মন্ত্রী-এমপির টাকা এত বাড়ে কেন?
সংসদ নির্বাচনে সবাই মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। এর মধ্যে যারা এর আগেও এমপি ছিলেন তাদের সম্পদ বৃদ্ধির হার দেখে আমরা সবাই বিস্মিত হয়েছি। দুই একজন ব্যতিক্রম ছাড়া সব এমপির সম্পদই নাটকীয়ভাবে বেড়েছে। কারও কারও সম্পদের পরিমাণ পাঁচ বছরে একশ বা দেড়শ গুণ বা তার বেশিও বৃদ্ধি পেয়েছে।
শতকরা একশ ভাগ নয়, একশ গুণ। টাকার অঙ্কে হিসাব করলে, একজন এমপির সম্পদের পরিমাণ যদি আগেরবার থাকে এক কোটি টাকা, দেড়শ গুণ বৃদ্ধি পাওয়া মানে তা এখন দাঁড়িয়েছে দেড়শ কোটি টাকায়।
গণমাধ্যমে আমরা তা নিয়ে অনেক প্রতিবেদন দেখেছি। তথ্যগুলো প্রকাশিত হয়েছে প্রার্থীদের জমা দেওয়া হলফনামার ভিত্তিতে। এইসব হলফনামা আয়করের হিসাবের সাথে মিলিয়ে তৈরি করা হয় এবং এইসব তথ্য সাধারণত বাস্তবের চেয়ে কম থাকে। অর্থাৎ এইসব সম্পদ বিবরণীতে প্রদত্ত হিসাব প্রকৃত সম্পদের চেয়ে কম দেখানো হয়।
সময়ের সাথে সাথে একজন মানুষের সম্পদের পরিমাণ বৃদ্ধি পেতেই পারে। এমপিরা সাধারণত দরিদ্র নন এমনকি মধ্যবিত্তও নন। সবাই সচ্ছল বিত্তবান। বিত্তবানদের বিত্ত যে খানিকটা বৃদ্ধি পাবে তা এমনিতে অস্বাভাবিক কিছু নয়। কিন্তু তাই বলে শতগুণ!
বিশেষ করে যারা সার্বক্ষণিক রাজনীতি করেন এবং আমার জানামতে যাদের কোনো রমরমা ব্যবসা নেই তাদের এইরকম জ্যামিতিক প্রবৃদ্ধি খানিকটা রহস্যময়ও বটে। এমনকি যারা ব্যবসা করেন, তাদের ক্ষেত্রেও কথা আছে।
কী এমন ব্যবসা রয়েছে দেশে যেসব ব্যবসায় মাত্র পাঁচ বছরে সম্পদের পরিমাণ একশ গুণ বেড়ে যেতে পারে? নাকি এমপি হলেই এমন কোনো জাদুর কাঠি পাওয়া যায় যার ছোঁয়ায় ব্যবসায় কোনো লোকসান হয় না আর মুনাফা এত হারে বাড়ে যে, পাঁচ বছরের মাথায় সম্পদ একশগুণ বেড়ে যায়!
এই রহস্য অদ্ভুত তো বটেই, আমরা যদি এমপিদের মাসিক বেতন-ভাতা ইত্যাদির হিসাব দেখি তাহলে আরও বিস্মিত হবো। প্রতি মাসে কত টাকা পান একজন সংসদ সদস্য? হিসাবটা বলে দেই।
প্রতিজন সংসদ সদস্য প্রতি মাসে বেতন পান ৫৫,০০০ টাকা। সেই সাথে যোগ হয় নির্বাচনী এলাকার ভাতা বাবদ মাসিক ১২,৫০০ টাকা। মাসিক সম্মানী ভাতা ৫,০০০, পরিবহন ভাতা ৭০,০০০ আর নির্বাচনী এলাকার অফিস খরচ বাবদ মাসে ১৫,০০০ টাকা পান। সব মিলিয়ে প্রতি মাসে ১,৫৭,৫০০ টাকা। এর বাইরে ঢাকায় এমপি হোস্টেলে আবাসন সুবিধা, টেলিফোন বিল বাবদ কিছু টাকাও এমপিরা পেয়ে থাকেন। এই টাকায় একজন সংসদ সদস্যের নিজের এবং তার পরিবারের জীবনযাত্রা ঠিকঠাক পরিচালিত হয়?