দুটো নতুন বিভাগ সৃষ্টির পেছনে উদ্দেশ্য কী রাজস্ব আয় বাড়ানো? বিদ্যমান বৈষম্যমূলক রাজস্বনীতি চালু রেখে রাজস্ব আয় বাড়ানো অসম্ভব। লার্জ ট্যাক্স পেয়ার এবং বড় বড় এনজিওকে খাতির করে লক্ষ কোটি টাকার আয়কর অব্যাহতি দিয়ে, রপ্তানি প্রণোদনা দিয়ে, ইকোনমিক জোনে নতুন শিল্পকারখানা প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে ১০ বছরের আয়কর অব্যাহতি দিয়ে, সাধারণ বিমা করপোরেশনের আয়ের ৫০ শতাংশ বেসরকারি নন-লাইফ বিমা কোম্পানিগুলোর মাঝে প্রতি তিন মাস অন্তর অকারণে বণ্টন করে দিয়ে সরকার রাজস্ব আয় বাড়াবে কী করে? কোনো সভ্য দেশে এ ধরনের আয়কর অব্যাহতির কোনো নজির নেই। পতিত সরকারের শাসনামলে ভারতকে বিনা শুল্কে চট্টগ্রাম এবং মংলা বন্দর ব্যবহারের যে সুযোগ দেওয়া হয়েছে, সেটা পুরো পৃথিবীতে নজিরবিহীন। দেশকে চিরকাল বৈদেশিক ঋণের ওপর নির্ভর করে রাখার অশুভ ষড়যন্ত্র থেকে এ জাতীয় আয়কর অব্যাহতি দিয়ে আদেশ জারি করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) যদি বাংলাদেশের হিতাকাঙ্ক্ষী কোনো প্রতিষ্ঠান হতো, তাহলে আয়কর অব্যাহতির এসব আদেশ প্রত্যাহার করার জন্য সরকারকে পরামর্শ দিতে পারত। কিন্তু সেটা না করে সে ঋণের অর্থ ছাড়ের জন্য রাজস্ব বোর্ড বিলুপ্ত করার শর্ত দিল। আইএমএফের উদ্দেশ্য কি বাংলাদেশের রাজস্বব্যবস্থাপনাকে আরও দুর্বল করে দেওয়া?
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (জারাবো) একটি ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান। স্বাধীনতার পর ৫৪ বছর ধরে এটি জারাবো নাম নিয়েই নিজস্ব স্বকীয়তা বজায় রেখেই টিকে আছে। আইএমএফে ৫৪ বছর ধরে কী করল? জারাবোর পক্ষ থেকে তো জারাবোকে বিলুপ্ত করে দ্বিখণ্ডিত করার কোনো প্রস্তাব করা হয়নি। সরকার কেন আইএমএফ থেকে সামান্য ঋণ নেওয়ার স্বার্থে আইএমএফ-এর অযৌক্তিক প্রস্তাব মেনে জারাবোকে দ্বিখণ্ডিত করার জন্য উঠেপড়ে লেগে গেল? ষড়যন্ত্রের বীজ কোথায় লুকিয়ে রয়েছে?
বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা, স্বাস্থ্যখাত, শাসনব্যবস্থা, নির্বাচনব্যবস্থাকে ক্ষতিগ্রস্ত করার পেছনে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’ এবং তার সহযোগী প্রভাবশালী প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠীর সুনিপুণ ষড়যন্ত্র কাজ করছে। রাজস্ব প্রশাসনকে দুর্বল করার গভীর ষড়যন্ত্রের পেছনে র, প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠী এবং আইএমএফ যৌথভাবে কাজ করছে বলে ধারণা করার যুক্তিসংগত কারণ রয়েছে।
জারাবোকে আরও শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান হিসাবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে কোনো কিছু করার প্রয়োজন পড়লে বাংলাদেশ সরকারকে নিজস্ব উদ্যোগেই সেটা করতে হবে, আইএমএফের পরামর্শে নয়। বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশকে ঋণভারে জর্জরিত করে নিজস্ব ফায়দা হাসিলে অবিরাম প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে; সিটি করপোরেশন/পৌরসভা, বিশ্ববিদ্যালয়, সেতু-কালভার্ট নির্মাণ, চট্টগ্রাম বন্দরসহ পুরো দেশে অপ্রয়োজনীয় প্রকল্পে ঋণ দান করে একদিকে দুর্নীতিকে উৎসাহিত করছে, অন্যদিকে দেশকে ঋণের ভারে জর্জরিত করছে। প্রশ্ন হচ্ছে, বৈদেশিক ঋণে বাস্তবায়িত প্রকল্পের প্রকল্প ব্যয় ৮-১০ গুণ বেড়ে যায়। প্রতিটি প্রকল্পে নতুন গাড়ি ক্রয়, বিদেশ প্রশিক্ষণ, পরামর্শক নিয়োগের বাধ্যবাধকতা থাকায় প্রকল্প ব্যয় বেড়ে যায়। অথচ এ তিনটি অনুষঙ্গের কোনোটির কোনো আবশ্যকতা নেই। এলজিইডির শত শত গাড়ি অব্যবহৃত থাকা সত্ত্বেও নতুন প্রকল্পের জন্য নতুন গাড়ি কিনতেই হবে-এর কোনো মানে হয়? ক্যাপাসিটি বিল্ডিং-সুশাসন ও দক্ষতা বাড়ানোর নামে দেশের সার্বভৌম গ্যারান্টির বিনিময়ে ঋণ নিয়ে সরকারের বিভিন্ন বিভাগ/মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বিদেশে প্রমোদ ভ্রমণ করে বেড়াচ্ছেন। এ ধরনের প্রকল্প ভিয়েতনামসহ কোনো উন্নয়নশীল দেশে খুঁজে পাওয়া যাবে না। ঋণের অর্থে বিদেশে প্রমোদ ভ্রমণে যাওয়ার মানে হচ্ছে সার্বভৌম গ্যারান্টির বিনিময়ে নেওয়া ঋণের অর্থ সমুদ্রের অথৈ পানিতে ঢেলে দেওয়া। হায়রে দুর্ভাগা বাংলাদেশ! পদ্মা সেতু নির্মাণে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে কোনো চিরকুটে পেন্সিলে লেখা হরফের কথা বলে বিশ্বব্যাংক যে দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছিল, তার চেয়ে প্রকল্প ব্যয় ৮-১০ গুণ বাড়িয়ে দিয়ে-অকারণে বিদেশ প্রশিক্ষণ, গাড়ি ক্রয়, পরামর্শক নিয়োগ, অপ্রয়োজনীয় প্রকল্পে ঋণ দান এবং ক্যাপাসিটি বিল্ডিং প্রজেক্টের মতো অপ্রয়োজনীয় প্রকল্পে মোটা অঙ্কের অর্থ ঋণ দিয়ে বিশ্বব্যাংক যে দুর্নীতি করছে সেটা পদ্মা সেতুর তথাকথিত দুর্নীতির চেয়ে অনেক ভয়ংকর ও বেপরোয়া।