হিদাইরখাল হত্যায় প্ররোচনা ও প্রশ্রয় দিচ্ছে কারা?

সমকাল আব্দুল হাই আল-হাদী প্রকাশিত: ১৫ মে ২০২৪, ১২:২১

নামের সঙ্গে ‘খাল’ থাকলেও ‘হিদাইরখাল’ আদতে নদী। উৎসস্থলে ‘হিদাইরখাল’ বা ‘বাউলিখাল’ নামে পরিচিত হলেও পানি উন্নয়ন বোর্ডের নথিপত্রে নদীটির নাম ‘বেকরা’। প্রায় ৮ বছর আগে যোগাযোগ সুবিধার দোহাই দিয়ে উৎসমুখে বাঁধ তৈরি করে নদীকেই কেবল গলাটিপে হত্যা করা হয়নি; পরিবেশ, ভূপ্রকৃতি ও জীববৈচিত্র্যকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। এলাকাবাসী ও পরিবেশকর্মীরা শুরু থেকেই বাঁধটি অপসারণে আন্দোলন চালিয়ে এলেও উল্টো বাঁধের ওপর দিয়ে পাকা সড়ক নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। একটি স্বীকৃত নদীকে স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী কীভাবে প্ররোচনা ও প্রতারণার মাধ্যমে হত্যা করতে পারে, তার ‘আদর্শ’ উদাহরণ ‘হিদাইরখাল’।    


সিলেটের সারি নদী লালাখাল পয়েন্ট দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশের পর ক্রমেই পশ্চিম দিকে অগ্রসর হওয়ার পথে কয়েকটি বড় বাঁক নিয়েছে। এর মধ্যে গোয়াইনঘাট উপজেলার পূর্ব-আলীরগাঁও ইউনিয়নে মঞ্জিলতলায় নদীটি ‘ইউটার্ন’ নিয়ে উত্তর দিকে অগ্রসর হয়েছে। সারি নদীর এ বাঁক থেকেই হিদাইরখাল বা বেকরা নদী সৃষ্টি হয়েছে। অল্প জায়গায় অনেক বেশি বাঁক নেওয়ায় নদীটির লোকজ নাম ‘বেকরা’ তথা বাঁকা। এর দৈর্ঘ্য ১৮ কিমি এবং গড় প্রস্থ ৩০ মিটার। নদীটি একই উপজেলার লেঙ্গুরা ইউনিয়নে কাপনা নদীর সঙ্গে মিলিত হয়ে রাতারগুল জলারবনের পাশ দিয়ে পুনরায় সারি নদীতে পতিত হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের তালিকায় নদীটির পরিচিতি নম্বর ‘উপূ-৬০’। বেকরা নদীর উৎসস্থলে ‘হিদাইরখাল’ নামে পরিচিত। 


বেকরা নদীর এ উৎসমুখেই ২০১৬ সালে প্রায় ৪০০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ৩০ ফুট প্রস্থ বাঁধের নির্মাণকাজ শুরু এবং ২০১৭ সালে শেষ হয়। নদীগর্ভ থেকে প্রায় ৫০ ফুট উচ্চতার বাঁধটি নির্মাণে প্রায় ৬১ লাখ টাকা জোগান দিয়েছে স্থানীয় এলাকাবাসী ও ইউনিয়ন পরিষদ। অভিযোগ রয়েছে, ভুল ও বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য ও উপজেলা পরিষদ থেকেও ‘অনুদান’ নেওয়া হয়েছিল। যদিও সে ব্যয়ের কোনো হিসাব কেউ জানেন না।  


অনস্বীকার্য, সেতু না থাকায় নদীর ওপারের সহস্রাধিক বাসিন্দার যোগাযোগে অসুবিধা হচ্ছিল। কিন্তু সে ক্ষেত্রে সেতু নির্মাণের মতো টেকসই উন্নয়নের বদলে নদী ভরাট করে বাঁধ নির্মাণের পথে কেন সমাজপতিরা গেলেন– সেই সমীকরণ খুব সোজা।   


এটা ঠিক, হিদাইরখালের উৎসমুখে বাঁধ নির্মাণে এপারের সঙ্গে ওপারের যোগাযোগ স্থাপিত হয়েছে। বিপরীতে ক্ষতির পরিমাণও অপরিমেয়। আগে সারি নদীতে পাহাড়ি ঢল বেকরা নদী দিয়ে ৪-৫ ঘণ্টার মধ্যেই নেমে যেত; এখন কয়েক দিন লাগছে। সেই সঙ্গে নদীভাঙনও হয়েছে তীব্রতর। যাদের যাতায়াত সুবিধার কথা বলে তহবিল সংগ্রহ করা হয়েছিল, তাদেরও অনেকে এখন ভাঙনের কবলে পড়ে ভিটে-মাটিছাড়া। এই বাঁধের কারণে জৈন্তাপুর ও গোয়াইনঘাট উপজেলার পরিবেশ, জীববৈচিত্র্য ও আর্থসামাজিক পরিস্থিতির ওপর বিরূপ প্রভাব ক্রমেই প্রকট হচ্ছে।  


২০১৭ সালে বাঁধ নির্মাণ সমাপ্তির পর থেকেই বিরূপ প্রভাব নিয়ে স্থানীয় ও জাতীয় সংবাদমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হতে থাকে। বাঁধটি অপসারণের দাবিতে শতাধিক এলাকাবাসী ২০১৮ সালের ২১ জুন সিলেট জেলা প্রশাসককে স্মারকলিপি দেন। বিভাগীয় কমিশনার ২৩ জুলাই ‘জরুরি ভিত্তিতে আইন ও বিধি মোতাবেক বাঁধ অপসারণের ব্যবস্থা’ নিতে জেলা প্রশাসককে দাপ্তরিক চিঠি দেন। কিন্তু আজ পর্যন্ত বিভাগীয় কমিশনারের নির্দেশনা বাস্তবায়িত হয়নি। ক্ষতিগ্রস্ত নাগরিক ও পরিবেশকর্মীরা বারবার যোগাযোগ করলেও মেলেনি সদুত্তর।


‘সারি নদী বাঁচাও আন্দোলন’ ২০২০ সালের ২৮ অক্টোবর জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন বরাবর হিদাইরখাল বাঁধ অপসারণের দাবি জানিয়ে চিঠি দেয়। ২০২২ সালের বন্যার সময় জেলা ত্রাণ ও দুর্যোগ কমিটির সভায় সিলেট-৪ আসনের সংসদ সদস্য ইমরান আহমদ পানি উন্নয়ন বোর্ডের বিভাগীয় প্রকৌশলীকে দ্রুততম সময়ে হিদাইরখাল বাঁধ অপসারণের নির্দেশ দেন। কিন্তু পাউবো প্রথম থেকেই ‘বিশেষজ্ঞদের মতামত সাপেক্ষে’ অপসারণের কথা বলে আসছে। পরবর্তী সময়ে ‘ইনস্টিউট অব ওয়াটার মডেলিং’ বাঁধটি অপসারণের পক্ষে প্রতিবেদনও দেয়। গোয়াইনঘাট উপজেলা পরিষদের একাধিক সভায় বাঁধটি দ্রুততম সময়ে অপসারণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। কিন্তু কোনো এক রহস্যময় কারণে বাঁধটি আজও অপসারণ করা হয়নি।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও