কিছু নিয়মে মেনে মায়েরা কমাতে পারে বাড়তি ওজন। ছবি: সংগৃহীত

সিজারিয়ান অপারেশনের পর পেটের মেদ কমানোর সহজ কিছু উপায়

নিগার আলম
লেখক
প্রকাশিত: ১০ জুলাই ২০১৭, ০৯:৫৭
আপডেট: ১০ জুলাই ২০১৭, ০৯:৫৭

(প্রিয়.কম) মা হওয়া প্রত্যেক নারীর জন্য কাঙ্ক্ষিত একটি বিষয়। সন্তান জন্ম দেয়ার সম্পূর্ণ সময়টিতে একজন নারীকে পার করতে হয় অনেক কঠিন একটি অধ্যায়। শরীরের নানান রকম পরিবর্তনের সাথে খাপ খাইয়ে নেয়াটা বেশ কঠিন হয়ে পড়ে। এই  সময়টি কাটিয়ে উঠলেও সন্তান জন্ম দেওয়ার পর পেটের মেদ কমিয়ে পূর্বের অবস্থায় যেতে অনেকটা সময় লেগে যায়। বিশেষ করে সিজারিয়ান অপারেশন হলে পেটের মেদ কমিয়ে পূর্বের অবস্থায় যাওয়াটা বেশ কঠিন হয়ে পড়ে। আর এই ওজন নিয়ে নতুন মায়েরা হতাশায় ভুগতে থাকেন। হুট করে চাইলে খাবার কমিয়ে দিয়ে ক্রাশ ডায়েট যেতে পারেন না, আবার খাওয়া দাওয়া করলে বেড়ে যায় ওজন। এই সময়টি কিছু নিয়ম মেনে চললে কমিয়ে ফেলা সম্ভব বাড়তি ওজন।   

১। নিয়মিত খাবার খান

আপনি হয়তো একবেলা খাবার খাওয়ার কথা ভাবছেন? মনে করছেন এটি আপনার ওজন হ্রাস করবে। কিন্তু আপনি ভুল ভাবছেন, এটি ওজন কমানোর পরিবর্তে ওজন আরো বৃদ্ধি করবে। আপনি ওজন নিয়ে স্ট্রেসে রয়েছেন, ঠিকমত খাবার শরীরে না প্রবেশ না করলে  স্ট্রেস লেভেল আরো বৃদ্ধি পাবে। তাই নিয়মিত খাবার গ্রহণ করুন। তবে স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার চেষ্টা করুন।

২। খাবারের পরিমাণ কম

তিনটি বড় বড় মিল খাওয়ার পরিবর্তে ছোট ছোট ছয়টি মিল খাওয়ার চেষ্টা করুন। অল্প পরিমাণ খাবার খান, তবে বার বার খান। দীর্ঘ সময় খালি পেটে থাকা থেকে বিরত থাকুন।

৩। বাচ্চাকে বুকের দুধ পান

সি-সেকশনের পরে ওজন কমানোর সবচেয়ে ভালো উপায় হচ্ছে বাচ্চাকে বুকের দুধ পান করানো। বাচ্চাকে ৬ মাস শুধুমাত্র বুকের দুধ খাওয়াতে হবে। এর সাহায্যে আপনার ক্যালোরি পুড়বে, আপনার পেটের অনেক অতিরিক্ত মেদ কমে যাবে।

৪। লো ক্যালরির খাবার গ্রহণ

নতুন মা হিসেবে আপনার শরীরে প্রচুর পরিমাণের পুষ্টির প্রয়োজন রয়েছে। এরজন্য পুষ্টিকর খাবার খাওয়া প্রয়োজন। আপনাকে এমন কিছু খাবার গ্রহণ করতে হবে যাতে শরীরে দুধ উৎপন্ন হয়। ওমেগা থ্রি, ফ্যাটি অ্যাসিড, ক্যালসিয়াম, প্রোটিন, ফাইবার জাতীয় খাবার যেমন স্যামন, সার্ডিন, টুনা মাছ, ডিম, মুরগি, বিনস, টকদই ইত্যাদি খাবার খাদ্য তালিকায় রাখুন। বাচ্চা বার বার দুধ খাওয়ার কারণে আগের থেকে ক্ষুধা বেশি পরিমাণ লাগবে, তাই স্ন্যাক্স খাওয়ার ক্ষেত্রে কিছুটা সচেতন থাকবেন। স্বাস্থ্যকর খাবার যেমন ফল, বাদাম, ভাজা মিষ্টি আলু, টকদই ইত্যাদি খাবার খেতে পারেন।

৫। পানি পান

প্রতিদিন আট থেকে দশ গ্লাস পানি পান করুন। এটি শরীর থেকে টক্সিক উপাদান বের করে দেবে। পানির সাথে পানি জাতীয় যে কোনো কিছু যেমন ফলের রস, স্যুপ, মিল্কশেক, স্মুদি ইত্যাদি পান করতে পারেন।

৬। ব্যায়াম

সহজ কিছু প্রেগনেন্সি ব্যায়াম রয়েছে। চিকিৎসকের সাথে  পরামর্শ করে জেনে নিন, কবে থেকে ব্যায়াম শুরু করতে পারবেন। তারপর হালকা কিছু ব্যায়াম শুরু করুন। এইক্ষেত্রে হাঁটা সবচেয়ে ভালো ব্যায়াম। চেষ্টা করুন নিয়মিত হাঁটার। প্রতিদিন ৩০ মিনিট হাঁটুন। নিয়মিত হাঁটা শুধু ক্যালরি বার্ন করে না, অপারেশনের পর শরীরের এনার্জি লেভেল বাড়াতেও সাহায্য করে। তবে প্রথম ছয় থেকে আট সপ্তাহ খুব আস্তে আস্তে হাঁটতে হবে। এরপর ধীরে ধীরে হাঁটার গতি ও সময় বাড়াতে হবে।

৭। টকদই ডেজার্ট  

মিষ্টি খাবার খেতে পছন্দ করেন? তাহলে টকদই,ফল এবং বাদাম দিয়ে সালাদ তৈরি করে খেতে পারেন।  টকদই ওজন কমানোর জন্য বেশ উপকারী।

৮। খাওয়ার আগে পানি পান

খাবার খাওয়ার আগে ধীরে ধীরে এক গ্লাস পানি পান করুন। এটি আপনার খাওয়ার রুচি কমিয়ে দেবে। আর খাবার খাওয়ার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করবে।

৯। তাড়াতাড়ি রাতের খাবার খান

চেষ্টা করুন তাড়াতাড়ি রাতের খাবার খাওয়ার। সবচেয়ে ভালো হয় রাত ৮টার মধ্যে খাবার শেষ করে ফেলা। এটি আপনার মেটাবলিজমকে উন্নত করবে এবং ওজন কমাতে সাহায্য করবে।

১০। ক্যাফিন এবং অ্যালকোহল এড়িয়ে চলুন

কফি, ক্যাফিন জাতীয় পানীয় এবং অ্যালকোহল এড়িয়ে চলুন। কফির পানের প্রয়োজনবোধ করলে এক কাপ গ্রিন টি পান করতে পারেন।

১১। বাসার খাবার খান

বাইরের খাবার খাওয়ার পরিবর্তে বাসায় তৈরি করা খাবার খাওয়ার চেষ্টা করুন। সপ্তাহে একবারে বেশি বাইরের খাবার নয়। জাঙ্ক ফুড এড়িয়ে চলুন এটি আপনার এবং আপনার শিশু উভয়ের জন্য ভালো।

১২। পর্যাপ্ত ঘুম এবং স্ট্রেস ফ্রি

নতুন মায়েদের দিনে আট ঘন্টা ঘুমানো সম্ভব নয়। কিন্তু কিছুটা ঘুমানো প্রয়োজন রয়েছে। চেষ্টা করুন শিশুর ঘুমানোর সময়ের সাথে ঘুমানো। কম ঘুম মেটাবলিজমের উপর প্রভাব ফেলে এবং ওজন হ্রাসের প্রক্রিয়াকে ধীর করে।

মায়েদের ওজন হুট করে কমানো সম্ভব নয়। এর জন্য কিছুটা ধৈর্য ধারণ করতে হবে। তাই হতাশা না হয়ে ধৈর্য ধরে এই নিয়মগুলো পালন করুন, দেখবেন কিছুদিনের মধ্যে আপনি ফিরে পেয়েছেন আপনার পূর্বের ফিগার।

সূত্র: মম জংশন

সম্পাদনা : রুমানা বৈশাখী