খেলা শুরুর আগেই এ কোন খেলা
বৃহস্পতিবার রাতে টিভিতে দেখলাম বরিশালের মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ সেরনিয়াবাত সেখানকার যুবলীগ নেতা-কর্মীদের ঢাকায় আসার বিষয়টি তদারক করছেন। সঙ্গে কত বোতল পানি আনা হয়েছে, তা-ও জিজ্ঞাসা করলেন। তিনি একজন যুবলীগ কর্মীর উদ্দেশে হাসতে হাসতে বললেন, ‘সাদা চুল কালো করে যুবলীগ হইয়া গেছ।’ এর অর্থ ওই কর্মী যুবলীগের বয়সসীমা অনেক আগেই পার করেছেন। বরিশাল থেকে বাস-কার ছাড়াও লঞ্চযোগে যুবলীগ নেতা-কর্মীরা ঢাকায় এসেছেন গতকাল শুক্রবার ভোরে। প্রথম আলোর বরিশাল প্রতিনিধি এম জসীমউদ্দিনকে ফোন করলে জানান, বরিশাল থেকে ১০টি লঞ্চে কমপক্ষে ২০ হাজার নেতা-কর্মী ঢাকায় গেছেন। কেবল বরিশাল নয়, সারা দেশ থেকেই যুবলীগের নেতা-কর্মীরা বাস, লঞ্চ, ট্রেনে মহাসমাবেশে এসেছেন। সংগঠনটির সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে এই বিশাল আয়োজন।
গতকাল সকালে বাসা থেকে প্রথম আলো অফিসে আসতে সোনারগাঁও হোটেলের পূর্ব পাশে দেখা গেল একদল তরুণ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। সবার গায়ে স্থানীয় যুবলীগ নেতার নামাঙ্কিত গেঞ্জি। অফিসে বসে যখন এই কলাম লিখছি, তখন কাজী নজরুল ইসলাম অ্যাভিনিউ থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল যাচ্ছিল সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের দিকে। বেলা আড়াইটায় সমাবেশ হওয়ার কথা থাকলেও সকাল থেকে সেখানে নেতা-কর্মীরা আসছিলেন।
এর পাশাপাশি আমরা ফরিদপুরে দেখছি ভিন্ন চিত্র। সেখানে বিএনপির গণসমাবেশ হওয়ার কথা আজ শনিবার। ৩৮ ঘণ্টা আগে গতকাল সকাল থেকে ফরিদপুরগামী সব বাস-মিনিবাস চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। চলবে না বিআরটিসির বাসও। সরকারি দলের নেতা-মন্ত্রীরা এত দিন বলতেন তাঁরা বিএনপির সমাবেশে বাধা দিচ্ছেন না। বাস চলাচল করতেও নিষেধ করেননি। বাসমালিক ও শ্রমিকেরা নিরাপত্তার ভয়ে যদি বাস বন্ধ রাখেন, তাঁদের কী করার আছে? আসলেই কি করার কিছু নেই? যেসব পরিবহনের মালিক ধর্মঘট ডাকেন, তাঁরা কি ভিন্ন গ্রহ থেকে এসেছেন? পরিবহনের মালিকদের দাবি, মহাসড়কে তিন চাকার নছিমন-করিমন-ভটভটি ইত্যাদি চলতে পারবে না। কিন্তু বিআরটিসির বাস কেন বন্ধ হলো? সরকার বলতে পারে, নিরাপত্তার কারণে। আমরা অতীতে দেখেছি, বিরোধী দলের হরতাল–অবরোধের মধ্যেও বিআরটিসির বাস চলেছে। প্রয়োজনে বাড়তি নিরাপত্তা দেওয়া হয়েছে। হরতাল–অবরোধে যখন বেসরকারি বাসমালিকেরা বাস চালাতে অস্বীকৃতি জানাতেন, তখনো বিআরটিসির বাস চলত। সে সময় বিরোধী দল (আওয়ামী লীগ আমলে বিএনপি ও বিএনপির আমলে আওয়ামী লীগ) ছিল মারমুখী ও বেপরোয়া। আর এখনকার বিরোধী দল একেবারে ‘নিরীহ’। আওয়ামী লীগের নেতাদের ভাষায় তাদের আন্দোলন করার মুরোদ নেই। ১৩ বছরে নাকি তারা ১৩ মিনিটের জন্যও রাজপথ দখলে রাখতে পারেনি। এই মুরোদহীন বিএনপি যেখানে সমাবেশ ডাকে, সেখানে বাস, ট্রেন, লঞ্চ বন্ধ রাখার কী যুক্তি থাকতে পারে? খেলা শুরুর আগেই কি আওয়ামী লীগ ভয় পেয়ে গেল?