অবরোধে বিপন্ন শিক্ষক-শিক্ষার্থী
বাংলাদেশের একজন সচেতন নাগরিক, একজন শিক্ষক হিসেবে আমি বড্ড বিপন্ন বোধ করছি। মাধ্যমিক পর্যায়ের একজন শিক্ষক হয়ে বছরের প্রথম থেকে শুনেছি নির্বাচনের বছর হওয়ায় সিলেবাস ও পরীক্ষা তাড়াতাড়ি শেষ করতে হবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়, মাউশি বারবার সতর্ক করে চিঠি দিয়েছে ৩০ অক্টোবরের মধ্যে সিলেবাস শেষ করতে হবে। ৩০ নভেম্বরের মধ্যে বার্ষিক পরীক্ষা সম্পন্ন করে ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে ফলাফল প্রকাশ করতে হবে। সেই অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার রুটিনও দেওয়া হয়েছে।
নতুন কারিকুলামে প্রথম, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির মূল্যায়নের নির্দেশাবলি চলে এসেছে মাউশি থেকে। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির প্রস্তুতিমূলক ও চূড়ান্ত মূল্যায়নের সময়সূচি দিয়েছে। সেই অনুযায়ী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেছে বেশ আগে থেকেই। নতুন কারিকুলামটি অত্যন্ত সুন্দর, সময়োপযোগী শিক্ষার্থীবান্ধব, আনন্দময়, সৃষ্টিশীল শিক্ষাক্রম হলেও শিক্ষক-শিক্ষার্থী-অভিভাবক সবার কাছেই এটি এক নতুন অভিজ্ঞতা। সে কারণে খুব গুছিয়ে সময় নিয়ে বুঝে ও বুঝিয়ে মূল্যায়ন করা বাঞ্ছনীয়। নয়তো আমাদের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের প্রতি অবিচার করা হবে। এই শিক্ষাক্রমে শ্রেণি মূল্যায়ন রয়েছে। শিক্ষকেরা সারা বছর ধরে বই ও খাতায় অভিজ্ঞতাভিত্তিক নানা কাজের ছক পূরণ, পোস্টার ও প্রেজেন্টেশন তৈরি, নানা ধরনের মেলা ও খেলাধুলা থেকে শুরু করে বিভিন্ন ব্যবহারিক কাজ করিয়ে মূল্যায়ন করেন। বাকি আছে সামষ্টিক মূল্যায়নের দুটি পর্ব—একটি প্রস্তুতিমূলক, আরেকটি চূড়ান্ত মূল্যায়ন।
প্রতি বিষয়ে দুদিন করে প্রস্তুতিমূলক মূল্যায়ন করানো হবে, যার প্রতি সেশনের সময় ৯০ মিনিট এবং চূড়ান্ত মূল্যায়ন প্রতি বিষয়ে একটি ৪ ঘণ্টার সেশন হবে। এই দুই মূল্যায়নে যা এবং যেভাবে কাজ করতে হবে তার সম্পূর্ণ নির্দেশনা ৬ নভেম্বর আমরা পেয়েছি। এখন বাকি আছে নির্দেশনার মধ্যে শিক্ষার্থীদের যে অংশটুকু, সেটুকু বুঝিয়ে দেওয়া।
২. বিএনপিসহ শরিক দলগুলোর টানা অবরোধের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শিক্ষার্থীরা। দ্বিতীয় থেকে পঞ্চম, অষ্টম ও নবম শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষা তো শুরুই করা যাচ্ছে না অবরোধের কারণে। লাখ লাখ শিক্ষার্থীর জীবন অনিশ্চয়তায় নিমজ্জিত। এ অবস্থায় অক্টোবর মাসের শেষ থেকে আন্দোলনের নামে হরতাল, অবরোধ, নাশকতা শুরু হলো দেশজুড়ে। এই অরাজক অবস্থায় মা-বাবারা নিজেদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নিজ কর্মক্ষেত্রে যাচ্ছেন, বাজার-হাট সবই করছেন; কিন্তু সন্তানের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠাতে সাহস পাচ্ছেন না। না পাওয়াটাই স্বাভাবিক। কারণ যেভাবে গণপরিবহনে আগুন দেওয়া হচ্ছে, তাতে কোনো অভিভাবকই সন্তানকে স্কুলে পাঠানোর সাহস পাবেন না। ফলে অধিকাংশ শিক্ষার্থীর অনুপস্থিতিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। শিক্ষকেরা চাকরির দায়ে বিপদ মাথায় নিয়ে বিদ্যালয়ে উপস্থিত হচ্ছেন ঠিকই; কিন্তু পরীক্ষা নেওয়া তো দূরের কথা, সুন্দরভাবে মূল্যায়ন কার্যক্রমটি শ্রেণিকক্ষে বুঝিয়ে দেওয়ার সুযোগটি পাওয়া যাচ্ছে না।