জলবায়ু পরিবর্তনের ছবিটি সংগৃহীত

সম্পাদকীয়: পাল্টে গেল প্রিয়!

জাকারিয়া স্বপন
সম্পাদক, প্রিয়
প্রকাশিত: ২৬ জানুয়ারি ২০১৯, ১৪:৫৮
আপডেট: ২৬ জানুয়ারি ২০১৯, ১৪:৫৮

ছোটবেলা থেকে জানতাম, এই পৃথিবীতে অনেক কিছু স্ট্যাটিক বা স্থিতিশীল। গণিতে স্থিতিবিদ্যা নামে একটি পুরো সাবজেক্ট রয়েছে। সেখানে পড়ানো হয়, পদার্থের স্থিতিশীলতা। সাদামাটাভাবে বললে, আমাদের চারদিকে অসংখ্য পদার্থ দেখি, যেগুলো স্থিতিশীল কিংবা যার পরিবর্তন হয় না। ইংরেজিতে এই ধরনটার আরেকটা নাম হলো কনস্ট্যান্ট, আর বাংলায় ধ্রুবক।

সময়ের সঙ্গে যার পরিবর্তন নেই, সেটাই হলো কনস্ট্যান্ট। চোখ বন্ধ করে একবার ভাবুন তো, সময়ের সঙ্গে পাল্টায় না কোন জিনিস? আমাদের চারপাশে কনস্ট্যান্ট বিষয় কোনগুলো? পেয়েছেন কিছু? যেমন—আলোর গতি। এখন পর্যন্ত যেভাবে আলোকে আবিষ্কৃত করা হয়েছে, সেখানে আলোর গতি হলো কনস্ট্যান্ট বা অপরিবর্তনশীল। আরও আছে মাধ্যাকর্ষণ শক্তি বা পৃথিবী যে আকর্ষণ দিয়ে আমাদেরকে তার দিকে টেনে রাখে। ধরণীর যেখানেই যান না কেন, তার মান সবসময়ই সমান।

পদার্থকে ভাঙলে আমরা পাই ইলেক্ট্রন। সেই ইলেক্ট্রনের ভর কনস্ট্যান্ট। জিরো-এনার্জি ইউনিভার্স নামে একটি তত্ত্ব আছে, যেখানে বলা হয়, পুরো ইউনিভার্সে যত পরিমাণ এনার্জি (শক্তি) আছে, তার সবকিছুর যোগফল হলো শূন‌্য। যদি সেটা শূন্য না-ও হয়, তবুই পুরো এনার্জির পরিমাণ কিন্তু কনস্ট্যান্ট।

খুবই কঠিন কঠিন বিষয় এগুলো। তবে আরেকটি সুন্দর কনস্ট্যান্ট আছে আমাদের জীবনে, তার নাম হলো পরিবর্তন। বদলে যাওয়া, পাল্টে যাওয়া—এটাও একটি কনস্ট্যান্ট। আপনার জীবনটা পাল্টে যাবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে—এর চেয়ে চিরসত্য আর কিছু হতে পারে না।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পরিবারের সদস্যরা এক ফ্রেমে। প্রিয়’র আয়োজন পিপলে থাকা প্রোফাইলে ক্লিক করলে এমন চিত্র পাওয়া যাবে। শুধু ব্যক্তি নয়, কে কোন প্রতিষ্ঠানে রয়েছেন, তা-ও পাওয়া যাবে

জন্মের পর যখন বেড়ে উঠছেন, আপনার জীবনে নতুন মানুষ আসছে, নতুন বন্ধু তৈরি হচ্ছে। কেউ থাকছে, কেউ চলে যাচ্ছে। আপনার প্রিয় মানুষ মা-বাবা, তারাও একসময় চলে যাচ্ছেন। আমাদের জীবন অনেকটা ট্রেনে চড়ে যাত্রা করার মতো। কোনো স্টেশনে নতুন মানুষ এসে আপনার পাশে বসছে, আবার আপনি নেমে যাচ্ছেন আপনার নির্দিষ্ট স্টেশনে। চলতি পথে বা রাস্তার মোড়ে দেখা হচ্ছে নতুন মুখের। কেউ থেকে যাচ্ছেন কিছুদিন, কেউ আবার থাকছেন না।

আমাদের চারপাশে প্রকৃতি বদলায়, ঋতু বদলায়, তাই প্রকৃতির প্রতিটি রূপ উপভোগ্য। বর্ষার ঝুম বৃষ্টি, শরতের কাশফুল, হেমন্তের ফসলের ঘ্রাণ আর বসন্তের মাতাল করা হাওয়া—এই যদি কাউকে ছুঁয়ে না যায়, সে কি বেঁচে আছে! নাকি তার দেহে রক্ত চলাচল হয় বটে, কিন্তু তা মৃত্যুর মতো শীতল কিংবা গহিন কালো অন্ধকারের মতো স্থবির!

প্রিয়তে যারা লগ ইন করেছেন, তাদের কয়েকজনের তালিকা এবং প্রিয় পিপলের একটি অংশ। পিপল হচ্ছে প্রত্যেকের প্রোফাইল। যেখানে ছবিসহ পরিচিতি থাকে এবং তাদের সব নিউজের শিরোনাম লিংকসহ পাওয়া যায়

০২.

জীবন হলো একটি বইয়ের মতো। কোনো চ্যাপ্টার (অধ্যায়) আনন্দের, কোনোও চ‌্যাপ্টার কষ্টের। কিন্তু কষ্টের চ্যাপ্টারে এলে কি আপনি বই পড়া বন্ধ করে দেন? নাহ, আমরা তা করি না। দুঃখের সময় পার করে সামনের চ্যাপ্টারের দিকে এগুতে থাকি। যদি আমরা সেখানেই থেমে যেতাম, তাহলে কখনো জানা হতো না, পরের চ্যাপ্টারে কী আছে! আর যদি আমরা পরের ভালো চ্যাপ্টারের আশাটুকু ছেড়ে দেই, তাহলে আমরা সেখানেই থেমে গেলাম, যা আত্মহত্যার শামিল। (একই কারণে যারা জীবনে আশা দেখতে পান না, তারা আত্মহত্যা করেন। বিশেষ করে, কিশোর-কিশোরীদের ভেতর আত্মহত্যার প্রবণতা এই জন্য বেশি যে, তারা জীবনে আলোকিত অংশটুকু কম দেখতে পায়।)

জীবন খুব সুন্দর। এটা খুব কম মানুষ দেখতে পায়। যারা দেখতে পায় না, তারা সবসময় ভাবে, তাদের জীবনের মতো সমস্যা আর কারো বুঝি নেই। কিন্তু তারা বুঝতে পারে না, সমস্যা জীবনে থাকবেই। একটা শেষ হলে, আরেকটা আসবে। এটাও কনস্ট্যান্ট। কিন্তু সময় ও বয়সের সঙ্গে সেই সমস্যা মোকাবেলা করার ক্ষমতা এবং দক্ষতা আমাদের তৈরি হয়ে যায়। ছোটবেলায় কোনো একটা সমস্যা সমাধানে আপনার যে ক্ষমতা ছিল, পরিণত বয়সে এসে দেখুন আপনার সেই ক্ষমতা কতগুণ বেড়ে গেছে। আর যদি সেটা না বেড়ে থাকে, তাহলে বুঝতে হবে, আপনার মানসিক বিকাশ (গ্রোথ) হয়নি। যেকোনো সেন্সেবল (সুস্থ) মানুষই শিখে ফেলেন কীভাবে সমস্যাগুলোকে সমস্যা হিসেবে দেখে নিজের মতো জীবনের সৌন্দর্যকে উপভোগ করতে হয়। সাহসিকতা দিয়েই সমস্যাগুলোকে মোকাবেলা করে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার নাম জীবন—গর্বের জীবন, মানুষের জীবন।

০৩.

সেই ধারাবাহিকতায় পাল্টে গেছে প্রিয়। বিগত সময়ে আমরা পাঠককে নিজেদের ডিজিটাল কনটেন্ট পরিবেশন করতাম। ২০১৯ সালে এসে যোগ হয়েছে এগ্রিগেশন। প্রিয় এখন বাংলা ভাষায় সবচেয়ে বড় (এবং সম্ভবত একমাত্র) নিউজ এগ্রিগেটর। বাংলাদেশ ও কলকাতার ৩৫টি সংবাদপত্রকে আমরা একটি প্ল্যাটফর্মে নিয়ে এসেছি। প্রতিদিন এখন পৌঁছে দেওয়া হয় ২৫০০-এর বেশি সংবাদ। এর বাইরে হয়তো এখনো কিছু ভালো ভালো ইন্টারনেট সাইট রয়ে গেছে। ভবিষ্যতে সেগুলোকেও আমাদের প্ল্যাটফর্মে আনা হবে। এর ফলে পাঠক একটি জায়গায় সব সংবাদ পাবেন।

প্রতিদিন ২৫০০+ সংবাদ যোগ হয় প্রিয়তে। কোন সংবাদমাধ্যম কতগুলো সংবাদ তৈরি করছে, তা-ও পাওয়া যায়। ছবি: প্রিয় অ্যানালিটিক্স

এর আগে সংবাদ পেতে পাঠককে তাদের পছন্দের ওয়েবসাইটগুলোতে যেতে হতো। একজন পাঠকের পক্ষে ৩৫টি কিংবা আরও বেশি ওয়েবসাইটে নজর রাখা সম্ভব নয়। আমাদের তৈরি করা রোবট প্রতিনিয়ত চোখ রাখছে সব ওয়েবসাইটে। এখন আপনার শুধু একটি জায়গায় চোখ রাখলেই হবে। মিস করবেন না কোনো সংবাদ।

আমরা আশা করছি, আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই প্রায় শতাধিক ওয়েবসাইটকে প্রিয়’র আওতায় আনা হবে।

প্রতিদিন কোন বিষয়ে কতগুলো সংবাদ তৈরি হয় গণমাধ্যমে। সবচেয়ে বেশি হয় ‘নিহত’ টপিকে। শেষ ২৪ ঘণ্টায় (২৬ জানুয়ারি বেলা ২টার আগের ২৪ ঘণ্টা) ১৪ হাজারেরও বেশি নিউজ হয়েছে এই বিষয়ে।

০৪.

ব্যবহারকারীদের কথা মাথায় রেখে, প্রিয়তে আরও কিছু নতুন বিষয় যোগ করা হয়েছে—

চাকরির খবর: বাংলাদেশে যেখানে যত চাকরির সুযোগ রয়েছে, সেগুলো একটি জায়গায় নিয়ে আসা হয়েছে। এখন আপনার পছন্দের চাকরি খুঁজে পাবেন প্রিয়তেই।

অফার: পাশাপাশি আমরা প্রতিদিনের হরেক রকমের অফারগুলোকে একটি জায়গা দিয়েছি, যেন পাঠকরা সহজেই সেগুলো খুঁজে পান। কোথায় কী ডিসকাউন্ট রয়েছে, কোন পণ্যে কত ছাড় রয়েছে ইত্যাদি বিষয়ের জন্য এখন আর পত্রিকার পাতা খুঁজতে হবে না। আমাদের সাইটে খুব সহজেই আপডেট পেয়ে যাবেন।

বিড করে জিতে নিতে পারেন আকর্ষণীয় পণ্য

বিডিং: আমরা আরও একটি বিষয় নিয়ে কাজ করছি, সেটা হলো বিডিং। মজার মজার পণ্য সেখানে দেওয়া হবে, যেন আপনি বিড করে খুব কম মূল্যে সেগুলো কিনে নিতে পারেন। এটা মূলত খেলার একটি অংশ বলতে পারেন। দেখতে পারেন, একই পণ্যটি হাতিয়ে নেওয়ার জন্য আপনার পরিচিত আর কে কে বিড করছে।

পয়েন্ট: প্রিয়তে বিভিন্ন কাজে অংশ নিয়ে আপনি পয়েন্ট উপার্জন করতে পারেন। পাশাপাশি আপনি পয়েন্ট কিনতে ও উইথড্র করতে পারেন। সেই পয়েন্ট দিয়ে আপনি বিডিংয়ে অংশ নিতে পারেন।

মোবাইল টপ-আপ: প্রিয়’র অ্যাপ থেকে খুব সহজেই আপনি যেকোনো মোবাইল টপ-আপ করতে পারবেন।

পাশাপাশি অ্যান্ড্রয়েড ও আইওএস-এর জন্য প্রিয়’র নতুন অ্যাপ প্রকাশ করা হয়েছে। পাঠকরা অ্যাপটি ব্যবহার করে আমাদেরকে ফিডব্যাক দিয়ে অনুপ্রেরণা দিতে পারেন।

সব চাকরির খবর পাওয়া যাবে প্রিয়তে

০৫.

আমরা যেহেতু সংবাদ নিয়ে কাজ করছি, তাই আরেকটি বিষয় পাঠককে জানানোটা খুবই প্রাসঙ্গিক হবে। সেটা হলো সংবাদ, সংবাদের বস্তুনিষ্ঠতা ও সাংবাদিকতা। বাংলাদেশে অনেক কিছু ঊর্ধ্বগামী, আবার জীবনের বইয়ের মতো অনেক কিছু নিম্নগামী। বাংলাদেশ বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চায় নিম্নগামী এবং আমার জীবন দিয়ে যেটুকু দেখেছি, বাংলাদেশ আর কখনো এর চেয়ে খারাপ ছিল কি না, আমার জানা নেই।

আমাদের দেশে দুর্নীতি আছে। আর্থিক দুর্নীতি খুব সহজেই ঠিক করা যায়। একটু টাইট দিলেই দুর্নীতি হু হু করে কমে যাবে। কিন্তু আমাদের সমাজে বুদ্ধিসম্পন্ন মাথাগুলোতে পচন ধরেছে এবং বেশির ভাগ ক্ষেত্রে পচেই গেছে। তার ছাপ গিয়ে পড়েছে সর্বত্র। সংবাদপত্র, ম্যাগাজিন, টিভি, অনলাইন ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চোখ রাখলেই তা বোঝা যায়। বাংলাদেশের এমন করুণ অবস্থা আমি আগে কখনো দেখিনি।

এখন একজন বুদ্ধিমান মানুষ সজ্ঞানে জেনে-বুঝে চোখের ওপর মিথ্যা কথা বলে দিতে পারে; কিংবা মিথ্যার বেসাতি করে। ফলে তার নিজস্ব ব্যক্তিত্ব নষ্ট হয়েছে। তার ভেতরে যে প্রতিভা ছিল, সেটা ভেতরেই আটকা পড়ে গেছে; বাইরে ছড়িয়ে পড়েছে তার দুর্গন্ধ। তাই আমাদের চারপাশে নতুন ভালো ব্যক্তিত্বসম্পন্ন সাংবাদিক নেই, বুদ্ধিজীবী নেই, নাট্যকার নেই, গল্পকার নেই, লেখক নেই, অভিনেতা নেই, অনুষ্ঠান নেই, স্ক্রিপ্ট নেই, গল্প নেই, লেখা নেই, সত্যভাষণ নেই। আর যদি কেউ থেকেও থাকেন, তারা আছেন পেছনের সিটে, চুপচাপ।

সেই যাত্রায় প্রিয় একটি খারাপ কাজই করল বটে। আগে পাঠককে অল্প কিছু বুদ্ধিহীনতা দেখতে হতো। এখন পাঠককে একজায়গায় পুরো বুদ্ধিহীনতাকে দেখতে হবে। এটা অনেকের জন্য হতাশার হতে পারে।

তবে ব্যক্তিগতভাবে আমি খুব আশাবাদী মানুষ। আমি জীবনকে একটা বইয়ের মতোই দেখতে পারি। তাই ধরে নিচ্ছি, আমরা একটা খারাপ চ্যাপ্টার পড়ছি। পরের চ্যাপ্টারটা ভালো হবে। আর যদি এখানেই হাল ছেড়ে দেই, তাহলে পরের চ্যাপ্টারে কী লেখা আছে, সেটা আর পড়া হবে না। বই পড়া তো আর ছাড়তে পারি না। বরং একজন একনিষ্ঠ পাঠকের মতো বইয়ের কষ্টের চ্যাপ্টারটা পড়ে যাচ্ছি।

পাল্টে যাওয়াই যদি সত্যি হয়,
সময়ে তো তাহলে পাল্টাবেই।
যেভাবে পাল্টে যায়—
গহিন নীল-কালো রাতের আকাশ,
উত্তপ্ত মরুর ঝড়ে আটকে পড়া ওয়েসিস,
কিংবা শত বছরের ঝরনার জলে শ্যাওলার জীবন।
যেভাবে পাল্টে যায়—
বর্ষার জল পাওয়া পাহাড়ি গুল্মরা,
বরফের ফাঁদে আটকে পড়া মাছের জীবন;
নয়তো প্রচণ্ড আদরে প্রেমিকার চোখ,
পাল্টে তো যায়।

আমিও আশায় থাকি,
পাল্টে যাব একদিন—
ক্ষয়ে যাওয়া উড়ন্ত পাখির পালকের মতো,
লাউয়ের ডগায় আটকে যাওয়া শিশিরের মতো,
কুয়াশার চাদরে পুকুরের বাষ্পের মতো,
নয়তো হারিয়ে যাওয়া আদরের ঘ্রাণের মতো
সত্যি, পাল্টে যাব একদিন।
নরম সবুজ ঘাসের উপর নগ্ন পায়ে
সমস্ত শরীর ছুঁয়ে দিয়ে যেদিন বলবে,
চলো; পুড়ে অঙ্গার হই, তাপে-উত্তাপে;
তোমার কাঁধে হাত রেখে জবাব দেবো
এসো; ছাই হয়ে মিশে যাই
পাল্টে দেই মাটিটাকেই।

২৬ জানুয়ারি, ২০১৯
ঢাকা, বাংলাদেশ