ইউএনও নারী, ম্যাজিস্ট্রেট নন?
মুক্তিযুদ্ধে কাদের সিদ্দিকীর গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকার কথা তো স্বীকার করতেই হবে। ‘কাদেরিয়া বাহিনী’ নামে পরিচিত মুক্তিযোদ্ধাদের সবচেয়ে শক্তিশালী গেরিলা দলটির নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তিনি। তবে বিজয়ের অব্যবহিত পর থেকে নানা বিতর্কের জন্ম দিয়ে আসছেন। বিজয় দিবসের দু-দিন পরই ঢাকার পল্টন ময়দানে প্রকাশ্যে বিহারীদের হাত-পা বেঁধে বেয়নেট দিয়ে হত্যা করার দায় তাঁর এবং তাঁর বাহিনীর ওপরই বর্তেছিল। এই একটি ঘটনাকে বহুবার বহুভাবে মুক্তিযুদ্ধবিরোধীরা নয় মাসের গণহত্যাকে গৌণ করে দিতে ব্যবহার করা হয়েছে। তবু এই বীর মুক্তিযোদ্ধাকে গভীর ভালোবাসা দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। দীর্ঘদিন তিনি ছিলেন আওয়ামী লীগের ১ নম্বর সদস্য। বঙ্গবন্ধু যে তাঁকে খুব ভালোবাসতেন এই কথা কাদের সিদ্দিকী নানান অপকর্ম করার সময় আমাদের মতো আমজনতাকে মনে করিয়ে দিতে চান। সর্বশেষ গত ২৯ এপ্রিল সখীপুরেও তাই করেছেন।
টাঙ্গাইলের সখীপুরে একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার মৃত্যুর পর রাষ্ট্রীয় সম্মান জানাতে আসা সেখানকার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফারজানা আলমকে বাধা দিয়েছেন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি কাদের সিদ্দিকী। ইউএনও একজন নারী এবং নারী ইউএনওর নেতৃত্বে রাষ্ট্রীয় সম্মান বা গার্ড অব অনার জানানো ‘শরিয়ত পরিপন্থি’ বলে উল্লেখ করেন একদা ‘বঙ্গবীর’ কাদের সিদ্দিকী। এই ‘রঙ্গ’ করার সময়ও তিনি সমবেতজনের উদ্দেশে বলেছেন, “এখন বঙ্গবন্ধু থাকলে এখানকার অনেক অফিসারদের লাথি মেরে ঢাকা পাঠিয়ে দিতাম।”
কী বিচিত্র কাদেরের বাসনা। সাধারণ কাণ্ডজ্ঞান থাকলে কাদের সিদ্দিকী বুঝতেন, মুসলিম লীগের এক কিশোর সদস্য শেখ মুজিবুর রহমান কিভাবে আওয়ামী লীগ গঠন করলেন, হয়ে উঠলেন বঙ্গবন্ধু, প্রতিষ্ঠা করলেন ধর্মনিরপেক্ষ একটি রাষ্ট্র। কেমন করে কাদের সিদ্দিকী ভাবতে পারেন, তাঁর মতো কূপমণ্ডুকে পরিণত হওয়া পরিত্যক্ত এক মুক্তিযোদ্ধাকে এখনও বেঁচে থাকলে প্রশ্রয় দিতেন বঙ্গবন্ধু?
গত ২৯ এপ্রিল দুপুরে সখীপুর কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ প্রাঙ্গণে সখীপুর বাজার বণিক সমিতির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হামিদ খানের জানাজা ও গার্ড অব অনারে এ ঘটনাটি ঘটে।
জানাজার আগে কাদের সিদ্দিকী বক্তব্য দেন এবং বলেন, “আমি আজ মর্মাহত পুলিশের গার্ড অব অনার নিয়ে। রাত ১২টার সময় একজন শ্রেষ্ঠ মুক্তিযোদ্ধার মৃত্যু। আর (শনিবার) বেলা দুইটার সময়েও একজন ম্যাজিস্ট্রেট রাখা হয় নাই। এখন বঙ্গবন্ধু থাকলে এখানকার অনেক অফিসারদের লাথি মেরে ঢাকা পাঠিয়ে দিতাম।” নারী ইউএনওকে আটকানোর ব্যাখ্যা দিয়ে বলেছেন, “মেয়ে যত বড়ই হোক, জানাজায় সামিল হওয়া তার সুযোগ নেই, পুরুষের সাথে।”
দীর্ঘদিন ধরে মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে কাজ করার কারণে বঙ্গবীর বলে অভিহিত কাদের সিদ্দিকীর গণমাধ্যমে উঠে আসা বক্তব্যটি কয়েকবার পড়লাম। মনে কয়েকটি প্রশ্নও জেগেছে। সচেতন নাগরিকদের মনেও নিশ্চয়ই ওই প্রশ্নগুলো আসবে।