সবুর ও জয়নালের মৃত্যুর দায় কি রাষ্ট্র এড়াতে পারে?
'স্বাস্থ্যসেবায় ব্যয় বেড়েছে ৩ গুণ।' সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম) এবং ম্যানচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্লোবাল ডেভেলপমেন্ট ইনস্টিটিউটের এক যৌথ গবেষণার বরাত দিয়ে যেদিন এই প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়, তার আগের দিন রাজধানীর হাতিরঝিলের মধুবাগে ওষুধ কিনতে না পেরে জয়নাল আবেদীনের (৪৫) আত্মহত্যার খবর ছড়িয়ে পড়ে গণমাধ্যম ও সোশ্যাল মিডিয়ায়।
মহান স্বাধীনতা দিবসের সন্ধ্যায় পেটে ছুরি ঢুকিয়ে আত্মহত্যা করেন জয়নাল। গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করা জয়নালের স্ত্রী সাংবাদিকদের জানান, বছর চারেক আগে তার স্বামীর হার্টে অসুখ ধরা পড়ে। কিন্তু এই রোগের চিকিৎসা করাতে অনেক টাকা-পয়সা লাগে। জয়নাল রিকশা চালাতেন। কিন্তু হার্টে অসুখ ধরা পড়ার পরে থেকে তিনি সেভাবে কোনো কাজ করতে পারতেন না।
জয়নালের স্ত্রী আরও বলেন, জয়নালের পক্ষে নিয়মিত ওষুধ কেনা সম্ভব হতো না। ঘটনার দিন সন্ধ্যার পর শরীরের ব্যথায় জয়নাল কাতর হয়ে পড়ছিলেন। টাকা না থাকায় তার জন্য ওষুধ আনা সম্ভব হয়নি। এই কষ্টে তার স্বামী নিজের পেটে চাকু চালিয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নেন। তাকে দ্রুত ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে গেলেও বাঁচানো যায়নি।
এর ঠিক আগের দিন গণমাধ্যমের আরেকটি খবরের শিরোনাম, 'পুলিশ থেকে বাঁচতে জীবনটাই দিলেন সিএনজিচালক'। খবরে বলা হয়, চট্টগ্রামের চন্দনাইশে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে সিলিন্ডার বিস্ফোরণে এক সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালকের মৃত্যু হয়েছে।
পুলিশ দেখে পালাতে গিয়ে ট্রাকের সঙ্গে ধাক্কায় বিস্ফোরণের পর আগুন লাগলে এ দুর্ঘটনা ঘটে। এতে ওই গাড়িতে থাকা তিন যাত্রী বের হতে পারলেও ভেতরেই পুড়ে মারা যান চালক আব্দুস সবুর।
দুটি ভিন্ন ঘটনা, কিন্তু একসঙ্গে আলোচনা করা দরকার।
১.
বাংলাদেশের সাম্প্রতিক অর্থনীতি কেমন আছে, তা নিয়ে নিয়মিত গণমাধ্যমে সংবাদ ও বিশ্লেষণ প্রকাশিত হচ্ছে। এর পক্ষে-বিপক্ষেও নানা মত আছে। নিত্যপণ্যের দাম নিয়ে সাধারণ মানুষের যেমন ক্ষোভ আছে, তেমনি করোনা মহামারির পর থেকে বিশ্ব যে ধরনের সংকটের ভেতর দিয়ে যাচ্ছে, সেরকম একটি কঠিন পরিস্থিতিতেও বাংলাদেশের মতো একটি ছোট্ট আয়তনের দেশে যে প্রায় ১৮ কোটি মানুষ অন্তত খেয়েপরে বেঁচে আছে; কোথাও যে খাদ্য সংকট বা দুর্ভিক্ষের মতো পরিস্থিতি দেখা দেয়নি; নানাবিধ সংকটের ভেতরেও দেশের অর্থনীতি যে ভেঙে পড়েনি, সেটিও কম কথা নয়।
উপরন্তু হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নানাবিধ উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। এরকম পরিস্থিতিতেও ওষুধ কিনতে না পেরে একজন মানুষকে আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে হলো কেন? এর দায় কি রাষ্ট্রের নয়?
ঘটনার পর বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী রাস্তাটি অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। পুলিশের একটি গাড়ি ঘটনাস্থল অতিক্রম করার চেষ্টা করলে আন্দোলনকারীরা তা ভাঙচুরের চেষ্টা করেন। পরে চন্দনাইশ থানা পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।