চামড়া শিল্পে কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কেন জরুরি
কাঁচা চামড়া ব্যবহারযোগ্য করতে ট্যানিং ও ফিনিশডের বিভিন্ন পর্যায়ে নানান ধরনের কঠিন বর্জ্য তৈরি হয়। সঠিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের প্রকৃত ব্যবহার এবং নানান ধরনের নতুন নতুন ব্যবহার্য পণ্য তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে। কাঁচা চামড়া নানা ধরনের প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে ধাপে ধাপে পার হয়ে একটি নতুন পণ্য প্রস্তুতে ব্যবহার হয়। এ প্রক্রিয়ার ধাপগুলো হলো: সোকিং, লাইমিং, ডিলাইমিং, ব্যাটিং ও সর্বশেষ ট্যানিং। চামড়া প্রক্রিয়ার বিভিন্ন ধাপে নির্গত বর্জ্য সঠিকভাবে ব্যবহারের মাধ্যমে নতুন পণ্য তৈরিতে এবং ব্যবসায় অবদান রাখতে পারে যার জন্য প্রাথমিক প্রয়োজন শুধু প্রতি ধাপে নির্গত বর্জ্যের ধরন ও পরিমান জানা। দুর্ভাগ্যজনকভাবে সাভারের ট্যানারি এস্টেটে এখন পর্যন্ত কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কোনো ব্যবস্থা নেই, যদিও সেখানে সিইটিপির মাধ্যমে তরল বর্জ্য পদার্থ ব্যবস্থাপনা একটি বহুল আলোচিত বিষয়।
গবেষণা থেকে জানা যায় যে কঠিন বর্জ্য থেকে জেলাটিন, জুতার সোল, মোজা, গ্লাভস, অ্যাপ্রন ও লেদার বোর্ড ইত্যাদি তৈরি করা সম্ভব। তাছাড়া এ বর্জ্য সিমেন্ট ফ্যাক্টরিতেও ব্যবহার করা যায়। এছাড়া অন্যান্য সহায়ক চামড়াজাত আনুষঙ্গিক পণ্য তৈরি করাও সম্ভব। ২০২০ সালে প্রকাশিত একটি বৈজ্ঞানিক জার্নাল ও প্রকৌশল গবেষণা থেকে জানা যায়, প্রতি ভগ্নাংশ কঠিন বর্জ্যের সঠিক ব্যবস্থাপনা কম খরচে ও পরিবেশবান্ধব উপায়ে বৈচিত্র্যপূর্ণ পণ্য তৈরি করতে সক্ষম। এ গবেষণায় দেখা যায় যে কঠিন বর্জ্যের সিংহভাগই ফ্লেশিং যার মধ্যে স্নেহ, আমিষ ও অবশিষ্ট কেমিক্যাল থাকে যেমন লাইম ও সালফাইড থাকে, যা বিমহাউসে পশম ছাড়ানোর কাজে ব্যবহৃত হয়। শর্করা ও আমিষের তুলনায় স্নেহপদার্থের গ্যাসের কার্যকারিতা বেশি। সুতরাং লিপিডসমৃদ্ধ বর্জ্যকে নবায়নযোগ্য শক্তির আধার হিসেবে ধরে নেয়া যায়। দেশের গবেষকদের জন্য এ প্রক্রিয়া বাস্তবায়নের জন্য আরো উন্নত গবেষণা প্রয়োজন। তবে এ অব্যবহৃত বর্জ্যের ব্যাপারে যতটুক জানা গেছে তা থেকেই এর অপার সম্ভাবনার কথা উপলব্ধি করা যায়।
এশিয়া ফাউন্ডেশনের সাম্প্রতিক গবেষণায় ট্যানারি শিল্পের ১১টি কঠিন বর্জ্য চিহ্নিত হয়েছে যেগুলো হলো: ট্রিমিং, স্প্লিটের আগে ট্রিমিং, স্প্লিট লেদার ট্রিমিং অংশ, শেভিংয়ের আগে ট্রিমিং, শেভিং ডাস্ট, ট্রিমিং সেটিং, টোগল ট্রিমিং, ক্রাস্ট ট্রিমিং, বাফিং ডাস্ট ও ফিনিশড লেদার ট্রিমিং। এ কঠিন বর্জ্যগুলোর কিছু বর্তমানে স্থানীয় পর্যায়ে ব্যবহারের জন্য বিভিন্ন পণ্য তৈরিতে ব্যবহৃত হয় ও বাকিগুলো সরাসরি ফেলে (ডিসপোজাল) দেয়া হয়। পরিবেশের সুরক্ষা এক্ষেত্রে একটি গভীর উদ্বেগের বিষয়, যেহেতু এ খাতের বেশির ভাগ অংশই এখনো অনানুষ্ঠানিক (ইনফরমাল) পর্যায়ে থেকে যায়। এ ব্যাপারে এখনই সঠিক পরিকল্পনা করা দরকার, যাতে এগুলো এমনভাবে ব্যবহার করা যায়, যাতে পরিবেশের ক্ষতি না হয় এবং জীবন রক্ষার অন্তরায় না হয়।
এ গবেষণায় উন্মোচিত হয় যে সাভার ট্যানারি ইন্ডাস্ট্রিয়াল এস্টেটের তথ্যমতে, পিক মৌসুমে প্রাথমিক ৪৮ দিনে (২৯ জুন ২০২৩ থেকে শুরু) গড়ে ৮১,২৭৮ পিস চামড়া দৈনিক প্রক্রিয়ার জন্য আসে। বাংলাদেশে ট্যানারির কঠিন বর্জ্যের আনুমানিক বার্ষিক উৎপাদন ৭৩,৫৮৮ টন থেকে ৯০,৭৯৫ টন। এ বর্জ্যগুলো সঠিকভাবে ব্যবস্থাপনা করা হলে তা পরিবেশের সঠিক সংরক্ষণের পর তা অর্থনৈতিক উন্নয়নেও ব্যাপক অবদান রাখতে পারে। কিন্তু সমগ্র সাপ্লাই চেইনে আনুষ্ঠানিকতার অভাবের জন্য এ বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় এখন পর্যন্ত সীমিত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে ও সমাজে ঝুঁকি তৈরি করার জন্য এটি পৌরসভাগুলোর মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ অবস্থার উত্তরণ দরকার যাতে সামগ্রিকভাবে এ খাতের জন্য তা বোঝা না হয়ে বরং আশীর্বাদ হতে পারে।
- ট্যাগ:
- মতামত
- চামড়া শিল্প
- বর্জ্য ব্যবস্থাপনা