ছবি সংগৃহীত

রেডিওতে ক্রিয়েটিভ লোক বাড়ানো দরকার: সায়েম

সুমাইয়া মারিয়া বিনতে শহীদ
লেখক
প্রকাশিত: ০৫ মার্চ ২০১৭, ১০:১৮
আপডেট: ০৫ মার্চ ২০১৭, ১০:১৮

সায়েম আফরোজ সালেক। ছবি: নূর, প্রিয়.কম। 

(প্রিয়.কম) পুরো নাম সায়েম আফরোজ সালেক হলেও আরজে সায়েম নামেই বেশি পরিচিত। জন্ম এবং বেড়ে ওঠা পুরান ঢাকায়। তবে শেকড় জামালপুরে। রেডিও জগতে অনেক আগে থেকেই যাত্রা শুরু করেন তিনি। এরপর শুধু আরজে (রেডিও জকি) নয় টিভিতেও ভিজে (ভিজুয়াল জকি) হিসেবে দেখা গেছে। ক্যারিয়ার জীবনের শুরু এবং বর্তমান অবস্থা নিয়ে তিনি কথা বলেন প্রিয়.কম এর সাথে।

প্রিয়.কম: কেমন আছেন?

আরজে সায়েম: জ্বি। ভালো আছি।

প্রিয়.কম: রেডিও জগতে আপনার যাত্রা শুরু কীভাবে?

আরজে সায়েম: ২০০৬, ফেব্রুয়ারি মাসের ১৬-২৫ তারিখ পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুনিক ভাষা ইন্সটিটিউটে রেডিও টুডের আয়োজনে একটি ওয়ার্কশপ হয়েছিল। ওয়ার্কশপটি পরিচালনা করেছিলেন রুপা চক্রবর্তী। মূলত তার কাছে কবিতা আবৃত্তি শেখা শুরু করেছিলাম। তিনিই আমাকে একটা সিভি দিতে বলেছিলেন। হবে না জেনেও চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু ভাগ্যের জোরে হয়ে গেল। এজন্য বেশ কয়েকটি ধাপ পার করতে হয়েছিল আমাকে। ওয়ার্কশপে অংশগ্রহণকারী ছিল ৬২ জনের মতো। এর থেকে ১৮ জন নির্বাচন করা হলো। এরপরে ১৮ জন থেকে ১৩জন, সেখান থেকে ৯ জন ফাইনালে যাবার পর একটা ইন্টারভিউ নেয়া হলো। সেখান থেকেই ৫ জনকে সিলেক্ট করা হলো। সেই প্রতিযোগিতায় সব মিলিয়ে ৫টা স্টেপ ছিল। ৩৯ দিনের এই ওয়ার্কশপ থেকেই আমার রেডিও জগতে আসা। এরপর আবার রেডিও টুডেতে ২ মাসের একটা গ্রুমিং করানো হয়। আমার প্রথম পোস্ট ছিল ‘আউটডোর ব্রডকাস্ট’, ৬ মাসের জন্য।

প্রিয়.কম: প্রথম শো কী ছিল?

আরজে সায়েম: ‘তবে তাই হোক’ দিয়ে শুরু। তখন একসাথে দুটোই করতাম। দিনের বেলা আউটডোর ব্রডকাস্টিং। আবার রাত ৮টা থেকে ১১টা পর্যন্তও শো করতাম। ঐ শো-টাই ২ বছর ১৫ দিন করেছি। 

প্রিয়.কম: এরপর ভিজে (ভিজুয়াল জকি) হিসেবে কবে থেকে কাজ শুরু করেন?

আরজে সায়েম: টেলিভিশনে শো শুরু করেছিলাম ২০০৮ এর ২২ শে আগস্ট থেকে, আরটিভিতে ‘জেগে আছো কি’ এর উপস্থাপনা দিয়ে। এরপর করেছি ‘তোমার জন্য আমার এ গান’। সেটাও আরটিভিতেই।  এরপর এনটিভির ক্লোজআপ ওয়ানের উপস্থাপনায় ছিলাম।

প্রিয়.কম: এরপর কী আবার আমরা আরজে হিসেবেই পেয়েছি?

আরজে সায়েম: হ্যাঁ। টেলিভিশনের শো’টা দেখেই ২০১১ সালের ১৯শে মার্চ রেডিও ফূর্তি ডাকলো। ওখানে জয়েন করে সিলেট শো করতাম। প্রথমে ঐ শো’টার নাম ছিল ‘সিলেট কলিং’। পরে নাম হলো ‘বাংলাদেশ কলিং’। কারণ ওখানে সিলেটের পাশাপাশি রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, ময়মনসিংহ পাঁচটা জায়গা মিলিয়ে শো হতো। ঐ শো ‘টা করলাম ৪ বছর ৮ মাস ধরে।

প্রিয়.কম: এখন কী করা হচ্ছে?

আরজে সায়েম: পরে ডাক পেয়েছিলাম ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপের ক্যাপিটাল এফএম ৯৪.৮ এফএম রেডিওতে। এটার প্রস্তুতি নিতে একটু সময় লেগেছিল। ২০১৩ সালের নভেম্বরের ১১ তারিখ থেকে বর্তমান পর্যন্ত এখানেই আছি।

প্রিয়.কম: ক্যাপিটাল এফএম রেডিওতে কী হিসেবে আছেন? বর্তমানে আপনার কী কী শো চলছে?

আরজে সায়েম: আমি এখানে প্রোগ্রাম ইনচার্জ হিসেবে আছি। পাশাপাশি আরজে হিসেবেও একটা শোতে আছি। নাম ‘রোড টু লাভ’। যেটা প্রতি রবিবার থেকে বুধবার রাত ১১টা থেকে ৮ টায় অন এয়ার হচ্ছে। 

প্রিয়.কম: আরজে এবং ভিজে হিসেবে কাজ করার অভিজ্ঞতা তো আছেই। কোন মাধ্যমে কাজ করে বেশি ভালো লেগেছে?

আরজে সায়েম: আসলে রেডিওতে যা করে এসেছি টিভিতেও তাই করেছি। কারণ এই রেডিওতে যা করতাম প্রায় সব সময়ই লাইভ করতাম। খুব একটা রেকর্ডেড শো করিনি। তাই টিভিতেও তেমন কোনো সমস্যা হয়নি। দুটো মাধ্যমই এক রকম। লাইভ শো করেছি প্রায় ৬০০ এর মতো। 

প্রিয়.কম: আরজেদের অবস্থান সম্পর্কে কিছু বলুন...

আরজে সায়েম: রেডিও জগতে আমি তো শুরু থকেই আছি। সে হিসেবে আমি অবস্থান ভালোই দেখছি। হয়তো লিসেনার কমে যাচ্ছে। কারণ মাত্রা হয়তো সেভাবে ধরে রাখতে পারিনি। আমার তো মনে হয় আমরা শ্রোতাদের ভালো কিছু দিতে পারছি না। আমি নিজের জায়গা থেকে চেষ্টা করে যাচ্ছি। এখন দেখি কতটুকু দিতে পারি। আমাদের কাছে মনে হয় ভালো অনেক কিছু দিয়ে শেষ করে দিয়েছি। অন্যদিকে রেডিওতে ক্রিয়েটিভ লোক বাড়ানো দরকার। ক্রিয়েটিভ যদি একটু বুদ্ধি করতে পারি তাহলে রেডিওতে শ্রোতা ধরে রাখা খুবই সম্ভব। 

কথা বলেই জনপ্রিয় হয়েছেন তিনি। ছবি: নূর। 

প্রিয়.কম: তরুণ আরজেদের উদ্দেশ্যে কিছু বলুন।

আরজে সায়েম: পুরনো যাদের দেখবেন তারা বেশ কয়জন এখনো টিকে আছে। কেউ হয়তো বেশ প্রয়োজনে দেশের বাইরে চলে গিয়েছে। তবে আমরা বেশ কয়েকজন কিন্তু এখনো আছি। রেডিও থেকে হয়তো টিভিতে গিয়েছি। কিন্তু রেডিও জগতটা কখনও ভুলিনি। কারণ আমরা এই জায়গা থেকেই শিখে এসেছি। আমাদের নতুনদের সমস্যাটা হলো তারা অল্পতেই জনপ্রিয়তা চায়। আমি মনে করি ১০ লাখ মানুষ ফ্যান পাওয়ার চেয়ে ১০ হাজার মানুষের কাছে জনপ্রিয়তাটাই অনেক বড় একটি ব্যাপার। নতুনরা অল্প পেলেই ভেবে নেয় অনেক পেয়ে গেছি। যার জন্য টিকে থাকতে পারছে না। 

প্রিয়.কম: পারিবারিক জীবন কেমন যাচ্ছে?

আরজে সায়েম: আমার তো বাবা মা দুজনই না ফেরার দেশে চলে গেছেন। আম্মুর অসুস্থতার জন্য আমি বেশ কিছু মাস কাজে গ্যাপও রেখেছিলাম। আর আছেন বড় ভাই যিনি দেশের বাইরে থাকেন। বর্তমানে আপুর সাথেই আছি।

প্রিয়.কম: অবসরে কী করা হয়?

আরজে সায়েম: অবসর যদিও আমার কম, তারপরও নিজে থেকেই অবসর বের করে নেই। অবসরে মুভি দেখি।

প্রিয়.কম: ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?

আরজে সায়েম: এই তো একটা রেডিও সামলাচ্ছি। এটা নিয়েই ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা রয়েছে। এটা নিয়েই দেখি কী করা যায়।

সম্পাদনা: ফারজানা রিংকী