বাণিজ্যিক কৃষির গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ সঠিক তথ্য সংগ্রহ ও সরবরাহ নিশ্চিত করা
ড. এম. এ. সাত্তার মণ্ডল একুশে পদকপ্রাপ্ত কৃষি অর্থনীতিবিদ। তিনি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২১তম উপাচার্য ও বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রথম ইমেরিটাস অধ্যাপক। গবেষণায় অবদান রাখার জন্য ২০২২ সালে তিনি একুশে পদক লাভ করেন। অধ্যাপক সাত্তার মণ্ডল বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অর্থনীতি গ্র্যাজুয়েট। তিনি বাংলাদেশ সরকারের পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য হিসেবে দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন। বর্ণাঢ্য কর্মজীবনের অধিকারী তিনি কৃষি অর্থনীতি ও গ্রামীণ সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ডিন, বিভাগীয় প্রধান, সিন্ডিকেট সদস্য ছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন কমিটির গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। আসন্ন বাজেট উপলক্ষে দেশের কৃষির বর্তমান অবস্থান ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে বণিক বার্তার সঙ্গে কথা বলেন।
সাক্ষাৎকার নিয়েছেন এম এম মুসা
পাঁচ দশকে দেশের কৃষিতে মৌলিক কী পরিবর্তন হয়েছে বলে মনে করেন?
১৯৭৩ সালের জানুয়ারি থেকে আমি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা শুরু করি। বাংলাদেশের বয়স তখন কেবল এক বছর পার হয়েছে। এর মাত্র কয়েক দিন পরেই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেছিলেন। বিশাল এক সমাবেশে তিনি আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছিলেন, দেশকে বাঁচাতে হলে প্রথমে খাদ্য সমস্যার সমাধান করতে হবে। কৃষি উৎপাদন বাড়াতে হবে। আমরা বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে সাড়া দিয়েছি। সেদিন তিনি ঘোষণা দিলেন যে অন্যান্য কারিগরি গ্র্যাজুয়েটদের মতো কৃষি গ্র্যাজুয়েটরাও চাকরি ক্ষেত্রে প্রথম শ্রেণীর পদমর্যাদার গ্যাজেটেড স্ট্যাটাস পাবেন। এটা একটা ঐতিহাসিক ঘটনা। আমরা এতে খুব উদ্দীপিত হয়েছিলাম।
বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, তোমরা আমার কথা রেখো। এ দেশকে বাঁচানোর জন্য, খাদ্য উৎপাদন বাড়ানোর জন্য জ্ঞান-বিজ্ঞানের চর্চা, গবেষণা ও প্রযুক্তি উদ্ভাবন তোমরা করবে। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশনায় কৃষি স্নাতকরা অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে কাজটি করেছেন। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু খাদ্যাভাব, বন্যা-খরা ও দুর্যোগপীড়িত একটা পশ্চাত্পদ দেশ বঙ্গবন্ধু পেয়েছিলেন। এর ওপর যুদ্ধবিধ্বস্ত একটা অর্থনীতি। ৩০-৪০ লাখ টন খাদ্য ঘাটতি ছিল। অভাব-অনটনে মানুষ অত্যন্ত দুর্ভোগের মধ্যে ছিল। আজকের বাংলাদেশে খাদ্যাভাব নেই। খাদ্যাভাব নিম্ন আয়ের কারো কারো থাকতে পারে। সেটি খুবই নগণ্য। সব সমাজেই সেটি থাকে। খাদ্যাভাব বাংলাদেশের কোনো সমস্যা নয় এখন। তার সঙ্গে পুষ্টিনিরাপত্তাও অনেকটা বেড়েছে। কেবল ভাতের অভাব মিটেছে তা-ই নয়, মাছ-মাংস, দুধ-ডিম, উন্নত মানের শাকসবজিও আজ বাংলাদেশ নিজেই উৎপাদন করছে এবং বাজারে জোগান দিচ্ছে। সবটাতেই আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে গেছি, এ দাবি কেউ করে না। আমরাও করছি না। কোনো দেশই এটা করতে পারে না। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষের আয় সক্ষমতা বেড়েছে, সচ্ছলতা এসেছে। ঘরে খাবার আছে—এ নিশ্চয়তা মানুষকে অনেক বলীয়ান করেছে এবং আত্মবিশ্বাসের জন্ম দিয়েছে। আমাদের গবেষকরা যথেষ্ট পরিমাণ প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছেন। এটা আমাদের একটা আশাবাদের জন্ম দিয়েছে। কৃষি জ্ঞান-বিজ্ঞানের জগতে বাংলাদেশ ঐতিহাসিকভাবে অনেক উল্লেখযোগ্য নিদর্শন তৈরি করেছে। স্বাধীনতার পরে ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ নামে আখ্যায়িত একটি দেশ গড়ে প্রায় ৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করে অনুন্নত থেকে একটি উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা লাভ করেছে এবং উন্নত দেশ হওয়ার স্বপ্ন দেখছে। আমি মনে করি, এটা একটা বিস্ময়কর অর্জন।