বধ্যভূমি এবং বিস্মরণের ইতিহাস
জুলাই মাস, ১৯৯৯ সাল। স্থান, মিরপুর ১২ নম্বর ডি ব্লকের মুসলিম বাজার। ওখানকার একটি পুরোনো মসজিদের নাম 'নূরী মসজিদ'। ওই মসজিদে নামাজের সময় মুসল্লিদের স্থান সংকুলান হচ্ছিল না বলে মসজিদের পাশের খালি স্থানে এর সম্প্রসারণ কাজ শুরু হয় ওই সময়। নির্মাণকাজের জন্য শ্রমিকরা মাটি খুঁড়তে থাকে কোনো এক সকালে। বেলা গড়িয়ে দুপুর। শ্রমিকরা খাবার শেষে পুনরায় মাটি খুঁড়তে গিয়ে হঠাৎ সন্ধান পায় একটি পাতকুয়ার। পাতকুয়ার মুখটি কংক্রিটের স্ল্যাব দিয়ে ঢাকা। শ্রমিকরা শাবল দিয়ে ভেঙে ফেলে সে স্ল্যাব। ভাঙা স্ল্যাবটি সরাতেই বেরিয়ে আসে অনেক মাথার খুলি আর মানুষের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের কর্তিত হাড়গোড়! মসজিদ কর্তৃপক্ষ প্রথমদিকে বিষয়টি চাপা দেওয়ার চেষ্টা করলেও স্থানীয় ক'জন তরুণের প্রতিবাদের মুখে সেটা সম্ভব হয়নি। এ খবর ছড়িয়ে পড়ে সংবাদমাধ্যমে। বাংলাদেশে তখনও ইলেকট্রনিক মিডিয়া অত ডালপালা মেলেনি। বিভিন্ন সূত্র থেকে জানতে পেরে 'মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর' এগিয়ে যায় বিষয়টির কাছে। তারা সমাজবিজ্ঞানী ও জীববিজ্ঞানীদের সঙ্গে আলাপ করে সিদ্ধান্তে উপনীত হয়- এই খুলি ও হাড়গোড় একাত্তরের শহীদদের।
১৯৭১ সালে এই এলাকাটি ছিল অবাঙালি অধ্যুষিত। তারা পাকিস্তানি দখলদার বাহিনী এবং রাজাকার-আলবদরদের সহযোগিতায় মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের অনেক নিরীহ মানুষকে হত্যা করে এসব স্থানে ফেলে রাখে। কখনও বা পাতকুয়ার ভেতরে মৃতদেহ ফেলে ওপরে স্ল্যাব দিয়ে ঢেকে 'সিল' করে দেয়, যাতে পরবর্তীকালে কেউ যেন আর মৃত মানুষের সন্ধান না পান। ধর্মের কল আপনি নড়ে। এ ক্ষেত্রেও সেটিই হয়েছে।