ছবি সংগৃহীত

কম্পিউটারের বাংলা কিবোর্ড ও সরকারসৃষ্ট নতুন জটিলতা

mustafa.jabbar
লেখক
প্রকাশিত: ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১২, ০৫:৪৪
আপডেট: ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১২, ০৫:৪৪

চার এখন যখন কিবোর্ড প্রমিত করার পর অনেক বছর চলে গেছে তখন বিজয় কিবোর্ড এবং সরকারের প্রমিত করা কিবোর্ড দুটির মাঝে তুলনা ও পর্যালোচনা করা বাঞ্ছনীয়। আমাদের এটি জানার ও বোঝার প্রয়োজন, ২০০৩ সালে কেন বিজয় কিবোর্ডকে প্রমিত করা হলো না এবং ২০০৪ সালে বিজয় কিবোর্ডকে অনুসরণ ও নকল করেই কেন একটি তথাকথিত জাতীয় কিবোর্ড প্রণয়ন করা হলো। বিজয় ও প্রমিত : তুলনামূলক পর্যালোচনা : যদি কিবোর্ড প্রমিতকরণের তিনটি প্রচেষ্টাকেই পর্যালোচনা করা হয় তবে এটি পরিষ্কার হবে, প্রথম পর্যায়ে একটি প্রমিত কিবোর্ড পাওয়াটাই প্রধান প্রচেষ্টা ছিল। প্রথম কিবোর্ডটিকে ইলেকট্রনিক টাইপরাইটারের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ রাখার চেষ্টাও ছিল। কিন্তু সাম্প্রতিককালে যে দুটি প্রচেষ্টাকে সফলতা পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া হয়েছে সেটির প্রথম ভিত্তি ছিল বাজার চাহিদা এবং ব্যবহারকারীর ইচ্ছা। বিএসটিআই ২০০৩ সালে বিজয় কিবোর্ডকে সম্পূর্ণভাবে গ্রহণ করেছিল এজন্য, তারা নিশ্চিতভাবেই জানতো বাজারে বিজয়ের অবস্থান এত সুদৃঢ় যে তাকে পরিবর্তন করা সম্ভব হবে না। কিন্তু সে প্রচেষ্টা কায়েমি স্বার্থবাদের কারণে ব্যর্থ হয়। তবে ২০০৪ সালে এটি প্রমাণিত হয়েছে শুধু বাজার চাহিদা নয়, যে পদ্ধতিতে কম্পিউটারে এখন বাংলা লেখা হয় তা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার উপায় আর অবিশষ্ট নেই। বিএসটিআইয়ের ২০০৩ কিবোর্ডের (বিজয়) সঙ্গে সর্বশেষ প্রমিত কিবোর্ডটির তুলনামূলক পর্যালোচনা করলে এটি সুস্পষ্ট হবে, কোন কোন স্থানে প্রমিত কিবোর্ড বিজয় থেকে আলাদা। কার্যত প্রমিত কিবোর্ডটিতে 'বিজয়' কিবোর্ডের নিম্নোক্ত পরিবর্তন করা হয়েছে। ক) বিজয়ের ও+ৗ বোতামটিতে ো এবং ৌ বর্ণ দুটি বসানো হয়েছে। খ) র-ফল, য-ফলা বোতামটিতে ঁ এবং ঃ বসিয়ে ওই দুটি বর্ণকে অষঃ+এৎ-এ নিয়ে নেয়া হয়েছে। একইভাবে বাংলা স্বরবর্ণ তৈরি করার জন্য এ বোতামটি ব্যবহার করতে বলা হয়েছে। গ) রেফের বদলে ৗ চিহ্নটি বসানো হয়েছে। ঘ) বিজয় কিবোর্ডের ইংরেজি এইচ বোতামের বর্ণগুলোকে ইংরেজি এফ বোতামে এবং এফ বোতামের বর্ণগুলোকে এই বোতামে অদল-বদল করা হয়েছে। ঙ) দুই স্তরের বিজয় কিবোর্ডের বদলে চার স্তরের প্রমিত কিবোর্ড প্রস্তুত করা হয়েছে। এ ছাড়া ইউনিকোডের বাড়তি বোতামগুলো তৃতীয় ও চতুর্থ স্তরে স্থাপিত হয়েছে। বিজয় কিবোর্ডের দ্বিতীয় সংস্করণে ইউনিকোডভিত্তিক বাড়তি বর্ণগুলো অন্তর্ভুক্ত করার পরিপ্রেক্ষিতে বস্তুত প্রমিত কিবোর্ডের সঙ্গে বর্ণ সংকুলানের কোন পার্থক্য নেই। এ বিষয়টি অত্যন্ত স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা দরকার, ১৯৮৮ সালের ১৬ ডিসেম্বর প্রকাশিত বিজয় কিবোর্ড ২৪ বছর ধরে বাংলাদেশে (এবং ভারতেও) কম্পিউটারে বাংলা লেখার কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে বিরাজ করছে। বাংলাদেশে বস্তুত ৯৯ শতাংশ (ই-বিজ নামক মাসিক পত্রিকার জরিপে ৯৭ শতাংশ) ব্যবহারকারী বিজয়সহ অন্যান্য বাংলা সফটওয়্যারের সাহায্যে এই কিবোর্ড ব্যবহার করছে। ১৯৯৮ সালে এই কিবোর্ড লেআউট মুদ্রিত কিবোর্ড (হার্ডওয়্যার) বাজারজাত শুরু হয় এবং বর্তমানে প্রতি মাসে ৫০ হাজার এ ধরনের কিবোর্ড বিক্রি হয়। এরই মাঝে প্রায় ২৫ লাখ এ ধরনের কিবোর্ড ব্যবহারকারীর হাতে পেঁৗছেছে। খুব সংরক্ষণবাদী হিসেবেও বর্তমানে 'বিজয়' কিবোর্ড লেআউট ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রায় কোটি। এমনকি পশ্চিমবঙ্গেও ৮০ শতাংশের বেশি ব্যবহারকারী 'বিজয়' কিবোর্ড লেআউট ব্যবহার করে। ত্রিপুরা এবং আসামেও 'বিজয়' কিবোর্ড লেআউট খুবই জনপ্রিয়। অনিবাসী বাঙালিদের মাঝেও বিজয় কিবোর্ড লেআউটের জনপ্রিয়তা বাংলাদেশের মতোই। বাংলাদেশে দ্বিতীয় জনপ্রিয় কিবোর্ড লেআউটটির নাম 'মুনির'। এটির ওপর ভিত্তি করে 'মুদ্রিত কিবোর্ড' বাজারজাত শুরু হয় ১৯৯৮ সালে। যে প্রতিষ্ঠানটি বিজয় কিবোর্ড লেআউট মুদ্রিত কিবোর্ড বাজারজাত শুরু করে তারাই মুনির কিবোর্ডও বাজারজাত করে। কিন্তু ৬ বছরে তারা ৫০০ কিবোর্ডের পুরোটা বিক্রি করতে সক্ষম হননি। কম্পিউটারে বাংলা প্রচলনের সূত্র ধরে যেসব কিবোর্ড বিজয়ের ধারণার বাইরে বাজারে এসেছে তার মধ্যে মুনিরই কিছুটা ইউজার বেজ এখনো ধরে রাখতে পেরেছে। এর প্রধানত কারণ হলো_ বাংলা টাইপিস্টরা মুনির কিবোর্ডে অভ্যস্ত। এমএস ডসে আবির্ভূত আবহ মুনিরকে ভিত্তি করে তৈরি করা ছিল। মেকিন্টোশে শহীদ লিপি সম্পূর্ণ ভিন্ন কিবোর্ড ছিল। একই প্লাটফরমে ড. জাফর ইকবাল বিজয়ের ধারণার বাইরে কিবোর্ড তৈরি করেন, যার সঙ্গে মাহমুদ হোসেন রতনের উদয়নের মিল ছিল। ডস-উইন্ডোজের অনির্বাণ বিজয়ের ধারণায় প্রস্তুত হলেও লেআউট ভিন্ন ছিল। বিজয়ের প্রথম নকল সরকারি অনুমোদন পায় একাডেমি কিবোর্ড নামে। ১৯৯২ সালে সাইটেক নামক অধুনালুপ্ত একটি কোম্পানি বাংলা একাডেমীর তৎকালীন মহাপরিচালক হারুনুর রশীদের সহায়তায় তাদের 'বসুন্ধরা' কিবোর্ডটিকে 'একাডেমি কিবোর্ড' নামে প্রমিত করে। তবে পরে তারা কপিরাইটের ভয়ে তার প্রচলন বন্ধ করে দেয়। সেই থেকে শুরু করে ২৪ বছরে নবীন-প্রবীণ অনেকেই 'বিজয়' কিবোর্ড লেআউটকে নকল করে চলেছেন। আল্পনা, অভ্র, ইউনিবিজয়, নীলা, সৃষ্টি এমন অনেক নামেই এসব কিবোর্ড তৈরি হয়েছে। ৪০ থেকে ৯৯ শতাংশ পর্যন্ত 'কপি' করার মাঝে সরকারের প্রমিত কিবোর্ডও রয়েছে। স্মরণ করা যেতে পারে, সরকারের কিবোর্ড প্রমিতকরণ কমিটির আহ্বায়ক এএম চৌধুরী যিনি ২০০৩ সালের ৩০ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত ইটি-১৫ কমিটির সভারও সভাপতি ছিলেন। তখন তিনি মন্তব্য করেছিলেন, 'বিজয়' কিবোর্ড হচ্ছে একটি ব্যক্তির এবং একটি জাতীয় কিবোর্ডকে সেই ব্যক্তির কিবোর্ডের ওপর নির্ভর করানো যায় না। কাকতালীয়ভাবে তিনি ও তার কমিটির সদস্যরা পুরো এক বছর কঠোর তপস্যা ও গবেষণা করে যা পেয়েছেন (ইতিপূর্বে তা উল্লেখ করা হয়েছে) তার নির্মম সত্য হচ্ছে, তাদের ভাষাতেই বিজয় কিবোর্ড প্রায় সম্পূর্ণ ত্রুটিমুক্ত একটি কিবোর্ড। সে দিন এএম চৌধুরী অত্যন্ত তীব্রভাবে বলেছিলেন, ফ্রিকুয়েন্সি এনালাইসিস ছাড়া অবৈজ্ঞানিক বিজয় কিবোর্ডকে সরকারি অনুমোদন দেয়া যায় না। সেদিন যারা বিজয় কিবোর্ডকে প্রমিত করার জন্য সুপারিশ করেছিলেন তাদের মধ্যে দুর্ভাগ্যক্রমে আমিও ছিলাম। এএম চৌধুরীর বক্তব্য আমাকে দারুণভাবে আহত করেছিল। আমি বিশেষত কম্পিউটার কাউন্সিলের কর্মকর্তা মোশাররফ সাহেব এবং বিএসটিআইয়ের কর্মকর্তা রেজাউল করিমের জন্য দুঃখিত ছিলাম। কারণ বিজয় কিবোর্ডকে প্রমিত করার সুপারিশকারীদের মাঝে তারাও ছিলেন। জনাব চৌধুরীর বক্তব্য থেকে এমন ধারণাও হয়েছিল, আমার প্রভাবেই সেদিন 'বিজয়' কিবোর্ডকে প্রমিত করার জন্য সুপারিশ করা হয়েছে। একইভাবে ওইদিন বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতির সদস্যও প্রচ-ভাবে 'বিজয় কিবোর্ড' তার প্রণেতা (আমি) এবং কমিটির সদস্যরাকে আক্রমণ করেছিলেন। যদিও এর সঙ্গে কম্পিউটার সমিতির কোন সম্পর্ক ছিল না, তবুও তারই প্রতিক্রিয়া হিসেবে এএম চৌধুরী ইটি-১৫-এর সভা মুলতবি করেন এবং কোন কোন মহলের সক্রিয় প্রচেষ্টায় ইটি-১৫-এর কার্যক্রম স্থগিত করা হয়। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ও আইসিটি টাস্কফোর্স অত্যন্ত সক্রিয় ভূমিকা পালন করে এবং 'বিজয়' কিবোর্ডের প্রমিতকরণ ঠেকিয়ে আমরা যারা প্রস্তাবকারী তাদের আসামির কাঠগড়ায় দাঁড় করান হয়। আমি ব্যক্তিগতভাবে ২০০৪ সালের ২১ জুলাই পর্যন্ত নিজেকে অপরাধী বিবেচনা করতে থাকি। তবে এ মুহূর্তে ২০০৩ সালের ৩০ জানুয়ারির নাটক ও তার পরের মুহূর্তগুলোর কথা স্মরণ করলে মনে হয়, এদেশে সত্য প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম সত্যিই কঠোর। যাহোক সর্বশেষ কমিটি কার্যত বিজয় কিবোর্ডের ৯৫ শতাংশ স্বীকৃতি দিয়েছে। অবশিষ্ট ৫ শতাংশ একদিন সরকারের স্বীকৃতি পাবে, আমি নিজে এ কথা বিশ্বাস করি। প্রমিতকরণের জন্য 'বিজয়'-এর পরিবর্তন কি জরুরি ছিল? কিবোর্ড প্রমিতকরণ কমিটির রিপোর্ট থেকে এটি অত্যন্ত পরিষ্কার হয়েছে, কমিটি তাদের অনুসন্ধান ও গবেষণায় প্রথমেই নিশ্চিত হয়েছে, 'বিজয়' কিবোর্ড সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং সবচেয়ে বিজ্ঞানসম্মত। তবে তাতে দুটি ত্রুটি রয়েছে। এ দুটি ত্রুটির প্রথমটি হলো বিজয়ের ঋ এবং ঐ বোতামের বর্ণ স্থানান্তর। এর কারণ হিসেবে তারা কিবোর্ডে টাইপ করার সময় কিস্ট্রোক হিট করার বিষয়ে দুই হাতের মাঝে ভারসাম্য বজায় রাখার ব্যাপার বলে মনে করছেন। কমিটির এ পরিবর্তনটি কার্যত দুই হাতের ভারসাম্যকে সমান করে না। বরং এর ফলে ভারসাম্য আরও নষ্ট হয়। কমিটি তাদের হিসাবে বাম হাতের ওপর বেশি চাপ ও ডান হাতের ওপর কম চাপ বলে বিবেচনা করেছে। কমিটির ফ্রিকুয়েন্সি রিপোর্টটিকে যদি বিবেচনায় নেয়া হয় তবে বিজয়ে বিদ্যমান ১৫.৫ শতাংশ কি স্ট্রোক ডান হাতে সরিয়ে (া এবং অ) তার বদলে ৪.৮ শতাংশ (ব ও ভ) বাম হাতে নেয়া হয়েছে। অর্থাৎ বাম হাতের কি স্ট্রোক কমানো হয়েছে। আমার ধারণা কমিটি কেবল 'হোম রো'-এর বিষয়টি বিবেচনা করেছেন। তারা যদি হোম রো_ লোয়ার রো এবং আপার রো বিবেচনায় আনেন তবে সম্ভবত এ পরিবর্তন প্রয়োজন হবে না। তারা যদি লিংক কিয়ের সঙ্গে যুক্তবর্ণ তৈরি করতে ব্যঞ্জনবর্ণে যে স্ট্রোকগুলো দিতে হয় তাও বিবেচনায় রাখেন তবে ভারসাম্যের ব্যাপারটা বুঝতে সুবিধা হবে। দ্বিতীয়ত, রেফ, র-ফলা ও য-ফলাকে প্রথম ও দ্বিতীয় স্তর থেকে বিদায় করে দিয়ে ব্যবহারকারীকে সম্ভবত বিরাট একটি সংকটে ফেলে দিয়েছেন তারা। একইভাবে স্বরবর্ণ তৈরি করার জন্য এ কমিটি অলট জি আর ব্যবহার করার কথা বলেছে। বস্তুত লিংক দিয়ে যুক্তাক্ষর তৈরির যে ধারণার সঙ্গে বাংলা লেখকরা অভ্যস্ত হয়ে গেছেন তাদের কাছে এ অলট জি আর বোতামটি পরিচিত করানো কি সহজ হবে? আমার জানামতে, কোন ভাষার কোন কিবোর্ডেই অলট জি আর বোতামটি ব্যবহার করা হয় না। আমরা পরীক্ষা করে দেখেছি, কোন কোন অ্যাপ্লিকেশনে জিআর রীতিমতো সমস্যা করে। এ ছাড়া 'জি' লিংক দিয়ে যেখানে স্বরবর্ণ তৈরি করা সম্ভব সেখানে আঙ্গুলকে কমান্ড সারির অলট জি আর বোতামে চালনা করা কি সমীচীন? এতে কি টাইপিং স্পিড কমবে না? এছাড়া র-ফলা, য-ফলা ও রেফ হোম কি থেকে জিআরের স্থানান্তরেও কি টাইপিং স্পিড কমবে না? যেহেতু কিবোর্ড প্রমিতকরণ কমিটি বাজার চাহিদা ও জনপ্রিয়তার বিষয়টি বিবেচনা করেছেন সেহেতু তারা নিশ্চয়ই এটি ভেবেছেন, বিজয় কিবোর্ড ব্যবহারকারীরা এ প্রমিত কিবোর্ডটি গ্রহণ করবেন। আমার বিবেচনায় এ তিনটি অক্ষরের পরিবর্তনও বিজয় ব্যবহারকারীদের জন্য খটকা তুলবে। বিশেষত র-ফলা, য-ফলা ও রেফের ব্যবহার বিবেচনা করে এ কথা নিশ্চিতভাবেই বলা যায়। এ প্রসঙ্গে একটি কথা অত্যন্ত পরিষ্কারভাবে বলা দরকার, র-ফলা, য-ফলা বদল করে অপেক্ষাকৃত কম ব্যবহৃত 'ঃ' ও ' ঁ ' বসানো ঠিক হয়েছে কি? র-ফলা ১.০, য-ফলা ১.১ হার ব্যবহৃত হয়। অন্যদিকে ঁ ও ঃ এর ব্যবহার ১ শতাংশের নিচের। (সূত্র : কমিটির রিপোর্ট পৃষ্ঠা ৩৭) রেফের স্থানে একটি খ-িত বর্ণ ৗ বসানোর যৌক্তিকতা আমার জানা নেই। কিবোর্ডে ৌ কার বসানোর পর আবার ৗ কেন থাকবে তা আমি অন্তত বুঝি না। কমিটি এ বিষয়ে কোন বক্তব্যও দেয়নি। অষঃ+এৎ ব্যবহার করে স্বরবর্ণ, প্রাচীন বঙ্গলিপির অতিরিক্ত বর্ণ ইত্যাদি লেখার ব্যবস্থা করায় বিজয় ব্যবহাকারীদের তেমন অসুবিধা হবে বলে মনে হয় না। তবে যেহেতু লিংক বোতামটি হোম কিতে অবস্থিত সেহেতু টাইপ করার সময় হোম কিতে থেকেই ওই বর্ণগুলো তৈরি করার যে ব্যবস্থা 'বিজয়'-এ বিদ্যমান রয়েছে তা অনেকেই ত্যাগ করবেন বলেও মনে হয় না। কমিটি কিবোর্ড থেকে ৎ বোতামটি বাদ দিয়েছে এজন্য, এটি নাকি ইউনিকোডে নেই। কিন্তু তাদের জন্য দুঃসংবাদ, ইউনিকোড মান ৪.১.০-তে ৎ-কে কোডভুক্ত করা হয়েছে। ৎ সম্পর্কে কিবোর্ড প্রমিতকরণ কমিটির রিপোর্ট চরমভাবে স্ববিরোধীও বটে। তারা একদিকে ৎ-এর জন্য কোড দাবি করেছে, অন্যদিকে ৎ-কে মূল বর্ণ হিসেবে জাতীয় মানে (বিডিএস ১৫২০:২০০০) পাওয়ার পরও তাকে কিবোর্ডে অন্তর্ভুক্ত করেনি। এর ফলে তারা এমনকি আমাদের জাতীয় মানেরও বিরোধিতা করেছে। এরই মাঝে বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল প্রমিত কিবোর্ডের ধারণা থেকে বেরিয়ে এসেছে। এমনকি বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল বিজয় কিবোর্ডের নকল হিসেবে তাদের কপিরাইটকৃত জাতীয় কিবোর্ডকে কপিরাইট অফিসে পরীক্ষা করার জন্যও পাঠিয়েছে। তবে সেটিও তো সরকারেরই আরেকটি প্রতিষ্ঠান। তাই সেই পরীক্ষাও এখন পর্যন্ত হিমাগারেই রয়েছে। (সমাপ্ত) ঢাকা, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১২