আধুনিক আফ্রিকার ভিন্ন এক সেনানায়ক

www.ajkerpatrika.com বিভুরঞ্জন সরকার প্রকাশিত: ৩০ জুলাই ২০২৫, ১৫:২৬

আধুনিক আফ্রিকায় আবারও শুরু হয়েছে এক নতুন রাজনৈতিক জাগরণ। এটি অতীতের সামরিক শাসনের রক্তাক্ত স্মৃতির পুনরাবৃত্তি নয়, বরং এক নতুন ধারা—যেখানে সেনাবাহিনী শুধু বন্দুকধারী নয়, কখনো কখনো হয়ে উঠছে জনগণের কণ্ঠস্বর, প্রতিরোধের প্রতীক এবং বিদেশি দখলদারত্বের বিরুদ্ধে সোচ্চার এক আত্মসম্মানবোধের জাগরণ। এই নতুন ধারার প্রতীক হয়ে উঠেছেন এক তরুণ সেনা কর্মকর্তা—ইব্রাহিম ত্রাওরে, যিনি ২০২২ সালে মাত্র ৩৪ বছর বয়সে বুরকিনা ফাসোর রাষ্ট্রক্ষমতা গ্রহণ করেন।


ত্রাওরের ক্ষমতা গ্রহণ কোনো আকস্মিক ঘটনা নয়, বরং এটা এক জমে ওঠা ক্ষোভের ফল। বুরকিনা ফাসো এক দশকের বেশি সময় ধরে সহিংস উগ্রপন্থা ও জঙ্গি হামলায় বিপর্যস্ত। সীমান্ত অঞ্চলের বিশাল এলাকা জঙ্গিরা দখলে নিয়েছে। রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণ সেখানে কার্যত অকার্যকর। জনগণ প্রতিনিয়ত হত্যা, অপহরণ ও বাস্তুচ্যুতির শিকার। এই অবস্থায় যাঁরা ক্ষমতায় ছিলেন, তাঁরা কার্যত ব্যর্থ—এই উপলব্ধি থেকেই সেনাবাহিনীর মধ্যবর্তী স্তরের একটি অংশ নেতৃত্বের পরিবর্তনের দাবি তোলে। সেই প্রক্রিয়াতেই সামনে আসেন ক্যাপ্টেন ইব্রাহিম ত্রাওরে।


ত্রাওরে নিজেই বলেছেন, ‘আমরা যুদ্ধক্ষেত্রে হেরেছি নেতৃত্বের ব্যর্থতার কারণে। সৈনিকেরা লড়ছে, মরছে, কিন্তু আমরা জিততে পারছি না। জনগণ আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে। এই অবস্থায় নীরব থাকা অপরাধ।’ এই কথাগুলো শুধু রাজনৈতিক ভাষণ নয়, বরং একটি গোটা প্রজন্মের হতাশা ও আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন। তাই তাঁর ক্ষমতা গ্রহণ জনগণের চোখে ছিল মুক্তির সম্ভাবনা।


ত্রাওরের একার অবস্থান নয়, বরং তিনি এক ধারাবাহিক চেতনার উত্তরসূরি। তিনি নিজেকে টমাস সাংকারার আদর্শে অনুপ্রাণিত বলে ঘোষণা করেন। সাংকারা ছিলেন একজন আদর্শবাদী নেতা, যিনি আফ্রিকাকে আত্মনির্ভরশীল, দুর্নীতিমুক্ত এবং উপনিবেশবিরোধী চেতনায় গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন। ত্রাওরের শারীরিক ভাষা, পোশাক, অফিসের সরলতা, প্রটোকলবিমুখতা এবং অপ্রচলিত রাজনৈতিক বক্তৃতায় সেই সাংকারার ছায়া পরিষ্কার। এমনকি তিনি বিলাসবহুল গাড়িতে ওঠেন না, নিরাপত্তার নামে অতিরিক্ত ঘেরাও চান না, ঘন ঘন সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলেন। তাঁর কথায়, ‘আমি যদি জনগণের সমস্যা না বুঝি, তাহলে আমি নেতা নই, আমি একজন আত্মমোহিত ব্যক্তিমাত্র।’


তবে ইব্রাহিম ত্রাওরেকে শুধু দেশের অভ্যন্তরীণ সংকটে সাহসী অবস্থানের কারণে আলোচনায় আনলে ভুল হবে। আসলে তাঁর নেতৃত্ব আফ্রিকার ভূরাজনৈতিক মানচিত্রেও নতুন মাত্রা যোগ করেছে। একে বলা যায়, আফ্রিকার নতুন ভূ-কৌশলগত স্বাধীনতার সূচনা।



বুরকিনা ফাসো দীর্ঘদিন ধরে ফ্রান্সের প্রভাবাধীন থেকেছে। পশ্চিম আফ্রিকার বহু দেশের মতো এখানেও ফ্রান্সের সেনাঘাঁটি, ফরাসি উন্নয়ন সংস্থা এবং কূটনৈতিক প্রভাব গভীরভাবে প্রতিষ্ঠিত ছিল। কিন্তু ত্রাওরে প্রকাশ্যে ঘোষণা করেন, ‘যে শক্তি আমাদের রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়েছে, তাদের আর প্রয়োজন নেই।’ তিনি ফরাসি সেনাবাহিনীর উপস্থিতি প্রত্যাখ্যান করেন, তাদের সরিয়ে দেন, এমনকি ফরাসি রাষ্ট্রদূতকেও দেশত্যাগে বাধ্য করেন। এর মাধ্যমে তিনি কেবল একটি কূটনৈতিক বার্তাই দেননি, আফ্রিকার বহু দশকের ‘মুরব্বি শাসনের’ বিরুদ্ধে এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন।


এই অবস্থান পশ্চিমা বিশ্বকে অস্বস্তিতে ফেলে। যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্য প্রথম থেকেই ত্রাওরের অভ্যুত্থানকে স্বাগত জানায়নি। তাদের ভাষায় এটি ছিল ‘গণতন্ত্রবিরোধী’ পদক্ষেপ। তারা বুরকিনা ফাসোর বিরুদ্ধে কিছু অনুদান স্থগিত করে, সাময়িক নিষেধাজ্ঞাও আরোপ করে। তবে বাস্তবতা হলো, বুরকিনা ফাসোর অধিকাংশ মানুষ তাঁকে সমর্থন জানায়। রাজধানী ওয়াগাডুগু ও গ্রামীণ অঞ্চলে তাঁর পক্ষে জনসমাবেশে লক্ষাধিক মানুষ অংশ নেয়, যারা তাঁকে দেখে ‘নতুন স্বাধীনতার প্রতীক’ হিসেবে।


আবার, পশ্চিমা জোটের বাইরে ত্রাওরে তাঁর কৌশলিক অবস্থান আরও সুসংহত করছেন। রাশিয়া এই মুহূর্তে তাঁর গুরুত্বপূর্ণ মিত্র। রাশিয়ার সঙ্গে যৌথ প্রশিক্ষণ, অস্ত্র সরবরাহ, এমনকি নিরাপত্তা বাহিনী পুনর্গঠনের মতো কর্মসূচি চালু হয়েছে। রাশিয়ার ভাড়াটে বাহিনী ওয়াগনার গ্রুপের উপস্থিতি নিয়েও আলোচনা রয়েছে। যদিও ত্রাওরে সরাসরি ওয়াগনারের নাম নেননি, তবে রাশিয়ার প্রতি তাঁর স্পষ্ট সমর্থন দৃশ্যমান। আফ্রিকার একাংশে যখন ফ্রান্সপন্থী নেতৃত্বের পতন হচ্ছে, তখন রাশিয়া সেই শূন্যস্থান পূরণ করতে চাইছে এবং ত্রাওরে হচ্ছেন সেই কৌশলিক পটপরিবর্তনের গুরুত্বপূর্ণ চাবিকাঠি।


চীনের সঙ্গে ত্রাওরের সম্পর্ক এখনো উন্নয়ন সহযোগিতামুখী। চীন অর্থনৈতিক সহযোগিতা এবং অবকাঠামো উন্নয়নে আগ্রহী। তবে চীন বরাবরের মতো কূটনৈতিকভাবে সংযত, জনসমক্ষে বিশেষ অবস্থান প্রকাশ করে না। কিন্তু ত্রাওরের অধীনে চীন-আফ্রিকা সম্পর্কও নতুন মাত্রা পেতে পারে, কারণ তিনি স্পষ্টভাবে বিকল্প শক্তির খোঁজ করছেন।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও