পরিণতির কথা ভাবি না, দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলবই
লেখালেখিটাই করছি। আর তো কিছু করছি না। করোনাকালে অনেক আপনজন সতর্ক করলেন। বললেন, আপনারা কয়েকজন বেশি স্পষ্ট কথা বলছেন, লিখছেন ব্যাংক লুটেরা আর স্বাস্থ্য খাতের মাফিয়াদের বিরুদ্ধে। এভাবে বলতে নেই। এভাবে লিখতে নেই। ব্যাংকিং খাত ও স্বাস্থ্য খাতের লুটেরারা অনেক বেশি শক্তিশালী। ওরা গভীর জলে চলে। চারদিকে বিশাল নেটওয়ার্ক। হয়রানি করার চেষ্টা করবে অনেকভাবে। পরিকল্পনাও নিচ্ছে। জবাবে বললাম, সমুদ্রে রেখেছি পা, শিশিরে কি ভয়। জানি লুটেরারা ভয়ঙ্কর। তারা বিভিন্নভাবে হয়রানি করবেই। মামলা খেয়েছি ৪০টির বেশি। জামিন নিয়েছি ঢাকা ও বাইরের জেলায় গিয়ে। আরও অনেক ধরনের হুমকি আর হয়রানি মোকাবিলা করেই আজকের অবস্থানে। এখন হয়তো নতুনভাবে নতুন কায়দায় কিছু করার চেষ্টা করতে পারে। করুক। ক্ষমতাসীন দলটির জন্য দুঃসময়ে আমাদের কিছুটা হলেও ভূমিকা ছিল।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান লুটেরাদের জন্য দেশটি স্বাধীন করেননি। এই করোনাকালে আমার মৃত্যু হতে পারত। মৃত্যুর পর কী জবাব দিতাম আল্লাহর কাছে? লুটেরাদের বিরুদ্ধে কথা বলছি, বলব। করোনায় মারা গেলে আল্লাহর কাছে ওদের নামে বলতাম। করোনাকে জয় করে প্রার্থনা করছি, ব্যাংকিং খাত ও স্বাস্থ্য খাতের লুটেরাদের কাছ থেকে যেন রক্ষা করেন দেশের সাধারণ মানুষকে। হয়রানির ভয়ে লেখালেখি বন্ধ হবে না। নিজের অবস্থান বদল হবে না। মানব না লুটেরাদের কর্মকান্ড। ছোট্ট একটা জীবন। মৃত্যুর চেয়ে বড় সত্য আর কিছু নেই। এবার মৃত্যু জীবনের পাশ দিয়ে ঘুরে গেছে। কড়া নেড়ে জানিয়ে গেছে পাশেই আছি। চলে আসতে পারি আবার। তাই হয়রানির চিন্তা করে লাভ কী? এই পেশাটা চ্যালেঞ্জের। সেই চ্যালেঞ্জ নিয়েই তো কাজ করছি। কিছু অপ্রিয় সত্য উচ্চারণ না করলে তো কিছুই থাকে না। করোনা রোগী হিসেবে অনেক কিছু সামনে এসেছে। দুঃখ-কষ্ট বেদনার কঠিনতম সময় অতিক্রম করছি। চিকিৎসা নিয়ে হাহাকার দেখেছি। নিজের কাছে অসহায় মনে হয়েছে নিজেকে।
বাস্তবতায় সামনে এসেছে দুটি জোনে আমাদের বাস। একটি ভিআইপি, আরেকটি ডেথ। ভিআইপি জোনের লোকদের চিকিৎসা নিয়ে চিন্তা নেই। তারা চাইলেই চিকিৎসা তাদের কাছে চলে যায়। প্রয়োজনে বিশেষ বিমান ভাড়া করে লন্ডন যাওয়া যায়। আর জীবন-মৃত্যুর মাঝে থাকা ডেথ জোনের বাসিন্দারা বুঝতে পারছে, অসুস্থ হলে কোনো উপায় নেই। হাসপাতালে গেলে ভর্তির সুযোগ নেই। আর কোনোভাবে কুর্মিটোলা, মুগদা, কুয়েত-মৈত্রীতে পেলেও চিকিৎসা পাবেন গ্যারান্টি নেই। আইসিইউ সংকট। অক্সিজেন সিলিন্ডার স্থাপন হয়নি ঠিকভাবে। ঢাকা মেডিকেলের অবস্থা ভয়াবহ। স্বাভাবিক সময়ে ব্যাপক রোগী থাকে ঢাকা মেডিকেলে। কিন্তু এখন কতজন আছেন?