অস্ট্রেলিয়া-বাংলাদেশ ঐতিহাসিক সম্পর্ক ও বন্ধুত্ব
২৪ জানুয়ারি অস্ট্রেলিয়া দিবস। দিনটি স্মরণ করা হয় অস্ট্রেলিয়া মহাদেশের ইউরোপীয় অভিবাসনের সূচনা দিবস হিসেবে। অস্ট্রেলিয়া এক অতি প্রাচীন বিশাল মহাদেশ। এখানে ৬০ হাজার বছর আগে প্রাচীন মানুষ এসে আদিমতম অভিবাসন শুরু করেছিল। সে নিরিখে ১৭৭০ সাল নেহাত সেদিন-যখন আধুনিক পশ্চিমাদের অস্ট্রেলিয়ায় গোড়াপত্তন হয়েছিল। আর সেই ইউরোপকেন্দ্রিক অস্ট্রেলিয়ার সূচনা দিবসই হলো ২৪ জানুয়ারি, অস্ট্রেলিয়া ডে বা অস্ট্রেলিয়া দিবস।
১৭৭০ সালে এ দখলদারি অভিবাসনের শুরু। প্রথমে এখানে পাঠানো হয়েছিল দাগি আসামিদের; ইংল্যান্ডে নানা অপরাধে দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার শুরু।সেই হিসেবে দেশটি অপরাধীদের অভয়ারণ্য হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু হয়েছে তার উল্টো; পরশপাথরের ছোয়ায় আপাতমূল্যহীন লোহাও যেভাবে সোনা হয়ে যায় তেমনি অস্ট্রেলিয়ার পরিবেশ ওই অপরাধীদের পাল্টে দেয়; নিঃশেষ হয়ে যাওয়া ছাইয়ের ভেতরেও যেভাবে লুকিয়ে থাকে স্ম্ফুলিঙ্গ, সেভাবে মানুষ তাদের অপরাধের সাজা ও বেদনাকে ছাপিয়ে ক্রমেই বিশাল হয়ে উঠেছিল এবং তিন শতাব্দী ধরে এখানে নির্মাণ করেছে সম্পদশালী সুশৃঙ্খল গণতন্ত্রমনা এক সমাজ। তবে এ কথা ঠিক, আমরা অস্ট্রেলীয়রা (অস্ট্রেলিয়ার নাগরিকত্বে আমি নাম লিখিয়েছি নব্বই দশকের শুরুতে) আজ অবধি একটা আদর্শিক রাষ্ট্র ও সমাজ গঠন করতে পারিনি।
আমাদের অনেকের এখনও রয়ে গেছে এ দেশের আদিবাসীদের প্রতি অবহেলা, এমনকি ঘৃণা করার ইচ্ছা। অনেকে বাহ্যিক বর্ণবাদ ত্যাগ করলেও হৃদয়ের বর্ণবাদকে ত্যাগ করতে পারেনি। তবু পৃথিবীর মানচিত্রের দিকে যখন তাকাই, তখন আধুনিক বিশ্বে এমন একটা দেশ চোখে পড়ে না যাকে অন্তত সভ্যতা-সংস্কৃতির উন্নত অবস্থার নিরীখে অস্ট্রেলিয়ার সাথে তুলনা করা যায়। এ দেশই প্রথম অ্যাবঅরিজিনস তথা স্থানীয় আদিবাসীদের কাছে তাদের প্রতি ইুরোপীয়দের কৃত অন্যায় ও অপরাধের জন্য ক্ষমা ভিক্ষা করেছে। সেই 'আদিপাপ' স্খালনের প্রয়াস হিসেবে রাষ্ট্র ক্ষমতায় আদিবাসীদের ন্যায়সঙ্গত হিস্যা দেওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
- ট্যাগ:
- মতামত
- অভিবাসন
- অস্ট্রেলিয়া দিবস