
হাওড়ে ফুটে থাকা লাল শাপলা যেন পরিবেশকে মনোমুগ্ধকর করে তুলে। ফাইল ছবি
লাল শাপলার বিলকে পর্যটন কেন্দ্র ঘোষণার দাবি
আপডেট: ২০ নভেম্বর ২০১৮, ১৫:৩৪
(ইউএনবি) সিলেটের উত্তর-পূর্বে অবস্থিত জৈন্তাপুর উপজেলা। এই উপজেলা প্রাকৃতিক ও খনিজ সম্পদে ভরপুর। সৌন্দর্যের লীলাভূমি মেঘালয়ের পাদদেশ ঝর্ণাবেষ্টিত ডিবির হাওর ‘লাল শাপলার’ বিল নামে পরিচিতি। এখানের ডিবি বিল, ইয়াম বিল, হরফকাট ও কেন্দ্রীবিলের প্রায় ৯০০ একর ভূমিতে প্রাকৃতিকভাবে লাল শাপলার জন্ম।
শীতের আগমনের সঙ্গে সঙ্গে প্রকৃতি যেন নিজ হাতে সাজিয়ে তুলে লাল শাপলার বিলগুলোকে, যেন ফুলে ফুলে সাজানো লাল গালিচা। সূর্যোদয় থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত লাল শাপলার সৌন্দর্য দৃশ্যমান থাকে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শাপলাগুলো নিথর হয় পড়ে। লাল শাপলার ফুটন্ত ফুল ডিবির হাওড়ের আশপাশের পরিবেশকে মনোমুগ্ধকর করে তোলে।
লাল শাপলার অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করতে ঘন কুয়াশা ও শীত উপেক্ষা করে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলসহ জেলা ও উপজেলা থেকে দল বেঁধে ছুটে আসা পর্যটকের ঢল নামে লাল শাপলার বিলে। বিলের লাল শাপলার ফুটন্ত ফুল যেন ভ্রমণ পিপাসু পর্যটকদের হাতছানি দিয়ে ডাকে। এর সাথে রয়েছে নানা প্রজাতির অতিথি পাখির কিচির-মিচির সুর। মনে হয় যেন প্রকৃতি তার রূপের সঙ্গে নিজে বাধ্যযন্ত্রে সুরের ঝর্ণাধারা ছড়িয়ে দিয়েছে।

ডিবির হাওরের বিলগুলো বিগত ২০১৪ সালে স্থানীয় জাতীয় ও ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ার কল্যাণে পর্যটকদের কাছে পরিচিতি লাভ করে। সম্প্রতি কিছু অসাধু ভূমিখেকোর দৃষ্টি পড়েছে লাল শাপলার বিলগুলোতে জেগে উঠা জমির দিকে। চক্রটি বিভিন্নভাবে দখলের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। চারটি বিলের মধ্যে হরফকাটা বিলটির সৌন্দর্য্য নষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। মহিষ নামিয়ে শাপলা ফুল ধ্বংস করে দেওয়া, শাপলার মূল উত্তোলন করে দেওয়ার ফলে বিলে শাপলা গাছ থাকলেও ফুল-শূন্য হয়ে পড়েছে। ইজারানীতি অমান্য করে অসময়ে বিলের পানি শুকিয়ে শাপলার মূল ধ্বংস করার কারণে কেন্দ্রীবিলের সৌন্দর্যও নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এতে হতাশ হয়ে পড়ছে বিভিন্ন স্থান থেকে ছুটে আসা পর্যটকরা।
স্থানীয় সামাজিক সংগঠন ও প্রকৃতিপ্রেমীরা বাংলাদেশের বৃহত্তম হাওড়ের মধ্যে অন্যতম ডিবির হাওর, হরফ কাটা, ইয়াম বিল ও কেন্দ্রীবিলের ইজারা বাতিলের দাবি জানিয়েছে। বিলগুলো রক্ষার্থে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) উদ্যোগে সিলেট কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে মানববন্ধনও পালন করা হয়েছে।
এছাড়া লাল শাপলা বাঁচাও আন্দোলন কমিটি ও জৈন্তিয়া পর্যটন উন্নয়ন ও সংরক্ষণ কমিটি লাল শাপলা বিলগুলোর ইজারা বাতিল এবং পর্যটনকেন্দ্র ঘোষণার দাবি জানিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মৌরীন করিমের মাধ্যমে জেলা প্রশাসক বরাবরে পৃথক স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছে।

পর্যটকদের মতে, সিলেটের দর্শনীয় স্থান সমূহের তালিকায় জৈন্তাপুর সাইট্রাস গবেষণা কেন্দ্র, রাতারগুল, বিছনাকান্দি, মায়াবন, পান্থুমাই, মায়াবতী ঝর্ণা, বল্লঘাটের জমিদার বাড়ি, লালাখাল, শ্রীপুর চা-বাগান, জাফলং চা বাগান, ডিবির হাওড়ের লাল শাপলার চারটি বিল পর্যটকদের কাছে শীর্ষ স্থান দখল করে নিচ্ছে।
লাল শাপলার বিলে ভ্রমণে আসা পর্যটকরা জানান, লাল শাপলার বিলের পরিবেশ অত্যন্ত মনোমুগ্ধকর। স্বাধীন জৈন্তিয়া রাজ্যের রাজা বিজয় সিংহের সমাধিস্থল, বিলের চারপাশে খাসিয়া জৈন্তিয়া পাহাড়ের অপরূপ সৌন্দর্য বিলটিকে আর্কষণীয় করে তুলেছে৷
পৌরাণিক ইতিহাস থেকে জানা যায়, ব্রিটিশ শাসিত ভারত উপমহাদেশের শেষ স্বাধীন রাজ্য ছিল জৈন্তাপুর। শ্রীহট্ট তথা ভারতবর্ষের অধিকাংশ এলাকা যখন মোগল সাম্রাজ্যভুক্ত ছিল, তখনো জৈন্তিয়া তার পৃথক ঐতিহ্য রক্ষা করে আসছিল। প্রায় ৩৫ বছর স্বাধীন রাজ্য হিসাবে পরিচালিত হয়েছে। হিন্দু সম্প্রদায়ের ধর্মীয়গ্রন্থ মহাভারত এবং রামায়নে জৈন্তিয়া রাজ্যের কথা বিশেষভাবে উল্লেখ রয়েছে।
১৭৯০ খ্রিষ্টাব্দে রাজা বিজয় সিংহের শাসনকালে জৈন্তিয়ায় খনিজ সম্পদে ভরপুর ছিল, বর্তমানেও রয়েছে। রাজা বিজয় সিংহ ১৭৭৮ সালে সারিঘাট ঢুপি গ্রামে রামেশ্বর শিব মন্দির স্থাপন করেন। ১৮৩৫ সালের ১৬ মার্চ হ্যারি নামক ইংরেজ রাজেন্দ্র সিংহকে কৌশলে বন্দী করে মূল্যবান সম্পদ লুঠ করে নেয়। আর ডিবির হাওর রাজা বিজয় সিংহের স্মৃতি বিজড়িত সমাধিস্থলেই লাল শাপলার বিলগুলো অবস্থিত। বিলের পাড়ে বিজয় সিংহের সমাধি।
প্রিয় সংবাদ/শান্ত