মাটিলগ্ন মানুষ তাঁরা, চোখে তাঁদের মাটির মায়া
উপেন পথে বের হয়েছিলেন ‘মরিবার মতো ঠাঁই’টুকু হারিয়ে। নয়ন ক্ষত্রিয় তাঁর ‘ছায়াসুনিবিড় শান্তির নীড়’ ছেড়েছেন ‘দুই কাঠা জমি’ করার আশা বুকে নিয়ে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘দুই বিঘা জমি’ কবিতায় উপেনের শেষ সম্বলটুকু কীভাবে রাজার হস্তগত হয়, তার সকরুণ বর্ণনা নয়ন পড়েননি।
তবে তাঁর নিজের সকরুণ জীবনকথাও যে কোথাও লেখাজোখা নেই, থাকবেও না কোনো দিন, তা হয়তো তিনি বুঝতে পারেন। আর এ কারণেই বুঝি বলতে পারলেন, এক সরকার যায়, আরেক সরকার আসে, তাতে তাঁদের কী যায়-আসে। এক দিন কাজ না করলে তো পরের দিন উপোস।
দেশের মোট শ্রমশক্তির ৪০ দশমিক ৬ শতাংশ কৃষির ওপর নির্ভরশীল। তবে এর বড় অংশের হাতে নিজের জমি নেই। নয়ন ক্ষত্রিয় এই ভূমিহীন গোত্রের একজন। অবশ্য এখন তাঁর সেই ‘পরিচয়টুকু’ও ঘুচে গেছে। কৃষিকাজ ছেড়ে তিনি এখন রাজধানী ঢাকায় ভ্যানে করে ফলমূল বিক্রি করেন।
নয়নের বাড়ি ময়মনসিংহের ধোবাউড়া উপজেলার সেনপাড়া গ্রামে। নিজের জমি না থাকলেও অন্যের জমি বর্গা নিয়ে ফসল ফলাতেন তিনি। তাঁর বাবা নেপাল ক্ষত্রিয়ও কৃষিকাজ করেন। তবে বাঁশ-বেত দিয়ে ঝাঁকা-ঝুড়ি তৈরিতেও তিনি সিদ্ধহস্ত। এটা তাঁদের বংশপরম্পরার জীবিকা। যদিও এই ‘বসা-কাজ’ পছন্দ নয় নয়নের, তবু বিষয়টি আমলে নিয়ে তিনি বাপ-দাদার পেশাও ছেড়েছেন। নয়ন অবশ্য এখানে আরেকটি প্রশ্নও তুললেন, প্লাস্টিকের রমরমার যুগে বাঁশ-বেতের জিনিসপত্রের কদর কি আর আছে?
ইন্টারন্যাশনাল ফুড পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (ইফপ্রি) ২০১৯ সালের সমীক্ষা অনুযায়ী, বাংলাদেশের কৃষকেরা ৮১ শতাংশের বেশি ঋণ নেন বেসরকারি সংস্থা, বেসরকারি ব্যাংক, আত্মীয়স্বজন, দাদন ব্যবসায়ী, মহাজনসহ বিভিন্ন বেসরকারি উৎস থেকে। এসব ঋণের বিপরীতে সুদের হার ১৯ থেকে ৬৩। তবে কৃষি ব্যাংক থেকে দেওয়া ঋণের সুদহার মাত্র ৯। খুব অল্পসংখ্যক কৃষকেরই এ ঋণ পাওয়ার ‘সৌভাগ্য’ হয়। শতাংশের হিসাবে কৃষকের মোট ঋণের মাত্র ৬ শতাংশ আসে কৃষি ব্যাংক থেকে।