ধর্ম এই দুটোই আলাদাভাবে মূল্যায়ন করা হয়।
বাংলাদেশে যেকোনো উৎসব বা ধর্মীয় উৎসব তা যে সম্প্রদায়েরই হোক না কেন; উৎসব প্রিয় বাঙালি শ্রেণি, বর্ণ, পেশা নির্বিশেষে কমবেশি সবাই আনন্দের সাথে উদযাপন করে। তাই বাংলাদেশে আমরা একটি কথা প্রায়ই শুনতে পাই ‘ধর্ম যার যার, উৎসব সবার’।
ধর্ম ও সংস্কৃতির মধ্যে যে সংকটটি আমাদের জনজীবন আক্রান্ত করেছে তা হচ্ছে ধর্মের মুখোশে ধর্মান্ধতা। সংস্কৃতির প্রতি বিদ্বেষ ও ধর্মের বহুল অপপ্রচার অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যর ওপর আঘাত হানছে বারবার।
- ট্যাগ:
- মতামত
- ধর্ম
- বাঙালি সংস্কৃতি