ভোটের মালিকানা ফেরাতে হবে
রাজনীতিক পঙ্কজ ভট্টাচার্যের ৮০তম জন্মদিন উপলক্ষে ২০১৯ সালের ৬ আগস্ট এই সাক্ষাৎকারটি প্রথম আলোয় প্রকাশিত হয়। ৮৩ বছর বয়সী প্রবীণ এই রাজনীতিকের জীবনাবসান হয় রোববার রাতে। ১৯৩৯ সালের ৬ আগস্ট চট্টগ্রামের নোয়াপাড়ায় তাঁর জন্ম। ছাত্রজীবনেই বাম রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। মুক্তিযুদ্ধের সময় ন্যাপ, কমিউনিস্ট পার্টি ও ছাত্র ইউনিয়নের সমন্বয় গঠিত গেরিলা বাহিনীর অন্যতম সংগঠক ছিলেন। স্বাধীনতার পর ন্যাপের সাধারণ সম্পাদক হন। রাজনীতির বাইরে সামাজিক আন্দোলনের সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন তিনি।
৮০তম জন্মদিন উপলক্ষে প্রথম আলোর পক্ষ থেকে আপনাকে অভিনন্দন। আলোচনা শুরু করতে চাই আপনার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা দিয়ে। সাতচল্লিশের দেশভাগের কথা কি আপনার মনে আছে?
পঙ্কজ ভট্টাচার্য: দেশভাগের সময় আমার বয়স ৯ বছর। কিছু কিছু মনে আছে। আজ বাংলাদেশে যেভাবে সাম্প্রদায়িকতা বিস্তার করছে এবং ক্ষমতার রাজনীতি তা দেখেও না দেখার ভান করছে, সে সময়ে কিন্তু সে রকম ছিল না। আমার মনে আছে, চট্টগ্রামে মুসলিম লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক দুজনেই দাঙ্গা দমনে সর্বাত্মক চেষ্টা করেছেন। তাঁরা বলেছেন, হিন্দুদের ওপর হামলা হলে হামলাকারীদের গুলি করে মারা হবে। বর্তমান অবস্থার সঙ্গে তুলনা করলে সে সময়ে সামাজিক সম্প্রীতি অনেক সুদৃঢ় ছিল। সাধারণ মানুষ দাঙ্গাবাজদের রুখে দিয়েছে। ছেলে দাঙ্গায় জড়িত ছিল বলে চট্টগ্রাম মুসলিম লীগের সভাপতি তাঁকে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছেন। এখন কি এমনটি ভাবা যায়?
দেশভাগের সময় আপনার পরিবারও তো ভাগ হয়ে গেল। আপনি এখানে থেকে গেলেন?
পঙ্কজ ভট্টাচার্য: সাতচল্লিশে আমার মা-বাবা, ভাই-বোন—সবাই এখানে ছিলেন। ১৯৬২ সালে দুই ভাই ভারতে চলে যান। এক ভাইয়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা হয়েছিল। বাবা চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুলের শিক্ষক ছিলেন। ১৯৬২ সালে আমি প্রথম গ্রেপ্তার হই। ১৯৬৪ সালে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা শুরু হলে মা–বাবা দেশ ত্যাগ করতে বাধ্য হন। আমি তখন চট্টগ্রাম জেলে। কারা কর্তৃপক্ষ কুমিল্লা জেলে পাঠানোর আগে মা–বাবার সঙ্গে দেখা করার সুযোগ দেয়। বাবা বললেন, আমি তোমাকে পরিবারের দায়িত্ব নিতে বলেছিলাম। তুমি দেশের দায়িত্ব নিতে রাজনীতিতে গেলে। আমাদের দেখার কেউ রইল না। এ অবস্থায় ভারতে যাওয়া ছাড়া উপায় নেই। আমি যেই ট্রেনে চট্টগ্রাম থেকে কুমিল্লা আসি, সেই ট্রেনেই মা–বাবা দেশান্তরিত হলেন।
কীভাবে ছাত্ররাজনীতিতে যুক্ত হলেন?
পঙ্কজ ভট্টাচার্য: ১৯৫৭ সালে আমি চট্টগ্রাম স্কুল থেকে বহিষ্কার হই। ২১ ফেব্রুয়ারিতে আমরা মিছিল বের করতাম। স্কুলের প্রধান শিক্ষকের দুর্নীতির বিরুদ্ধে আন্দোলন করি। নবম শ্রেণিতে পরীক্ষা দেওয়ার পর আমার ফল স্থগিত করা হলো। আমি ভালো ফুটবল খেলতাম। ফলে অন্য স্কুল আমাকে সাগ্রহে ভর্তি করল। আমাদের স্কুল জেলায় চ্যাম্পিয়ন হলো। জাতীয় পর্যায়ে রানার্স আপ হয়। ১৯৫৮ সালে কলেজে ভর্তি হই। সামরিক শাসন জারি হওয়ার পর প্রকাশ্যে ছাত্ররাজনীতি বন্ধ। ছাত্র ইউনিয়নের কর্মীরা ইউএসপিসি নামে সংগঠিত হতে থাকেন। ১৯৬০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগে ভর্তি হলাম। জগন্নাথ হলের আবাসিক ছাত্র। সেখানে ঋষিতুল্য মানুষ অধ্যাপক জি সি দেবের সান্নিধ্যে আসি। তিনি ছাত্রদের সন্তানের মতো দেখতেন। ১৯৬২ সালে একবার জেলে যাই। ১৯৬৪ সালের মোনায়েম খানের সমাবর্তন বানচাল করার দায়ে আবার গ্রেপ্তার হই।
- ট্যাগ:
- মতামত
- ভোটাধিকার
- ভোটার
- ছাত্র রাজনীতি